“পাগল হরে মা… পাগল হ। এই দুনিয়ায় সবাই পাগল। পাগলামিটা বেরিয়ে না আসলে সৃষ্টি হবে? হবে না।” হয়তো পাগল হওয়াটাই তার একমাত্র আম্বিশন ছিল। মানুষটি সারা জীবনে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২৬টি সিনেমা বানিয়েছিলেন; তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছবি চলেছিল বক্স অফিসে। চিরকালই পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের সৃষ্টি সমাজের কাছে একটা কড়া সঞ্জীবনী সুধা। এই ওষুধের তাড়নায় বারবার ঘুম ভেঙেছে রাষ্ট্রের। আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে, ১৯৭৬ সালে প্রয়াত হন মহান পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। তার সৃষ্টি ৪৯ বছর পরেও ঘুম ওড়াচ্ছে শাসকের—এমনটাই মনে করছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
নচিকেতা চক্রবর্তী, যাকে বাংলার লেলিন বলে সম্বোধন করা হয়েছিল, সেই বাংলার অগ্নিকন্যাকেই কী আজ ভয় পেতে হচ্ছে ঋত্বিক ঘটকের শিল্পকে? নাকি লেনিনকে? নানান মহলে উঠছে প্রশ্ন। ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বর্তমান তৃণমূল সরকার। দেখানো হলো না ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত “আমার লেলিন” নামক সিনেমাটি। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, লেলিনের প্রতি চূড়ান্ত অনীহা এবং মতাদর্শগত বিরোধ থাকার কারণে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন সিদ্ধান্ত। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাড়ার ঐতিহ্যবাহী নাকতলা হাইস্কুলে তৃণমূলের হুমকিতে বন্ধ করা হলো ঋত্বিক ঘটকের ছবি প্রদর্শন।
এন বি টিভি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুজয় মুখার্জী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি জানান, “যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে এটা ফ্যাসিবাদী ভাবধারাকে প্রতিস্থাপিত করছে। ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা নিয়ে ওই সময়েও শাসকরা অপ্রস্তুত পড়েছে। যদি এমনটা সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, ঋত্বিক ঘটক আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন।” তিনি আরও বলেছেন , “যে অঞ্চলে এই ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে অধিকাংশই রিফিউজি অধিবাসীদের বসবাস। কাজেই ঋত্বিক ঘটক এই মানুষজনদের নিয়েই চিরকাল ছবি তৈরি করেছেন।”
ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতায় নাকতলা হাইস্কুল পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পড়ুয়া ও অঞ্চলের সকল আগ্রহী মানুষকে দুটি সিনেমা দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। ১০ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ সোমবার, পড়ুয়াদের কোমল গান্ধার এবং আমার লেলিন নামক দুটি সিনেমা দেখাতে উদ্যোগী হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এই দুটি সিনেমার পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয় অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে। সন্ধ্যায় সাড়ে ছটায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের অনুমতিতে প্রদর্শনী শুরু হওয়ার কথা ছিল।
প্রথমদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের মতামত থাকলেও পরবর্তীতে ছবি প্রদর্শনে সহমত পোষণ করেননি। স্কুলের কর্তৃপক্ষ মারফত জানানো হয় , “কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মহাশয়কে হুমকি দেওয়া হয়”। বলা হয়, “ছবি দুটি চালানো হলে স্কুলে ভাঙচুর করা হবে”। মনে করা হচ্ছে মূলত তাদের আপত্তি “আমার লেলিন”-এর বিরুদ্ধে।