আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) রাইডিং ক্লাবের জমি দখলের অভিযোগে আলিগড় পৌর নিগমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন ছাত্র শিক্ষার্থী এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) দায়ের করেছেন। মামলায় পৌর কমিশনারসহ কতিপয় কর্মকর্তাকে “বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী ও অন্যায্য” কাজের জন্য দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বুধবার (৩০ এপ্রিল, ২০২৫) পৌর কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে জমির মালিকানা দাবি করে এবং কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জমি দখলের চেষ্টা চালায় ।

এলএলএম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কায়েফ হাসান সহ অন্যান্য পিটিশনকারীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় গত ৮০-৯০ বছর ধরে এই জমির নিরবচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণ মালিকানা ভোগ করে আসছে। পৌর নিগমের এই পদক্ষেপ “আইনের মৌলিক নীতিকে চ্যালেঞ্জ” করেছে, কারণ মালিকানা দাবি করলেও কোনো আদালতের নির্দেশ বা সরকারি আদেশ ছাড়াই জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। ছাত্ররা হাইকোর্ট থেকে পৌর কমিশনারকে জমিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে এবং পুলিশ সুপারকে সাইনবোর্ড সরানোর নির্দেশ চেয়েছেন ।
- এএমইউর দাবি: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৮৯৪ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইনের মাধ্যমে এই জমি সরকারি আদেশে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং দলিল-দস্তাবেজসহ সকল প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে ।
- পৌর নিগমের যুক্তি: পৌর কর্মকর্তারা দাবি করেন, রাজস্ব রেকর্ডে এএমইউর মালিকানার কোনো উল্লেখ নেই এবং জমিটি সরকারি খাস জমি হিসেবে নথিভুক্ত। তারা এএমইউকে একাধিকবার দলিল জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় তা প্রদান করেনি বলে অভিযোগ করেছেন ।

জমি দখলের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে, যা স্যার সৈয়দ গেটে গিয়ে সমাপ্ত হয়। এরপর ছাত্ররা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন ।
এএমইউর রাইডিং ক্লাব ১৯৪০-এর দশক থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের অন্যতম প্রতীক। নবাব মোহাম্মদ ইসমাইল খান শেরওয়ানিসহ অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিরা এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন ।
এএমইউ প্রশাসন ইতিমধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তায় তাদেরই আদালতে যেতে হয়েছে । প্রাক্তন উপাচার্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিরুদ্দিন শাহ বলেছেন, “প্রাসঙ্গিক দলিলগুলি আদালতে পরীক্ষা করলে এএমইউর জয় নিশ্চিত” ।

বিবাদিত জমির বাজারমূল্য প্রায় ১২৬ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হচ্ছে । কিছু রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে বিজেপি এই নিয়ে বিবাদ তৈরি করতে পারে ।
এই বিবাদ শুধু জমির মালিকানার নয়, বরং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন ও ঐতিহ্যের প্রশ্নে রূপ নিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া ও ঐতিহাসিক দলিলের ভিত্তিতে সমাধানই কাম্য। তবে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও যোগাযোগের অভাব যেন ভবিষ্যতে এমন সংঘাতের কারণ না হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।