দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে উচ্চ-মাধ‍্যমিক সাফল‍্যে বিজয় মিশরের

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200727-WA0023

এনবিটিভি, সফিকুল আলম,হরিশ্চন্দ্রপুর,২৭ জুলাই: জন্ম থেকেই ঘরে বিদ‍্যুতের আলো দেখেন নি। লোডশেডিং কি জিনিস তাদের জানা নেই। বিদ‍্যুৎহীন মাটির ভাঙা কুটিরে লেখাপড়া করে আজ গোটা গ্রামের সেরা মুসহর সম্প্রদায়ের সেই ছেলেটি। বিদ‍্যালয়ের মেধা তালিকায় তার নাম রয়েছে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে তার সাফল‍্যে দম্ভপূর্ণ গোটা মুশহর গ্রাম।

মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের ধুমসাডাঙী গ্রামের নব্বই শতাংশ পরিবার মুশহর বলে জানা গেছে। শতাধিক পরিবারের ওই গ্রামে কেউ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন নি বলে বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছে। গ্রামে এবার প্রথম উচ্চ মাধ‍্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কলা বিভাগে ৮৪ শতাংশ পেয়ে তাক লাগিয়েছে বিজয় মিশর।

তবে তার সাফল‍্যের পিছনে রয়েছে এক কঠিন সংগ্রাম। ঘরে নেই বিদ‍্যুৎ, প্রথম শ্রেনীতে সহজ পাঠ থেকে সে কুপির আলোতেই পড়াশুনা করে চলেছেন। দারিদ্রতার থাবা এতটাই বসিয়েছে পরিবারে যে শৌচালয়ও নির্মান করা সম্ভব হয়নি। মাঠেঘাটে শৌচকর্ম সারতে হয় তাদের। কাচা মাটির বাড়িটিও জরাজীর্ন, বর্ষাকালে জোর বর্ষনে দেওয়াল ভেঙে পরার আশঙ্কা করছেন বিজয়ের বাবা পাথারু মিশর। উজ্জলা যোজনার রান্নার গ‍্যাস পৌছায়নি তাদের বাড়ীতে।

বাবা পাথারু জানান, পূর্বে গ্রামের খাল বিলে মাছ শিকার করেই চলত সংসার। কখনও ইদুর শিকার, আবার কখনও বন গুচী শিকার করে বাড়িতে চলত আমিষ মিরামিষের ভোজন। মাছ বিক্রি করে সংসারের হাল সামলাতে হিমশিম হতে হত।
পরে টিবি রোগে আক্রান্ত হলে আট বছর ধরে অক্ষম অবস্থায় আজ পর্যন্ত কর্মহীন। স্থানীয় স্বাস্থ‍্য কেন্দ্রে টিবি রোগ সেরে গেলেও শ্রবন শক্তি হারিয়েছে পাথারু।

মা শুকরি মিশর বিলাপ করে বলেন, স্বামী আট বছর ধরে কর্মহীন। বয়স ষাট্ হয়েছে পার। ঘরে রয়েছে একমাত্র ছেলে বিজয়। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মুরসুম অনুযায়ী এলাকার কৃষকদের ধানরোপন, জমির জঙ্গল পরিস্কার করে দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরী মেলে। তবে তা আর কদিন চলবে কাজ। জব কার্ড রয়েছে তবে সংসদে ১০০ দিনের কাজও স্বাভাবিক নেই।

আর একদিকে ছেলের সাফল‍্যে ঘুম কেড়েছে অসহায় দম্পতির। ছেলের ভবিষ্যৎ নির্ধারনে আজ তারা দিশেহারা।

সাফল‍্যকারী বিজয় মিশর জানান, মায়ের সাথে আমিও জমিতে কাজ করতাম। স্কুলে উপস্থিত হয়নি বেশী। ঘরে নেই বিদ‍্যুৎ, গ্রীষ্ম কালে তাপ পেলে ৩’/৬’ দৈর্ঘ‍্যের ঘরে রাতের বেলা কুপি প্রজ্জলনে চলত পড়াশুনা। উচ্চ মাধ‍্যমিক পরীক্ষাকালীন গভীর রাত পর্যন্ত তার পড়ার গুনগুন আওয়াজ শোনা যেত বলে জানিয়েছেন বিজয়ের মা।

গ্রামে শিক্ষিত-এর হার শূন‍্য বললেই চলবে। তাই বিজয় উচ্চ মাধ‍্যমিকের পর এক আদর্শবান শিক্ষক হতে চাই। শিক্ষক হয়ে গ্রামের পিছিয়ে পড়া সন্তানদের শিক্ষাদান করবেন ফলে জানিয়েছেন বিজয়। তবে উচ্চ শিক্ষা হাসিল করতে পারবে কি? প্রশ্নের উত্তর নেই তাদের কাছে। বিখ‍্যাত শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষালাভ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ওই মেধা ছাত্র। তবে আর্থিক সঙ্কটের বাধায় পূর্ণ হবে কি তার স্বপ্ন? অভাবের তাড়নায় কোনো মতে উচ্চমাধ‍্যমিক পাশ করেছে। তবুও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চান বিজয়।

দৌলতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শীষ মহম্মদ জানান, এবছর বিদ‍্যালয় থেকে ১১০ জন উচ্চ মাধ‍্যমিক পরীক্ষার্থী আসন নিয়েছিল। তার মধ‍্যে বিজয় মেধা তালিকায় রয়েছে। সে তার গ্রাম থেকে এবার প্রথম উচ্চমাধ‍্যমিকে উত্তীর্ন হয়েছে। বিজয় বরাবরই দুস্থ মেধা ছাত্র। বিদ‍্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে নিয়ে খুব গর্ব করত আগে থেকেই। আর এই দারিদ্রতার মধ‍্য দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া সমাজের পাশাপাশি বিদ‍্যালয়ের তরফেও তাকে কুর্নিশ জানায়। আর্থিক সঙ্কটের দরুন হয়তো ছেলেটির উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবে না। তবে বিদ‍্যালয় তার পাশে রয়েছে। এবং সরকারি তরফে কোনো সাহায্য মিললেও স্বস্তিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে বিজয়। এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর