
মহারাষ্ট্রে বোর্ড পরীক্ষায় বোরখা নিষিদ্ধের প্রস্তাব; মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী নীতেশ রানে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে আসন্ন দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় বোরখা পরিধান নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও অনিয়মের আশঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী দীপক কে সরকারকে পাঠানো চিঠিতে দাবি করেন, মুখ ঢাকার পোশাক পরীক্ষার্থীর পরিচয় যাচাইয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, বোরখার আড়ালে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা নোট লুকিয়ে রাখার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রানের পরামর্শ, পরীক্ষাকেন্দ্রে মহিলা পুলিশ বা কর্মী দ্বারা পরিচয় যাচাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা ও অধিকারকর্মীরা এই প্রস্তাবকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের লঙ্ঘন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের বক্তব্য, বোরখা অনেক মুসলিম নারীর জন্য বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক, যা ভারতের সংবিধানের অধীনে সুরক্ষিত। সমালোচকরা বলছেন, পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন রোধ করতে কঠোর নজরদারি বা নারী কর্মী দ্বারা তল্লাশির মতো বিকল্প পথ থাকা সত্ত্বেও বোরখা নিষিদ্ধের প্রস্তাব ধর্মীয় বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়। এটিকে কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কের পুনরাবৃত্তি হিসেবেও দেখছেন অনেকে। ২০২২ সালে কর্ণাটকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করলে ব্যাপক বিক্ষোভের পর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেয়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে ঐক্যবদ্ধ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় পোশাক সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা জরুরি। তাদের মতে, বহুত্ববাদী সমাজে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও পরীক্ষার নিরাপত্তা—উভয়ই নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মুসলিম নারীদের দূরে রাখার চেষ্টা হিসেবে এই প্রস্তাবকে দেখছেন কেউ কেউ।
এই বিতর্কের মধ্যেই সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি পরীক্ষার নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উপর জোর দিচ্ছে। তাদের পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সমাধান (যেমন বায়োমেট্রিক যাচাই) বা নারী কর্মীবাহিনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধানের মতো বিকল্প পথ খতিয়ে দেখা উচিত, যাতে শিক্ষার অধিকার ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা—উভয়ই অক্ষুণ্ণ থাকে। এই ঘটনা ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে ধর্মীয় অভিব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতির মধ্যকার জটিল সম্পর্ককে আবারও সামনে এনেছে।