বর্তমান যুগে প্রযুক্তির প্রয়োগ যত সহজ হয়েছে, ততই জটিল হয়েছে জীবনযাত্রার নিরাপত্তা। বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বাইক চালানো যেমন দ্রুতগামী, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। বাইকচালকের অমনোযোগী মুহূর্তই অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। তাই চালকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সামনে এসেছে এক চমকপ্রদ উদ্ভাবন—একটি ‘স্মার্ট হেলমেট’, যা শুধুই নয় একটি সুরক্ষা সরঞ্জাম, বরং একাধারে বুদ্ধিমান সঙ্গী।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চারজন মেধাবী ছাত্র তৈরি করেছেন এই স্মার্ট হেলমেট, যা শুধুমাত্র মাথা রক্ষার কাজই করবে না, বরং দুর্ঘটনার সময় আপনজন এবং জরুরি পরিষেবাগুলিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কও করবে। হেলমেটটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এর ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি, যার মাধ্যমে এটি সহজেই স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। হেলমেটের অভ্যন্তরে রয়েছে উন্নতমানের স্পিকার ও মাইক্রোফোন, যা স্পষ্টভাবে হর্ন বা অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে সাহায্য করে, আবার হ্যান্ডস ফ্রি কল রিসিভ করার সুবিধাও দেয়। চালক একটি বোতাম চেপে কল রিসিভ করতে পারেন এবং একই বোতাম দুইবার চাপলে কলটি কেটে যাবে—ফলে মনোযোগ কখনও সড়ক থেকে সরে যাবে না।

স্মার্ট হেলমেটটি তৈরি হয়েছে শক্তপোক্ত উপাদান দিয়ে, ফলে এটি স্ক্র্যাচ ফ্রি এবং দীর্ঘস্থায়ী। রয়েছে ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা, যা দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হেলমেটটির মধ্যে থাকা একাধিক সেন্সর যেকোনো দুর্ঘটনার সময় তৎক্ষণাৎ সংযুক্ত স্মার্টফোনের মাধ্যমে চালকের পরিবার এবং স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে এসএমএস ও লোকেশন পাঠিয়ে দেবে। এতে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা সম্ভব হবে।
নারী সুরক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে উদ্ভাবকেরা। হেলমেটে একটি বিশেষ সুরক্ষা বাটন সংযুক্ত রয়েছে, যা তিন সেকেন্ড চেপে ধরলেই মহিলা হেল্পলাইনে মেসেজ পাঠাবে এবং লাইভ লোকেশন শেয়ার করবে। যেকোনো বিপদের মুহূর্তে তাৎক্ষণিক সাহায্য পাওয়ার এই উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে।
তাছাড়া স্মার্ট হেলমেটটি এআই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে চালকদের নেভিগেশন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে। বাইক চালানোর সময় মুঠোফোনে চোখ না রেখেও গন্তব্যে পৌঁছনোর পথ নির্দেশনা পাওয়া যায়, এমনকি ট্রাফিক আপডেট ও শর্টকাট রুট সম্পর্কেও জানা সম্ভব। ফলে এই হেলমেট একাধারে সুরক্ষা, যোগাযোগ ও গন্তব্য নির্দেশনার দিক থেকেও চালকদের পরিপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে।
এই বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন উদ্ভাবন আলিয়ার টেক ফেস্টে প্রদর্শিত হওয়ার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে। উদ্ভাবকদের বক্তব্য, আগামী দিনে তারা আরও কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটিয়ে এই হেলমেটকে বাজারে আনার পরিকল্পনা করছেন।
আজকের দিনে যখন পথদুর্ঘটনা ও নারীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সমাজ উদ্বিগ্ন, তখন এমন এক ‘স্মার্ট হেলমেট’ নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু একটি প্রযুক্তি-নির্ভর পণ্য নয়, বরং মানুষের জীবনের মূল্যবান মুহূর্তে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। আলিয়ার তরুণ উদ্ভাবকদের এই সৃষ্টিশীল উদ্যোগ দেখিয়ে দেয়, প্রযুক্তি যদি মানবিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে তা সমাজকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।