টি-২০ বিশ্বকাপের পর কোচের পদ থেকে সরতে পারেন শাস্ত্রী, কোহলিদের নতুন গুরু কে হচ্ছেন?

এনবিটিভি ডেস্ক: বিরাট কোহালিদের সঙ্গে দীর্ঘ সাত বছরের সম্পর্ক শেষ করার দিকে এগোচ্ছেন রবি শাস্ত্রী। ঘনিষ্ঠমহলে শাস্ত্রী জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই সম্ভবত তাঁর বিদায়ী মঞ্চ হতে যাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার পরেই বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে শাস্ত্রী এবং ভারতীয় দলে তাঁর সহকারী কোচেদের। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বর্তমান হেড কোচ আর চুক্তি নবীকরণ করতে চাইছেন না।

দায়িত্বে এসে বিদেশি কোচেদের আগমন আর পাউন্ড-ডলারের খরচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন শাস্ত্রী। কাজ করছিলেন সব ভারতীয় সহকারী কোচেদের নিয়ে। বোলিং কোচ বি অরুণ, ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর, ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের পরে এখন বিক্রম রাঠৌর। ফিজ়িয়ো, ট্রেনার, স্ট্রেংথ কন্ডিশনিং কোচেরাও ভারতীয়। সহকারীদের মধ্যে শাস্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অরুণ, শ্রীধরেরাও সরে দাঁড়াতে পারেন বলে ইঙ্গিত। মরুদেশে তাই মাঠের মধ্যে কোহালিদের বিশ্বকাপ অভিযান চলবে। আর মাঠের বাইরে শীর্ষস্থানীয় বোর্ড কর্তারা ব্যস্ত থাকবেন পরবর্তী হেড কোচ এবং সহকারীদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে।

 

কে হতে পারেন শাস্ত্রীর উত্তরসূরি? জনপ্রিয় মত হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে দেশের তরুণ দলকে সামলানো, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান এবং ভারতীয় জনতার কাছে ভীষণ ভাবে গ্রহণযোগ্য রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে আসার চেষ্টা হবে। সমস্যা হচ্ছে, পরিবারের কাছ থেকে এতটা সময় বাইরে-বাইরে কাটাতে দ্রাবিড় রাজি হবেন কি না, পরিষ্কার নয়। কোভিডের পৃথিবীতে একটা সফর বা সিরিজ়ের জন্য আরও বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে কারণ কোয়রান্টিন পর্ব রয়েছে।

 

ওয়াকিবহাল মহল বরং নতুন একটি নামের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছে— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধোনির ‘মেন্টর’ হওয়া যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে অনেকে মনে করছেন। ধোনি এখনও আইপিএলে খেলছেন, তার পরেও বোর্ড কর্তাদের অনুরোধে এই দায়িত্ব নিতে রাজি হওয়ার অর্থ, তিনিও হয়তো ক্রিকেট-পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব মন্দ কী? পাকাপাকি ভাবে জাতীয় দলের কোচ হতে গেলে তাঁকে অবশ্য চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সি খুলে রাখতে হবে। ধোনি-ঘনিষ্ঠরা যা নিয়ে বলছেন, কত দিনই বা আর তিনি খেলবেন? খুব জোর হয়তো এটাই শেষ বছর। কোহালিদের ড্রেসিংরুমে ঢুকতে গেলে সিএসকের সঙ্গে অন্য কোনও ভাবেও যুক্ত থাকাও চলবে না। তা হলেই ফের স্বার্থ-সংঘাত নামক বাউন্সার ধেয়ে আসবে। ইতিমধ্যেই কথা উঠতে শুরু করেছে।

যদিও কয়েকটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ধোনিকে পরবর্তী কোচ হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে। প্রথমত, তিনি সদ্য অবসর নিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্রিকেটারের কাছে বন্ধুর মতো, যেখানে সাধারণত মনে করা হয় কোচ যেন অন্তত পাঁচ-ছ’বছর আগে খেলা ছেড়ে থাকেন। গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায়ের পরে আর কেউ হেডমাস্টার-ছাত্র সম্পর্ক চায় না ড্রেসিংরুমে, আবার শুধু বন্ধুত্বের হাল্কা ভাবও সব সময় কাম্য নয়। অগ্রজ-অনুজ সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে আদর্শ, যা দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে বেশি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ধোনি সাদা বলের ক্রিকেটে রাজা, দুর্ধর্ষ ‘ফিনিশার’ এবং বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, সন্দেহ নেই। ট্রফি জেতায় অদ্বিতীয়। দু’টো বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, একাধিক আইপিএল কিছু বাদ নেই। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ধোনির আগ্রহ এবং মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর টেস্ট নীতি এবং কোহালির টেস্ট নীতিতেও বিস্তর তফাত। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ স্পিন-মন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। অধিনায়ক কোহালির অস্ত্র অতি আগ্রাসন আর পেস ব্যাটারি। তাই যতই ধোনি-কোহালি দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক থাকুক, টেস্ট মঞ্চে ক্রিকেটীয় নীতিতে ঠোকাঠুকি লাগতেই পারে।

 

Latest articles

Related articles