~ঝুমুর রায়
হিন্দু শাস্ত্র বলুন আর যে শাস্ত্রই বলুন, কোন শাস্ত্রেই নারীকে সম্মান দেয়া হয়নি। মনুশাস্ত্র থেকে শুরু করে গীতা পর্যন্ত, সকল শাস্ত্রই নারীকে অসম্মান করা হয়েছে। অস্বীকার করার কোন রাস্তা নেই,কোন অবকাশ নেই,কোন যুক্তি নেই। নারী,সৃষ্টির শুরুতে বহির্জগতে,ঘরে আবদ্ধ ছিলো না,পুরুষের সাথেই কৃষি কাজ করতো,শস্য উৎপাদন করতো,সন্তান উৎপাদনের পাশাপাশি। শ্রম উৎপাদনে নারী তখনও পিছিয়ে ছিলো না।বহিরাগত আর্যগণের আগমনের সাথে সাথে নারীকে চারদেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করা হলো শাস্ত্র নামের শিকল দ্বারা। নারী জন্ম থেকেই অশুচি আর্যদের বিধান। এই বিধান তাঁরা চালু করে অনার্যদের পরাজিত ও কৃষি জমি দখল করার পরে। নারীদের শুচি করার একটি অন্যতম অনুষ্ঠান হলো বিবাহ মন্ত্র আবিষ্কার। যজ্ঞানুষ্ঠানে বহু নর-নারী উপস্থিত থাকা অবস্থায় নারীকে প্রশ্ন করা হয় সে কারো সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছিল কিনা! নারীকে এই অপমান সহ্য করেই অবনত মস্তকে সকলের সম্মুখেই উত্তর দিতে হয়। অথচ,পুরুষের জন্য এমন কোন নিয়ম পাওয়া যায় না। এটা কী নারীর সম্মান?? আর্যগণের সমাজ ছিলো পিতৃতান্ত্রিক। তাদের কাছে নারী ছিলো একমাত্র ভোগ্য বস্তু ও সম্পত্তি। সম্পত্তির যিনি মালিক তিনি তাঁর সম্পত্তির ব্যবহার যেমন খুশি করতে পারে।নারীকে তাঁরা সম্পত্তিই মনে করতো,মানুষ নয়। আর্যরা চার বর্ণের প্রথা চালু করে।তার মাঝে শূদ্র সবচে নিম্নমানের। নারীর অবস্থান শূদ্রের চেয়েও নিচে ছিলো। মনু মহাশয় নারীকে সবচে নিকৃষ্ট মনে করতেন।মনুর ভাষ্য,”স্বভাব এষং নারীণাং নরানামীহ দূষনম।” অর্থাৎ, নারীরা হলো পাপযোনী। গীতায়ও নারীকে পাপযোনি বলা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেন,”আমার শরণাপন্ন হয়ে স্ত্রী, বৈশ্য ও শূদ্রের মতো পাপযোনিরাও মুক্তি পায়।” মহাভারতও নারীকে অসম্মান করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ভীষ্ম নারীকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতর জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মহাভারতে, হুতাশনের পুত্র সুদর্শন তাঁর ব্রাহ্মণ অতিথিকে বলেন,” ব্রাহ্মণ, আপনি আমার ভার্য্যা(স্ত্রী)কে লইয়া পরমসুখে সম্ভোগ করুন।আমার তাহাতে বিন্দুমাত্র অসন্তোষ নাই।” অতিথিকে দেহদানের মাধ্যমে স্ত্রী জাতি তথা নারী জাতি পূণ্য লাভ করে। অর্থাৎ নারী জাতির তাঁর দেহের প্রতিও কোনো অধিকার নেই।কি জঘন্য!! নারী জাতি আজও সম্পত্তি রয়ে গেলো,মানুষ হতে পারলো না,ঊনমানবই রয়ে গেলো!
(মতামত লেখকের নিজস্ব। লেখকের সাথে ফেসবুকে সরাসরি যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।)