৮জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবসে উপসম্পাদকীয় কলাম।।

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

PicsArt_06-08-02.12.46

“৮ই জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস ও কিছু কথা”

সমুদ্র…..কি বিশাল এক জলরাশি! ‘সমুদ্র’ এই শব্দটি উচ্চারণ করলেই চোখে ভাসে নীল রঙের মায়ামাখা এক প্রকাণ্ড পানির উৎসের ছবি। যেখানে ক্রমাগত ঢেউ ছুটে আসছে। বড় বড় ঢেউ ছুটে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে স্থলভূমির কোল। সেই সব ঢেউয়ের মাথায় নাচছে সাদা ফেনার উচ্ছ্বাস। বালুকাবেলার পাড়ে দিগন্ত জোড়া সেই সব সমুদ্র যেন অনাদীকাল থেকে এমন স্রোত বিলিয়ে চলছে।

যারা একটু সমুদ্রপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয়, তাদের চোখে ইতিমধ্যে ভেসে উঠছে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটা কিংবা বিশ্বের নানা জায়গার সমুদ্র সৈকতের উর্মীমালার দৃশ্য। যা আঁচড়ে পড়ছে তাদের গায়ে। যাক, কল্পনার রাজ্য থেকে আমরা বাস্তবে এসে আলোচনায় মনোনিবেশ করি।

সাগর-মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। কেবল অক্সিজেনই নয়, পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে আমাদের এই বসুন্ধরাকে বাস উপযোগী রাখতে সহায়তাও করছে।

এই সমুদ্রের সাথে আমরা কি আচরণ করছি? সমুদ্র আমাদেরকে আর কি দিচ্ছে? সে আলাপে একটু পরে আসছি।

আগে বিশ্ব সমুদ্র দিবসের কথা বলে নিই, সমুদ্রের যতসব অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারীতাকে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বের সবার সামনে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস।’

বিশেষ এই দিবসটি পালনের প্রস্তাব প্রথমবার নিয়ে আসে কানাডা। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত হয় ধরিত্রী সন্মেলন। সেই সন্মেলনেই কানাডা সমুদ্র নিয়ে একটি বিশেষ দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। সমুদ্রের বিশ্বব্যাপী ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তারপর থেকে নানা রকম চিন্তা-ভাবনা চলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব সমুদ্র দিবস পালনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। অধিবেশনে জাতিসংঘ এই বিশেষ দিবসটি পালন করার জন্য সব সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায়। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর ৮ জুন আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয়ে আসছে ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস’।

এবার আসি মূল কথায়,
পৃথিবীর সব প্রাণের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নির্ভর করে সামুদ্রিক পরিবেশে সুরক্ষিত থাকার ওপর। আর এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঞ্জাল ফেলার জায়গাটির নাম সমুদ্র।

জাতিসংঘের পরিবেশ সমীক্ষার এক তথ্যমতে, সমুদ্রের প্রতি বর্গমাইলে ৫০ হাজার পর্যন্ত প্লাস্টিকের বোতল ভাসতে দেখা যায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল, কেমিক্যালসহ আরো নানা রকম বর্জ্যের নমুনা। ক্ষোভের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে সমুদ্র। মানবজাতির ক্রমাগত অপতৎপরতা সমুদ্রকে ভয়ংকর ও দূষিত করে তুলছে।

প্রতিদানে সমুদ্র আমাদেরকে কি দিচ্ছে জানেন?

অক্সিজেন আর কার্বন-ডাইঅক্সাইডের কথা তো জানলেনই। এছাড়াও আমাদের বেশিরভাগ খাদ্য ও ঔষুধের উৎসও হলো সাগর ও মহাসাগরগুলো। মহীসোপান (Continental Shelf) থেকে বিশেষ করে এইডস, ক্যান্সার, ম্যালেরিয়াসহ বহু রোগের ঔষধের উপাদান পাওয়া যায়। ডায়মন্ড, ফসফেট, সালফার, লৌহ, হাইড্রোকার্বন, কার্বন এনার্জি রিসোর্সের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

অসংখ্য কারণে মানুষ সমুদ্রের উপর নির্ভর করে। তিন বিলিয়নের বেশি মানুষ সরাসরি সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। সমুদ্র থেকে মানুষ প্রতি বছর যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করে এবং এর উপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন করে তার অর্থনৈতিক মূল্য বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

কেবল তাই নয়, পুরো বিশ্বের বাণিজ্য কার্যক্রমের সিংহভাগ (৯০%+) সমুদ্রের মাধ্যমেই সমাপ্ত হয়। এত উপকার করার পরেও আমাদের হাত থেকে সমুদ্র নিস্তার পাচ্ছে না।

একজন সমুদ্র আইন বিষয়ের ছাত্র হিসেবে একটা বিনীত অনুরোধ রাখবো, আমাদের যাদের সমুদ্র নিয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই, তারা অন্তত সমুদ্রে বেড়াতে গেলে তাকে দূষিত না করি, জঞ্জাল মুক্ত রাখার চেষ্টা করি। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে নীল আকাশ দেখতে দেখতে প্রিয়সীর সাথে বাদাম আর চিপস খেয়ে খোসা, প্যাকেট, বোতলগুলো যেন সমুদ্রের দিকে ছুড়ে না ফেলি।

আর সমুদ্র নিয়ে কিংবা সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতি নিয়ে যাদের করার অনেক কিছু আছে, তাদের করণীয় নিয়ে কিছু কথা আগে একবার লিখেছি, ভবিষ্যতে আরও লিখবো। আর আমার গবেষণার বিষয়বস্তুও বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমার ব্লু ইকোনোমি নিয়ে। এই বিষয়ে সামনে আলাপ হবে।

এই বলে শেষ করি- এই পৃথিবীটা আমাদের আবাসভূমি, একে বাসযোগ্য রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। আর হ্যাঁ, পৃথিবীর ৭০ ভাগ ভালো থাকলেই বাকি ৩০ ভাগ সুন্দর থাকবে। আমরা সবাই মিলেই পারি আমাদের ঘরকে রক্ষা করতে।

Together We Can #ProtectOurHome. #WorldOceansDay #ProtectOurHome

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর