
কলকাতায় দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে ভারতীয় সেনাবাহিনী রেড রোডে ঈদ-উল-আযহার নামাজের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে। ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে এই সমাবেশের জন্য কলকাতা খিলাফত কমিটির আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে, যার কারণ হিসেবে সামরিক প্রয়োজন উল্লেখ করা হয়েছে। গত এক দশক ধরে প্রতিবছর হাজার হাজার মুসল্লি এই স্থানেই ঈদের জামাত আদায় করে আসছিলেন।
কলকাতা খিলাফত কমিটি গত ১০ মে সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন জানিয়েছিল, যাতে ৭ বা ৮ জুন রেড রোডের নেতাজি মূর্তি থেকে ফোর্ট উইলিয়াম পূর্ব গেটের বাইরের অংশে নামাজের আয়োজন করা যায়। শনিবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বেঙ্গল সাব এরিয়ার এক কর্নেল-পদস্থ অফিসার স্পষ্ট জানিয়ে দেন: সামরিক এলাকা রেড রোডে ৭ অথবা ৮ জুন ঈদ-উজ-জোহা’র সম্মিলিত প্রার্থনার অনুমতি প্রদান করা হচ্ছে না, কারণ এই এলাকাটি সামরিক প্রয়োজনের জন্য আবশ্যক। এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কলকাতা পুলিশকেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ও খিলাফত কমিটির সদস্য জাভেদ আহমেদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “আমরা চিঠিটি পেয়েছি। আজ বিকেলে জাকারিয়া স্ট্রিটে আমাদের অফিসে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সদস্যরা এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন। এখন বিকল্প স্থান খোঁজা বা অন্য কোনো সমাধানের পথ খুঁজবে কমিটি।
এই সিদ্ধান্তের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাপক। রেড রোডে ঈদের জামাত কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানই ছিল না, এখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। সেনাবাহিনীর এই মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্তে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত সংবেদনশীলতাই এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সামরিক প্রয়োজন বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খিলাফত কমিটির পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর এখন সকলের নজর। শহরের অন্য কোনো বড় ময়দানে ঈদের নামাজ স্থানান্তরিত হবে কি না, তা নির্ভর করছে আজকের বৈঠকের ফলাফলের ওপর। গত কয়েক বছরে রেড রোডে অনুষ্ঠিত এই জামাতে লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিতেন, যা এটিকে কলকাতার অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশে পরিণত করেছিল।