জালিয়াতকে ধরতে জাল পাতল কলকাতা পুলিশ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

images (7)

কলকাতা পুলিশের অভাবনীয় সাফল্য। জালিয়াতকে ধরতে জাল পাতল পুলিশই।

ঘটনার সূত্রপাত অগাস্ট মাসে। গড়িয়াহাট থানায় দায়ের করা একটি এফআইআর অনুযায়ী, গড়িয়াহাটের এক বিক্রেতার কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার গয়না অর্ডার করেন এক ক্রেতা, নাম অঙ্গদ মেহতা। গয়না ডেলিভারি দিতে হবে হিন্দুস্তান পার্কের এক গেস্ট হাউজে, ক্যাশ অন ডেলিভারি হবে। সেইমতো গয়না নিয়ে গেস্ট হাউজে পৌঁছন দোকানের দুই কর্মচারী। তাঁদের কাছ থেকে গয়না ডেলিভারি নেন ক্রেতা, এবং স্ত্রীকে দেখিয়ে আনছেন বলে বেমালুম উধাও হয়ে যান। ফোন বন্ধ, গেস্ট হাউজের কাছে একটিমাত্র ছবি, এছাড়া আর কোনও সূত্র নেই।

তদন্তে নেমে পুলিশ বুঝতে পারে, একে ধরতে হলে ফাঁদ পাততে হবে। সুতরাং ফেসবুকে পায়েল শর্মা নামে নকল প্রোফাইল খুলে তথাকথিত ‘অঙ্গদ মেহতা’-র সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন সাব-ইন্সপেক্টর দিশা মুখার্জি।

ততদিনে অন্ধ্র প্রদেশে পালিয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পায়েল শর্মার সঙ্গে দেখা করতে কলকাতায় আসতে রাজী হয়ে যায় মেহতা। গত ৪ সেপ্টেম্বর মিলেনিয়াম পার্কে তার অপেক্ষায় ওত পেতে থাকেন দিশা সমেত আমাদের টিমের অন্যান্য সদস্যরা। এবং ‘বান্ধবীর’ সঙ্গে দেখা করতে এসে সোজা পুলিশ ভ্যানে চালান হয়ে যায় অভিযুক্ত।

কে এই মেহতা? আসল নাম কী? জিজ্ঞাসাবাদের পর সে জানায়, ২০১৮ সালে হায়দ্রাবাদের চঞ্চলগুড়া সংশোধনাগারে তিন বছরের জেল হয় তার। তার আগে আন্দামানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারেও কিছুদিন কারাবাসের সৌভাগ্য হয়। কিন্তু অঙ্গদ মেহতা নামে নয়। তদন্ত চলাকালীন বিধাননগর ইস্ট থানার সাহায্যে সল্ট লেকের একটি রেস্ট হাউজে হানা দেয় পুলিশ, যেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় হর্ষ ওবেরয় এবং অঙ্গদ মেহতার নামে দুটি ভোটার আইডি কার্ড ও সার্থক রাও বাবরস-এর নামে একটি আধার কার্ড, এবং প্রতিটি পরিচয়পত্রেই একই ছবি, যা কিনা ধৃত ব্যক্তির সঙ্গে মিলে যায়। অর্থাৎ যিনি সার্থক রাও, তিনিই হর্ষ ওবেরয়, তিনিই অঙ্গদ মেহতা। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি পরিচয়পত্রই ভুয়ো বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়াও পুলিশ খুঁজে পায়, পোর্ট ব্লেয়ারের ডেপুটি জেলার-এর জারি করা সেখানকার বাসিন্দা সার্থক রাও বাবরস ওরফে হর্ষ ওবেরয়ের নামে একটি ‘প্রিজনার অ্যাডমিশন কার্ড’।

ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়েই কলকাতায় অনলাইনে গয়না অর্ডার করে বাবরস। দিল্লি, আহমেদাবাদ, লখনউয়ের মতো শহরেও তার নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে থেকে বিল না মিটিয়ে চুপচাপ সরে পড়া তার আরও এক কীর্তি, যার ফলে তার নাম উঠে এসেছে দেশের প্রথম সারির অপরাধীদের তালিকায়। এইসব হোটেলে তার হাতিয়ার হতো ভুয়ো প্যান কার্ড। আপাতত সার্থক, হর্ষ ওরফে অঙ্গদ  পুলিশের জালে। তদন্ত চলছে।

তথ্যসূত্র: কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজ

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর