জসিম উদ্দীন, কলমাকান্দা নেত্রকোণা
নেত্রকোণা জেলা শহর হতে ১২ কিলোমিটার দূরের উপজেলা কলমাকান্দা । এ উপজেলার ৭নং কৈলাটি ইউনিয়নের সিধলী বাজার থেকে নাজিরপুর ইউনিয়নের চকবাজার পর্যন্ত ৮ কিলো মিটার রাস্তা এলাকাবাসীর জন্য যেন অভিশাপ!
উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও এখনো উপজেলায় কাঁচা রয়ে গেছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। আর এ কাঁচা রাস্তাগুলো এখন ওই এলাকার গ্রামবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো পানি-কাদায় একাকার হয়ে যায়। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় ওইসব গ্রামের হাজারো মানুষের। জুতা হাতে জল-কাদা মাখা শরীরে চলেন শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার লোকজন।
এখানে রয়েছে ২ টি কলেজ ২ টি হাই স্কুল অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন সহ একটি ফাড়ি থানা, রয়েছে একটি গরুর হাট।
প্রতিবছর বর্ষার সময় এই কাঁচা সড়কটি কাদায় সয়লাব হয়ে যায়। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ৬-৭ টি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কৈলাটি ইউনিয়নের সিধলী বাজারের । শুধু তাই নয় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীর ও চাকরিজীবীদের। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শুধুমাত্র যাতায়াতের কারণে এই গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা।
মিতালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে হতে নাউরীপাড়া বাজার পর্যন্ত নতুন করে মাটি দিয়ে মেরামত করাই, এ যেন মরার উপর খাড়া ঘা, এ এতে দূর্ভোগ আরো বেশি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণ সহ স্বানীয় স্কুল ছাত্রছাত্রীদের।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় মানুষের অসুখ-বিসুখ হলে চিকিৎসা নিতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কাদায় ভরে যায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এমন কি হেঁটেও চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টির সময় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার শুকনো মৌসুমেও রাস্তায় ধুলোর কারণে কাশিসহ অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
তারা জানান, এই রাস্তা দিয়ে ৯টির ও অধিল গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত অথচ রাস্তাটি অভিভাবকহীন। গ্রামে কোন লোক অসুস্থ্য হলে তাকে দুইজন লোকে ভারে বহন করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমন কি গ্রামে কেউ যদি মারা যায় তার দাফনের কাজ সম্পূর্ণ করতে বেশ কষ্ট ভোগ করতে হয়।
বেনুয়া -চাঁনকোণা , নাউরী পাড়া , জামসেন , বড়মানখিলা, বিষমপুর,রাঙামাটিয়া, বানিয়াপাড়া, মন্ডলেরগাতী , এই ৯ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি মেরামত করার । কিন্তু কেউ আমলে নিচ্ছেন না। তাছাড়া গ্রামের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো রাস্তা খারাপের জন্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারীরা মূলধন হারিয়ে পুনরায় চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
স্থানীয় হারুন আহম্মেদ রেজা নামের এক যুবক বলেন, রাস্তাটি এতই খারাপ যে, এই গ্রাম থেকে কেউ বিয়েশাদীর মত সম্পর্ক অন্য এলাকার মানুষ করতে চাইনা। রাস্তার বেহালদশার কারণে মূমুর্ষ রোগীকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। প্রায় সময়ই লক্ষ্য করা যায় হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই রোগী পথেই মারা যাচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার বলেন, রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী বিষয়টি নিয়ে তদারকি চলছে। অতি শীঘ্রই এই রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ আফসার উদ্দিন জানান, সিদলী বাজার হতে চকবাজার রাস্তাটির উন্নয়নকাজের জন্য অতি শীঘ্রই রাস্তার মাপ ও ইস্টিমিট পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।