~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি
কলকাতায় নির্বাচনী প্রচারে এসেছে বেচারাম প্রধান। সবে পোস্তা ব্রিজ ভেঙেছে, মারা গেছে ২৬ জন নিরীহ মানুষ, আহত অনেক। পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে দেরি হয়নি, মতলবির সঙ্গে পরামর্শ করে বেচার নিদান, “এটা অ্যাক্ট ওফ গড নয় এটা অ্যাক্ট ওফ ফ্রড”। রাজ্যে তখন দুটি নতুন শব্দ খুব চলছে, কাট মানি আর তোলাবাজি। মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা প্রধান বেচার পুরনো অভ্যাস। লাশের রাজনীতি করে, সাপলুডো খেলে রাজ্যের থেকে রাজধানীর মসনদে পেছনে ফেভিকল লাগিয়ে বসেছে। বেচার ডেপুটি মতলবি ঘোষণা করে দিয়েছে আগামী পঞ্চাশ বছর তারা ক্ষমতায় থাকবে। লাশের রাজনীতির হোতা বেচা পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিদান হাকল এই তোলাবাজ সরকার থাকলে রাজ্যের উন্নতি হবেনা, উন্নতি হবে দিল্লির লাড্ডু খেলে। রাজ্যে বেচার দলের সিকি আধুলি নেতা আর রাজধানীতে খোদ বেচা বসে থাকলে ডবল ইঞ্জিনে সরকার চলবে গড় গড় করে। দু হাতে দিল্লির লাড্ডু নিয়ে খেতে খেতে অবোধ বাঙাল কি জনতা ওর নামে জয়ধ্বনি দেবে, ভাবতেই আনন্দে ডিগবাজি খেতে ইচ্ছে করছিল বেচার। কিন্তু বাংগাল কি জনতা মহা সিয়ানা। বেচা চলে ডালে ডালে দিদি চলে পাতায় পাতায়।
সেবার লাশের রাজনীতি কাজ করেনি এবার বুমেরাং হয়ে ফিরে এলো দেশের ছাতা মাথা বেচারাম প্রধানের কাছে। সামনের ডিসেম্বর মাসে গুজিয়াতে ভোট। গুজিয়ার ভূমিপুত্র বেচা গুজিয়া খেতে বড় ভালোবাসে। গত ২৭ বছর গুজিয়া খেয়েছে, একলা খেলে বদহজম হবে বলে বিদেশী বন্ধু হাউডি হামপকেও ঠুসে খাইয়ে দিয়েছে আর তার জেরে হাউডির রাস্তায় বসে পড়েছে। দিদিও চটি পায়ে ৫৬ ইঞ্চির পেছনে গদাম করে লাথি লাগিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
সেসব এখন অতীত , সে সব ভুলে সামনে তাকাতে হবে। দেশ কে বিশ্ব গরু করতে হবে। গুজিয়ার রকম সকম ভালো ঠেকছেনা। লোকে নেতাদের প্রচারে কান দিচ্ছেনা, গুজিয়া ছেড়ে ধোকলা খাবে ঠিক করেছে। ২৭ বছর এক টানা একঘেয়ে খাবার খেয়ে তিতি বিরক্ত লোকে মন কি বাতেলা শুনতে চাইছে না। কাউবয় টুপি পরে গায়ে নেহরু জ্যাকেট লাগিয়ে নিজেকে ক্লিন্ট ইস্টউড ভেবে মন কি ভাট শুরু করতে না করতেই খবর এলো নতুন তালি মারা সেতু ভেঙে পড়েছে। সবে মুড এসেছিল ভেবেছিলো টুপি পরে কথার টুপি দিয়ে ধোকা খাওয়া খারাপ বলে আবার গুজিয়া খাওয়াবে সবাইকে, এমন সময় খারাপ খবর এলো। মন কি ভাট বন্ধ করে সাধের টুপি খুলে গলাকে খাদে নামিয়ে চোখের জল ফেলতে হলো। এই চটজলদি চোখের জল আনার প্রতিভায় মুগ্ধ অভিনেতা টাকলা খের, চামচা খিলাড়ি আর ঝগড়ুটি রঙ্গনার মত অ্যাক্টররা বায়না ধরেছে চোখের জল ফেলার আর্ট শেখানোর জন্য। ভাইজান কথা দিয়েছে এই চোখের জল ফেলা শেখালে মকরে ফেকুর সংগে ঘুড়ি ওড়াবে।
মনের দুঃখ চেপে বেচারাম চটপট মাথা থেকে হাউডি ক্যাপ খুলে দুঃখী দুঃখী মুখের ভাব এনে চলেছে লাশ গুনতে। সরকারি হিসেব ১৪১, বেসরকারি হিসেব ২০০ পার। পার্টির রামভক্ত হনু ঘড়ি কোম্পানি মোরবি নদীর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে গিয়ে এরকম ১২টা বাজাবে কে জানে। পাপ্পু ভদ্র বলেছে লাশের রাজনীতি করবে না। কিন্তু দিদি এ সুযোগ ছাড়বেনা। অ্যাক্ট অফ ফ্রড নয় অ্যাক্ট অফ গড বললেই মুস্কিল। কেন যে অ্যাক্ট অফ ফ্রড বলতে গেছিলো! এখন নিজের কথা নিজেই গিলতে হবে।
এ হল শাখের করাত, দু দিকে কাটে। একেই বলে দেখ কেমন লাগে।