৫ বছর ধরে গাছে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কাতর আবেদন পরিবারের

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG_20210803_164102

শেখ সাদ্দাম, মালদা: প্রায় ৫ বছর ধরে বাড়ির সামনে গাছের সাথে শেকল বাঁধা যুবক। শেকলের ঘর্ষণে দগদগে ঘা হয়ে গেছে পায়ে। কোনও চতুস্পদ পোষ্যর থেকেও দূর্বিষহ জীবন। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের একবালপুর গ্রামের ঘটনা।

 

পরিবারের দাবি, যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন।ওঝা গুনি থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলের কাছেই ছুটতে ছুটতে আজ দিশেহারা পরিবার। নিয়মিত রোজকার অন্ন জোগাড় করাই এখন দায় হয়েছে। ঘরের বাইরে ওই যুবককে শেকলে বেঁধে রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। এলাকার নেতাদের বলেও মিলেনি কোনো সাহায্য। হয়নি প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও।

 

যুবকের নাম সেলিম আকতার। বয়স ১৯। জরাজীর্ণ মাটির বাড়ির সামনে একটা গাছে শেকল বাঁধা। দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। বৃষ্টি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে ঘরের দাওয়ায়, নচেৎ গাছের নীচেই ঠিকানা। শেকল ক্রমশ শরীরে চেপে বসে তৈরি করেছে দগদগে ঘা। ধুলো ময়লা,আবর্জনা, মাছি বিষাক্ত করে তুলেছে সেই ঘা।বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীর জুড়ে। সেলিমের দাদা হারুন রশীদ এবং মা লাইলি বিবিও মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘর ছাড়া তাঁরা। গ্রামের লোকজন কখনো তাঁদের দেখতে পান কখনো পান না। ছোটো ভাই আসিফ সুস্থ। বাবা জাকির হোসেন আর ঠাকুর্দা আব্দুল হক দিনমজুর। আর তা দিয়েই চলে সংসার।

 

এখন করোনা লকডাউনে সেই রোজগারও প্রায় নেই বললেই চলে। রেশন কার্ড মাত্র একজনের নামেই রয়েছে। তাও জাকিরের দাদার নামে। সেই রেশন তুলে এনে ভাগাভাগি করেই চলে সংসার। রেশন কার্ড করার জন্যে বহুবার দরবার করেও ফল হয়নি। কষ্ট করে যে ঘর তৈরি করেছিল জাকির তাও গত ২০১৭ সালের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোনক্রমে ধার দেনা করে মাটির চালাঘর করেই দিন গুজরান।এই অবস্থায় সেলিমকে চিকিৎসা করার সামর্থ্য কোথায়? জাকির ও তাঁর বাবার অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান,বিধায়ক,জেলা পরিষদ সদস্য, এলাকার শাসক দলের নেতাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও কোনও ফল হয়নি।কেউ মুখ তুলে তাকায় নি। বন্যার সময়েও মেলে নি সরকারি সাহায্য। জোটে নি সামান্য ত্রিপলটাও। পরবর্তীতে আবাস যোজনার জন্যে নাম তোলাতে গেলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সেলিমের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট তৈরির জন্যে বহুবার দরবার করেও লাভ হয়নি। কোনও সরকারি মানসিক চিকিৎসালয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্যে বলতে গিয়ে একরকম ঘাড় ধাক্কাই খেতে হয়েছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর