পারিবারিক বচসার জেরে নিজের স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করলো এক সিভিক ভলেন্টিয়ার। ঘটনার জেরে বিশাল চাঞ্চল্য মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাপুর এলাকায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করার পর নিজেই পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার বলে সূত্রের খবর। ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার ভালুকা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা জানা গেছে অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের নাম জগ জীবন রবিদাস এবং মৃতার নাম মিনু রবি দাস। ঘটনার জেরে পলাতক জগজীবনের বাবা দুখো রবিদাস।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,প্রায় বছর দুয়েক পূর্বে কাহালা লস্করপুর এলাকার ওই যুবতীর সাথে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয় জগ জীবন রবিদাসের। তাদের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে প্রায় বছর দেড়েকের একটি কন্যা সন্তান। তবে বিয়ের পর থেকেই চরম অশান্তি লেগেই থাকতো তাদের দাম্পত্য জীবনে। অশান্তির জেরেই শনিবার সকালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের স্ত্রী’র গলা কেটে খুন করে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার। অন্যদিকে মেয়ের বাড়ির লোকের অভিযোগ শ্বশুর দুখো রবি দাস প্রায়শই বৌমা মিনুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর দিতেন। এমনকি জবরদস্তি পর্যন্ত করতেন বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে মৃতার দিদি কাজল রবি দাস জানান আমার বোনের সঙ্গে প্রায়ই ওর শ্বশুর ঝামেলা করতো। জবরদস্তি করার চেষ্টা করত। এ ব্যাপারে আমার বোন প্রতিবাদ জানায়। জীবনের সঙ্গে প্রায় এই নিয়ে অশান্তি হতো। আমি বোনকে কয়েকমাস নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলাম। আজ সকাল থেকেই অশান্তি চলছিল। এইভাবে চরম পরিণতি হবে আমার বোনের ভাবতে পারেনি। আমি ছেলে ও ছেলের বাবার দুজনেরই কঠোর শাস্তি চাই।
জগ জীবন রবি দাসের কাকা শিবা রবি দাস জানান বিয়ের পর থেকেই নানা সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা লেগে থাকত। আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত। আজকে সকালে এরকম গন্ডগোল এর আওয়াজ শুনতে পাই। তার কিছুক্ষন পরেই দেখি আমার ভাইপো জীবন দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম ও বউকে মেরে দিয়েছে। ঘটনার পরে আমার দাদাকেও আমি আর দেখতে পাইনি। শুনতে পেলাম ও পালিয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আতাউর রহমান জানান জগ জীবন রবি দাস দীর্ঘদিন ধরে সিভিক ভলেন্টিয়ার কাজ করছে। আমি বাইরে ছিলাম তখন শুনতে পাই এলাকায় একটি খুন হয়েছে। এলাকায় এসে জানতে পারি ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার তার বউকে হত্যা করেছে। তারপর নিজে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাগির হোসেন জানান আমরা সকালে এসে জানতে পারি এখানে একটি খুন হয়েছে। তারপর শুনলাম এখানকারই বাসিন্দা সিভিক ভলেন্টিয়ার জীবন রবিদাস তার বউকে খুন করেছে। জীবনের বাবা পলাতক। জীবন ও তার স্ত্রীর মধ্যে মাঝে মাঝেই ঝামেলা লেগে থাকত। এ নিয়ে ওদের অনেক পারিবারিক বিবাদের রয়েছে। আমরা চাইছি আইনী পদক্ষেপ এ ওর শাস্তি হোক।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভালুকা ফাঁড়ি ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
এদিকে সকাল সকাল এই খুনের ঘটনা স্তম্ভিত করে দিয়েছে এলাকাবাসীকে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। অভিযুক্ত শ্বশুর এবং স্বামীর ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছে মেয়ের বাড়ির লোক। এলাকাবাসীরাও দাবি জানাচ্ছে উপযুক্ত শাস্তির। অভিযুক্ত পলাতক শ্বশুরের খোঁজ চলছে। সমগ্র ঘটনার তদন্তে নেমেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।