Tuesday, June 10, 2025
31 C
Kolkata

আব্বাস সিদ্দিকী বা মিম শুধুই ভোট কাটার কারিগর? দেখা যাক বাস্তবতা

পাঠকের কলমে : আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা বাংলা জুড়ে বর্তমানে যে বিষয়ে সব থেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটা হচ্ছে আব্বাস সিদ্দিকী এবং মিম এরা কেন নির্বাচনী ময়দানে নামছে? এরা সেক্যুলার পার্টিগুলোর জন্য হুমকি স্বরূপ। আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বামদের জোটের পর এখন হয়তো অনেকে তাকে এই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিছেন তবে মুক্তি পাচ্ছেন না ওয়াইসির মিম। আবার অনেকে বলছে আব্বাস উদ্দিন সিদ্দিকীর কি প্রয়োজন আলাদা একটা দল করার ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে গিয়ে? তবে সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠছে যে সত্যিই কি এই দুটো দল শুধুই ভোট কাটার কারিগর? এরা কি সত্যিই বিজেপির হাত শক্ত করার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসছে? যারা এমন প্রশ্ন করছে তাদের তাদের কাছে একটা প্রশ্ন করে আলোচনা শুরু করা যাক। যদি সেক্যুলার ভোটে ভাগ বসানোর জন্যই এই দুইজন দোষী হন তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সিপিআইএম, কংগ্রেস, এগুলো কি?এরা তো নির্বাচনে না লড়াই করলে সেক্যুলার ভোটের একটা বড়ো অংশ তৃণমূলের ভাগ্যে জুটতে পারতো। যার ফলে অসুবিধা হতে পারতো বিজেপির। কেন কখনোই কেউ এই ব্যাপারে আওয়াজ তোলেন না?? কেন কেউ দ্বিমুখী নির্বাচনের স্থানে ত্রিমুখী নির্বাচনকে সমর্থন করছেন তাহলে??

এবারে আসা যাক আসল কথায়।
নিজের প্রয়োজন মেটাতে পাশের দাদার দয়ার ওপর নির্ভর করে কতদিন বাঁচতে হবে এই জাতির?? কারো ওপর নির্ভর করে কোনো রকমে বেঁচে থাকা যেতে পারে, কোনো রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যেতে পারে হয়তো কিন্তু উন্নতি লাভ করা সম্ভব না, এটা ঐতিহাসিক সত্য। একটা উদাহরণ দেওয়া কি সম্ভব যেখানে এক জাতী অন্য কারো ওপর নির্ভর করে তাদের দয়ায় উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার হতে চলল, কি করেছে আমাদের সেক্যুলার পার্টিগুলো আমাদের জন্য? আসাদুদ্দীন ওয়াইসীর মুখে এগুলো শুনতে খারাপ লাগে হয়তো কিন্তু ভাবা প্রয়োজন একটু এরা আমাদের প্রকৃত উন্নতির জন্য কতটা কাজ করেছে? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে রেখেছে। বিজেপি তো কয়েক দশকের শক্তি মাত্র। এতদিন তথাকথিত মুসলিম দরদীরাই আমাদের সর্বনাশ করে এসেছে। আর কতদিন এদের ওপর অন্ধভাবে নির্ভর করা যেতে পারে একটু ভাবা প্রয়োজন! গুজরাট দাঙ্গা থেকে নেলি হত্যাকাণ্ড, বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে মুম্বাই দাঙ্গা, মুজাফফর নগর দাঙ্গা থেকে নিম্ন আসামের দাঙ্গা সব ক্ষেত্রেই মুসলিম হত্যাযজ্ঞের পিছনে ছিল আমাদের বর্তমানে ভালোবাসার তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলো।

নিজস্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধি ছাড়া কখনই এ জাতী প্রকৃত অগ্রগতি লাভ করতে পারবে না। কেউ যত বড়োই জনদরদী সমাজসেবক আর ধর্মীয় গুরু হন না কেন তার কথার দুই পয়সা দাম নেই রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অঙ্গনে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য না থাকলে মিডিয়াও তাকে কোনো কভারেজ দেবে না। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সহ মীমের নেতারা যে মিডিয়া কভারেজ বা প্রশাসনিক গুরুত্ব পান তার একমাত্র কারণ তাদের রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব। দেওবন্দের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের সেই অর্থে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না কারণ তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি নেই। আব্বাস সিদ্দিকী ততদিন মিডিয়া কভারেজ পাননি যতদিন না তিনি ধর্মীয় গুরু পরিচয়ের বাইরে রাজনৈতিক পরিচয় সন্ধান করছেন। নির্বাচনী গণতন্ত্রে রাজনৈতিকভাবে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে আপনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও বিন্দুমাত্র চিন্তার কারণ হবে না স্বৈরশাসকের জন্য।

তাই নিজের সংকীর্ণ ধর্মীয় চিন্তাধারার ওপরে উঠে ভাবার চেষ্টা করার সময় এসেছে, এখন না হলে আর কোনোদিন আমাদের দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে না হয়তো এই ভূমিতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি ঘুটি সাজিয়েছে। এটাই সময় আমাদের নিজস্ব পরিচয় এবং প্রতিনিধি তৈরি করার। যৌক্তিক কারণে নিশ্চই অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়া ভালো কিন্তু অন্ধ ভক্তি কতটা সমীচীন ভাবা উচিত। প্রয়োজন মনে হলে সমর্থন করবো না তাদের যারা এই সময়ে হাজার বাধা বিপত্তির সামনে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের ঘৃণা করা বা তাদেরকে ভিত্তিহীন কোনো দলের দালাল, ভোট কাটার কারিগর ইত্যাদি মিথ্যা তকমা দিয়ে নিজের গোঁড়ামির তকমা দেওয়া কি ঠিক? বিজেপি শিব সেনা দুটোই হিন্দুত্ববাদ নিয়ে ভোটে লড়াই করে কিন্তু কখনোই দেখবেন না কেউ তাদের একটাকে ভোট কাটার করিগর্ভ্যবলে অভিহিত করে। নিজের বিবেক বিচার বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করে ভোট দিতে হবে। অবশ্যই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য কিন্তু আমরা আমাদের জন্য যারা এগিয়ে আসতে চাইছে তারা পরিস্থিতির কারণে সব জায়গায় সব ক্ষেত্রে আমাদের সমর্থনের দাবিদার না হলেও আমাদের ঘৃণা পাওয়ার পাত্র না কিন্তু এটা একটু চিন্তা করা দরকার। অজ্ঞতা আর ধর্মীয় গোঁড়ামি আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই দুটো বিষয়কে দূরে রাখা উচিত। এই দুটো কারণে আজও আমাদের জাতী অন্য সব জাতির তুলনায় পিছিয়ে আছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং অন্ধ ভক্ত তাবেদার হওয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য থাকা উচিত।

Hot this week

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

ঈদের আগে উত্তেজনা: গাজিয়াবাদে মুসলিম মাংস বিক্রেতাকে গুলি করার হুমকি বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর

উত্তরপ্রদেশর গাজিয়াবাদে বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর গুর্জর সম্প্রতি একটি...

Topics

গাজার রাফাহ সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৭ জন ফিলিস্তিনি

ফের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রাফাহ শহরের একটি...

মাদ্রাসা রক্ষায় আজমগড়ে সম্মেলন, আদালতের পথে জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ

উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে আয়োজিত হয় একটি মাদ্রাসা রক্ষা সম্মেলন...

Related Articles

Popular Categories