
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সিঙ্গাপুরে বিদেশি সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার এই মন্তব্যের পরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ঐ বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহানকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পাকিস্তানি সেনা কি ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল কিনা। উত্তরে তিনি প্রথমে বলেছিলেন, “আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।” পরবর্তীতে আবারও তাকে ওই একই প্রশ্ন করা হলে তিনি সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন বলে বিদেশী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তাদের উল্লেখ করে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন যে ভারতীয় বাহিনী দ্রুত সেই কৌশলগত ভুল শনাক্ত করে তা সংশোধন করতে পেরেছিল এবং মাত্র দু’দিন পরই সমস্ত যুদ্ধবিমান পুনরায় উড়িয়ে সফলভাবে দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছিল। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানের সঠিক সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি এবং পাকিস্তানের ছয়টি বিমান (তিনটি রাফালসহ) ধ্বংসের দাবিকে তিনি স্পষ্টভাবে খারিজ করেছেন।
জেনারেল চৌহানের এই স্বীকারোক্তি বিদেশি মাধ্যমের মাধ্যমে প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় বিরোধী দলগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ কঠোর প্রশ্ন তুলেছেন: “বিদেশি সংবাদমাধ্যম কেন প্রথমে এই খবর প্রকাশ করবে? এই তথ্যগুলি কেন প্রথমে ভারতীয় জনগণ, দেশের সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়নি?” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে মোদি সরকার দেশবাসীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করেছে। তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন যে এই ইস্যুতে সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক, যেখানে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। এছাড়াও তিনি ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের পর গঠিত পর্যালোচনা কমিটির আদলে একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের দাবি তুলেছেন, যাতে সাম্প্রতিক সংঘাতে বিমান হারানো এবং প্রযুক্তিগত দুর্বলতার বিষয়ে গভীর তদন্ত করা যায়।
বিরোধী দলগুলি আরও উল্লেখ করেছে যে পাকিস্তান বিমান ধ্বংসের দাবি ও ধ্বংসাবশেষের ছবি আগেই প্রকাশ করলেও ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি প্রকাশ্যে অস্বীকার করে আসছিল। জেনারেল চৌহানের এই স্বীকারোক্তির পর সরকারের সেই অবস্থানকে তারা ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। উল্লেখ্য, এর আগে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিরই একজন সিনিয়র নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল এবং চীনা যুদ্ধবিমানের তুলনায় ভারতীয় রাফাল বিমানগুলোর দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা সরকারি বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল।
এই পুরো বিতর্কের পটভূমি হলো গত এপ্রিল-মে মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানে অভিযান চালায়, যার কোডনেম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে টানা কয়েক দিন সংঘর্ষ চলে। ১০ মে মার্কিন মধ্যস্থতায় দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। সেনাপ্রধানের এই স্বীকারোক্তি সামরিক সততার উদাহরণ হতে পারলেও বিদেশি মিডিয়ায় প্রথম প্রকাশ এবং সরকারের দীর্ঘদিনের অস্বীকারের নীতির কারণে এটি এখন একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার দাবি আগামী দিনগুলোতে সংসদীয় ও জনসমক্ষে বড় বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে।