আলমগীর ইসলামাবাদী
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, ‘উলিল আমর’ তথা জাতীয় দায়িত্বশীল কারা এবং তাদের আনুগত্য কখন ওয়াজিব?
বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, হাটহাজারীর মুফতী সাহেবদের ফতোয়া এক্ষেত্রে যথার্থ। কিন্তু এর বিপরীতে কতিপয় আধুনিক মনোভাবাপন্ন আলেম বলেন, শরীয়তে ‘উলিল আমর’-এর আনুগত্য ওয়াজিব বলা হয়েছে। আর হাটহাজারীর মুফতী সাহেবদের ফতোয়া উলিল আমরের নির্দেশনার পরিপন্থি। তাই তাদের ফতোয়া অনুযায়ী আমল করা সম্ভব নয়। কেননা উলিল আমরের আনুগত্য করা জরুরী। সুতরাং তাদের বিধি-নিষেধও মেনে চলা জরুরী। এমনকি এতে কুরআন ও হাদীসের বিরোধিতা করার প্রয়োজন হলে তাও করতে হবে। অতএব, উলিল আমরের আনুগত্য হিসেবে করোনা ভাইরাসের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক আমল করা জরুরী বলে মনে করি। সুতরাং আমরা সে অনুযায়ী আমল করব।
এটা আধুনিক মনোভাবাপন্ন আলেমদের দাবি। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বহু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ লকডাউনের সমস্ত আইন মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। একের পর এক মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা পাঠদান না করেই বেতন নিচ্ছেন। ছাত্ররা অনর্থক পথে পথে ঘুরছে।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এতে তাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কেননা সেখানে শিক্ষকদের বেতন আসবে সরকারি তহবিল থেকে। এটা ভিন্ন বিষয় যে, সরকার তাদেরকে কোথা থেকে বেতন-ভাতা প্রদান করবে। সেজন্য আমরা জবাবদিহিতার শিকার হব না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একমাত্র জনগণের মাধ্যমে যেসব দীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে, যেগুলোর অর্থের উৎস হচ্ছে দীনদার, আন্তরিক এবং উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আর্থিক সহযোগিতা, এসব মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কোথা থেকে আসবে? ধর্মীয় অনুদান সংগ্রহের সুযোগও তারা পাচ্ছেন না।
তাছাড়া যেসব ইলমপিপাসু ছাত্র তাদের জীবনকে দীনের জন্য উৎসর্গ করেছেন, তাদের সময় যে নষ্ট হচ্ছে, তার দায় কে নেবে?
দীনী ইলম শিক্ষা করা ফরয বা ওয়াজিব বা সুন্নাত। কিন্তু লকডাউনের কারণে তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এর গুনাহ কার উপর বর্তাবে?
আশা করি, উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর প্রমাণসহ উত্তর প্রদান করবেন।
প্রাসঙ্গিক আরও কয়েকটি প্রশ্ন-
উলিল আমর দ্বারা কারা উদ্দেশ্য? এর দ্বারা কাদের আনুগত্য ওয়াজিব?
উলিল আমর যদি শরীয়তবিরোধী কোনো আদেশ করে, তার আনুগত্যও কি ওয়াজিব, না শুধু শরীয়তসম্মত বিষয়ে তাদের আনুগত্য ওয়াজিব? আমরা জানি, উলিল আমর যদি শরীয়তবিরোধী কোনো আদেশ করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য জরুরী তো নয়ই, বরং জায়েযই নয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে জুমার নামায বর্জন করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাত ছেড়ে দেওয়া, কাতারের মাঝখানে এক গজ পরিমাণ ফাঁকা রাখা, ইত্যাদি বিষয় কি শরীয়তসম্মত না শরীয়তপরিপন্থি?
করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান লকডাউন কি শরীয়তসম্মত?
উলিল আমরের নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধি-নিষেধ, জুমার নামাযে সংখ্যা নির্ধারণ, এসব কি জায়েয?
আশা করি, কুরআন ও হাদীসের দলিল সহকারে প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করবেন, যাতে সংশোধনকামী উম্মাহর চলার পথ পরিষ্কার হয় এবং যারা শুধু বিতর্ক করতে চায়, তাদের জবাবও হয়ে যায়।
হযরত আল্লামা মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগামী (দা.বা.) মুফতিয়ে আযম বাংলাদেশ এবং পরিচালনা পরিষদের প্রধান, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।