শামীম সরকার স্টাফ রিপোর্টার
কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে হোসেনপুরে বেড়েছে কামার সম্প্রদায়ের ব্যস্ততা
পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু’র মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার কামাররা। তবে কয়লা, লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারে দা-বটি, ছুরি ও চাপাতির দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন তারা।
অপরদিকে ঈদুল আযহার আরো চার দিন বাকি থাকায় দা, বটি ও ছুরিসহ অন্যান্য মাংস কাটার উপকরণ পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি এখনো। দিন-রাত টুং-টাং শব্দে কোরবানীর সরঞ্জাম তৈরির কাজ করছেন কামাররা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। কোরবানি দাতারা কোরবানির পশু মাংস কাটার জন্যে পরিবারের ব্যবহৃত-অব্যবহৃত দা-বটি ও ছুরি শান দেওয়ার জন্যও কামারদের কাছে নিয়ে আসছেন। আবার অনেকেই দা-বটি, ছুরি, কুড়াল চাকু কিনে নিচ্ছেন আগে থেকেই ।
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কামাররা কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরি করছেন। কামারদের দোকানগুলোতে অন্য সময়ের চেয়ে মৌসুমী অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে। কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ায় কামাররা চাহিদামত দা, চুরি, বটি, চাকু, কুড়াল তৈরি করতে পারছেন যথা সময়েই। শুক্রবার(১৬ জুলাই) সকালে হোসেনপুর গোবিন্দপুর পুলেরঘাট, ,মির্জাপুর,আশুতিয়া পুরাতন বাজার কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, কামাররা দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, কুড়ালসহ কোরবাণীর মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তবে ক্রেতারা বলছেন অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার দা, বঁটি, ছুরির দাম অনেকটা বেশি। কামারেরাও জানিয়েছেন কয়লা, লোহার দাম বেশি হওয়ার কারণে কোরবানীর গরুর মাংস কাটার দা, বঁটি, ছুরি, কুড়ালসহ অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরির উপকরনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দোকানে সাজিয়ে রাখা সরঞ্জামাদির দাম জানতে চাইলে কামারগণ জানান, নতুন ছোট দা, ১শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ ও ৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারী দা সাড়ে ৪শ’ থেকে টাকা থেকে সাড়ে ৬শ’, ৭শ’, ৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কুড়াল ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের ছুরি সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু ১শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা, বটি ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম আরো বাড়বে বলে জানান কামাররা।
পুলেরঘাট উপ- শহরের কামারপট্টিতে কোরবানীর উপকরণ ক্রয় করতে আসা জামাল মিয়া জানান, এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জামের দাম অনেকটাই বেশি। তিনি বলেন, গত বছরের বড় সাইজের যে দা ৪শ’ টাকা দিয়ে কিনেছি এবার কামারগণ সেই দা’র দাম সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা চাচ্ছেন। এছাড়াও কুড়াল, ছুরিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আযহা তথা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বটি, দা, বড় ছুরি ও কুড়াল, টাক্কালসহ গরুর মাংস কাটার সরঞ্জামের দাম বেড়ে গেছে। কামারপট্টির কামার বিধান রায় জানান, এ পেশায় এখন আগের মতো চাহিদা নেই। সারা বছরই আমাদের অলস সময় কাটাতে হয়। তবে ঈদুল আযহা এলে এ পেশার মানুষদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নতুন বটি, দা, বড় ছুরি ও ধামা তৈরি এবং পুরাতনগুলোতে শান দিতে নিয়ে আসেন আমাদের দোকানে। কামারগণ এ সময় দা, বঁটি, কুড়াল, ছুরি, চাকু তৈরির কাজে অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিলিপ চন্দন বলেন- এখনও পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। দু’একদিনের মধ্যে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে। তিনি বলেন, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে দা-বঁটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি সরঞ্জামের মান ভালো হয়।
এবার কয়লাসহ লোহার দাম বেশি হওয়ার কারণে দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, কুড়ালসহ অন্যান্য কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জামের দাম বেড়েছে।
তাছাড়া সারা বছরের মধ্যে একটা সময়ই কামারেরা কিছু টাকা উপার্জন করার সময় পান। সে হিসেবেই তারা একটু দাম বেশি নেন। নারদ দেব কর্মকার জানান, গত চার-পাঁচ বছরে লোহার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধু লোহাই নয়, কয়লার দামও বেড়েছে। যে কারণে আমাদের দা, ছুরি, কুড়াল, চাকুসহ অন্যান্য কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জামের জন্য দাম বাড়তি নিতে হচ্ছে।
Related articles