আরএসএস একটি ‘ক্যান্সার’, মুর্শিদাবাদে ঐতিহাসিক পিএফআই-এর জনসভায় টিএমসি বিধায়ক

 এনবিটিভি ডেস্কঃ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) একটি “ক্যান্সার” এবং হিজাব বিতর্কটি “নাটক”, যেটি আরএসএস তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই) এর জাতীয় সম্পাদক মোহাম্মদ সাকিফের। মুর্শিদাবাদে “প্রজাতন্ত্রকে বাঁচাও” শিরোনামে বাংলায় প্রথমবার রুট মার্চ হয়। আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াই বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে টিএমসি বিধায়ক মনিরুল ইসলাম পিএফআই-এর সমর্থনে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, প্রতিনিয়ত দেশে আরএসএসের চক্রান্তে দেশ ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে চলেছে। আরএসএসের ষড়যন্ত্রকে ফাঁস করার জন্য দক্ষিণ ভারতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া নামক এক সংগঠন। ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে পালিত হয় পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠা সিবস। ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বাংলায় প্রথমবার রুট মার্চ ও সমাবেশের আয়েজন করা হয়।    

হাজারও পুরুষ, মহিলা, এমনকি শিশুরাও উপস্থিত ছিলেন এই সভায়। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) একজন নেতাকে প্রথমবারের মতো পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’র সাথে প্রকাশ্যে একটি মঞ্চে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়৷ ফারাক্কার টিএমসি বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন যে, “তিনি আগে কখনও মানুষের কাছ থেকে এমন অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়া দেখেননি। আমাদের লড়াই অধিকারের জন্য, মর্যাদার সাথে বাঁচার জন্য। আমরা ভারতীয়। সরকার হিন্দু দেশ গড়তে চায়, কিন্তু এটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমরা কারো করুণার নিচে থাকতে চাই না। এবং এটিই পিএফআই এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে।”

ফারাক্কার টিএমসি বিধায়ক মনিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে ৩০০ জন পিএফআই ক্যাডার বাসুদেবপুর থেকে মুর্শিদাবাদের কাঁকুরিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পদযাত্রা করে  এসে একটি সরকারি স্কুলের খেলার মাঠে মিটিংয়ে দলবদ্ধ হয়ে। ক্যাডাররা দলটির চলমান দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের সামনে তাদের অনুশীলন করে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই অনুশীলন দেখতে জমায়েতে হন।

পিএফআই- রাজ্য নেতাদের মিছিল।

এদিনের প্রধান অতিথি মোহাম্মাদ শাকিফ সরাসরি আরএসএসকে নিশানা করে বলেন, “ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের বিভক্ত করার জন্য মরীয়া সংঘ পরিবার। আমাদের ঢোলের আওয়াজে আরএসএস নাগপুরে ভয় পেয়ে যায়। আরএসএস একটি ক্যান্সার। এদেশে আমরাই একমাত্র সংগঠন যারা তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এজন্য তারা আমাদের টার্গেট করেছে। আমরা মরে যাব, কিন্তু মাথা নত করব না।”

পিএফআই ক্যাডার।

তিনি কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে চলমান সাংঘর্ষিক বিষয়ে হাইলাইট করতে গিয়ে বলেন, “আমরা দেখেছি এদেশে কয়েক মিটার কাপড় কীভাবে বিপদে পরিণত হয়েছে। আরএসএস নাটক বানিয়ে তাদের ছেলেদের জাফরানে পাঠিয়েছে, আদালতে চাপ সৃষ্টি করছে। হিজাব আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদেরকে কুরআন শেখাবেন না। কেয়ামত পর্যন্ত হিজাব থাকবে।”  

পিএফআই-এর সর্ব ভারতীয় সম্পাদক মোহাম্মাদ শাকিফ

পিএফআই ও ফ্রন্টের রাজনৈতিক শাখা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই) বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

এদিনের অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য আরএসএস-কে নিশানা করে সমস্ত বক্তারা তাদের জলাময়ি বক্তব্য দেন। বক্তারা একবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নেননি, এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তিন ঘণ্টার কর্মসূচিতে মাত্র কয়েক বার উল্লেখ পেয়েছে। কিন্তু সংঘ পরিবারের আদর্শিক দিক গুলো পর্দা ফাঁস করেছেন বক্তারা।  

মোহাম্মাদ শাকিফ আরও বলেন, “আরএসএস ক্ষমতায় এসে সবাইকে নির্যাতন করছে। গান্ধীকে যদি শ্রেষ্ঠ হিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে একটা কথা মনে রাখতে হবে আরএসএস কর্মী গডসে তাকে হত্যা করেছিল। কোন মুসলিম হত্যা করেনি।”

তিনি আরএসএস এর ভয়াবহতা ও ঘৃণ্য দিক উল্লেখ করে বলেন, “আরএসএস ক্যান্সারের পোকা। এমনকি বিরাট কোহলির শিশুকেও রেহাই দেয়নি এরা। অধিনায়ক কোহলি সতীর্থ মহম্মদ শামির সমর্থনে কথা বলার পরে কোহলির শিশু কন্যার বিরুদ্ধে অনলাইনে ধর্ষণের হুমকি আসে। এমনকি তাঁর অধিনায়কত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে মাদক কর্মকাণ্ড সকলের সামনে পরিষ্কার, কাদের এই ষড়যন্ত্র ছিল।”

পিএফআই ক্যাডার।

 বর্তমান মূলধারার মিডিয়াকে মোহাম্মাদ শাকিফ চার ভাগে ভাগ করে বলেন। প্রথম ধরনের মিডিয়া কোটিপতিদের টাকায় চলে, যতটা এই মিডিয়া পা চাটবে ততটাই টাকা মেলে। দ্বিতীয় ধরনের মিডিয়া সম্পূর্ণ আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হয়। সেখানে হিন্দু-মুসলিম বিতর্কের মাধ্যমে সংঘের আদর্শ গুলি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় লেগেই থাকে। তৃতীয় ধরনের মিডিয়া যারা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ বলে চেঁচায়। কিন্তু এরা আতংবাদি আরএসএস-কে পিএফআই সমান বলে জিকির করে চলে। মূলত এরা সঠিক অর্থে মিডিয়ার মূল ভুমিকা পালন করছেনা। আর চতুর্থ মিডিয়া যারা সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরে। যার সংখ্যা হাতে গনা কয়েকটি আছে, যা সুস্থ ‘প্রজাতন্ত্র’এর জন্য খুবই নগণ্য সংখ্যা।

এদিনের ঐতিহাসিক সভা ফ্রন্টের কলকাতা জেলা সভাপতি রেজাউল সেখের স্বাগত বক্তব্যর মাধ্যমে শুরু হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের রাজ্য সভাপতি ড. মোঃ মিনারুল সেখ, প্রধান অথিতি হিসাবে ফ্রন্টের সর্ব ভারতীয় সম্পাদক মোহাম্মাদ শাকিফ।

বিশেষ বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের ইষ্ট রিজিওনাল সম্পাদক মোঃ আসাদুল্লাহ সেখ, ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওবাইদুল্লাহ নুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সর্ব ভারতীয় সম্পাদক তায়েদুল ইসলাম, অল ইন্ডিয়া ইমামস কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুত তাওয়াব। অবশেষে পপুলার ফ্রন্টের রাজ্য সম্পাদক মোঃ কামাল বাসিরুজ্জামানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক মহা সমাবেশের সম্পাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে পিএফআই- রাজ্য নেতৃত্ব।

Latest articles

Related articles