Saturday, May 31, 2025
30 C
Kolkata

৩০০ বছর পর অবশেষে দলিত পরিবারেরা পেল মন্দিরের প্রবেশাধিকার, লজ্জায় মাথা হেঁট বাংলার

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার গিধগ্রামে দীর্ঘ ৩০০ বছর ধরে বঞ্চিত দলিত সম্প্রদায় অবশেষে গিধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশের অধিকার পেলেন। বুধবার দাস সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রথমবারের মতো মন্দিরে পূজা অর্পণ করেন, যা বংশ পরম্পরায় তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।

গিধগ্রামের দাসপাড়া এলাকার চার নারী ও এক পুরুষ সদস্য পুলিশি নিরাপত্তায় মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে শিবলিঙ্গে দুধ ও জল ঢালেন। এর আগে, মহা শিবরাত্রিতে (২৬ ফেব্রুয়ারি) তাদের প্রবেশচেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছিল, এমনকি অর্থনৈতিক বর্জনের শিকার হয়েছিল দলিত পরিবারগুলো। স্থানীয় দুগ্ধ সংগ্রহকেন্দ্রগুলো তাদের কাছ থেকে দুধ নিতে অস্বীকার করে, যা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি জোরালো করে।

উপ-বিভাগীয় আধিকারিক (এসডিও) আহিংসা জৈনের নেতৃত্বে এক বৈঠকে স্থানীয় বিধায়ক, পুলিশ, মন্দির কমিটি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা হয়। এসডিও জৈন জানান, “মন্দিরে পূজার বিষয়টি নিয়ে বিরোধ মিটেছে। দাসপাড়ার বাসিন্দারাও এখন থেকে অন্যদের মতো পূজা করতে পারবেন।” তবে মন্দিরের এক সেবক সনৎ মণ্ডল অভিযোগ করেন, “গাজন উৎসবের সময় মন্দিরের শুদ্ধতা বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় এই অগ্রগতিকে “২১শ শতাব্দীতে অনৈতিক প্রথার বিরুদ্ধে জয়” বলে অভিহিত করেন। পশ্চিমবঙ্গে জাতিভেদের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক নতুন করে উসকে দিয়েছে এই ঘটনা। যদিও রাজ্যে বামপন্থী শাসনামলে জাতির বদলে শ্রেণীকে প্রাধান্য দেওয়া হতো, তবু ২০০১ সালে প্রতীচি ট্রাস্টের গবেষণায় প্রকাশ পায়, স্কুলে দলিত শিশুদের আলাদা বসানো বা উচ্চবর্ণের পরিবারগুলোর দ্বারা দলিত রান্নার বিরোধিতার মতো ঘটনা এখনও ঘটে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বামফ্রন্টের প্রভাব হ্রাস ও ভদ্রলোক সংস্কৃতির আধিপত্য কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে জাতিভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতি জোর পাচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপির মতো দলগুলো মাতুয়া, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মতো গোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌঁছাতে সক্রিয়। তবে এখানে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের পরিচয়ের রাজনীতি আবার নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে। রাজনৈতিক স্তরে মাতুয়া, রাজবংশীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি তৃণমূল ও বিজেপির আকর্ষণ জাতিগত রাজনীতির নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাম শাসনের দীর্ঘ সময় জাতপাতকে ‘অদৃশ্য’ করলেও তা সম্পূর্ণভাবে মুছে যায়নি। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ম, জাতিসত্তা ও আঞ্চলিক পরিচয়ের মিশেলে জটিল রূপ নিয়েছে এই রাজনীতি।

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ সমাজে জাতিভেদের অব্যক্ত কিন্তু গভীর উপস্থিতিরই ইঙ্গিত দেয়। শহুরে বুদ্ধিজীবী মহলে জাতিভেদ প্রসঙ্গ উপেক্ষিত হলেও মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব এখনও সক্রিয়, যা রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসকে প্রভাবিত করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন।

Hot this week

কংক্রীট নয়, কাদার রাস্তা! ১০ লক্ষ টাকার প্রকল্পে ভোগান্তির পথে মালদার হামিদপুরের এলাকাবাসী

মালদার কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম তোফির...

বাড়ি ফেরা হল না, কফিনেই ফিরল ফারুক: মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক পরিণতি

ঈদের আগে বাড়ি ফেরার কথা ছিল মালদার পরিযায়ী শ্রমিক...

মাদ্রাসা-মসজিদের পর এবার কবরস্থান? উত্তরপ্রদেশের হারদইয়ে ১৫ বছর পুরনো কবরস্থান ভাঙল প্রশাসন

উত্তরপ্রদেশের হারদই জেলার মল্লাওন এলাকায় সম্প্রতি পুরনো একটি মুসলিম...

Topics

কংক্রীট নয়, কাদার রাস্তা! ১০ লক্ষ টাকার প্রকল্পে ভোগান্তির পথে মালদার হামিদপুরের এলাকাবাসী

মালদার কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম তোফির...

মাদ্রাসা-মসজিদের পর এবার কবরস্থান? উত্তরপ্রদেশের হারদইয়ে ১৫ বছর পুরনো কবরস্থান ভাঙল প্রশাসন

উত্তরপ্রদেশের হারদই জেলার মল্লাওন এলাকায় সম্প্রতি পুরনো একটি মুসলিম...

উত্তরপ্রদেশে বাহরাইচ জেলায় উচ্ছেদের নোটিশে বিপদের মুখে ১৮০ পরিবার ও শতবর্ষী মসজিদ

উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলার বিচ্ছিয়া এলাকায় আনুমানিক ১৮০টিরও বেশি পরিবার...

Related Articles

Popular Categories