গোদী মিডিয়ার প্রচারিত পাকিস্তানি কূটনীতিকের বালাকোট হামলায় ৩০০ জনের মৃত্যু স্বীকারের খবর ভুয়া, পিছনে সেই ফেক ভিডিও!

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

doctored

সাইফুল্লা লস্কর, এনবিটিভি নিউজ : “ইন্ডিয়া নে ইন্টারন্যাশনাল বাউন্ডারি ক্রস কারকে যো কিয়া ও এক অ্যাক্ট অফ ওয়ার থা, জিসমে কাম সে কাম ৩০০ লোগো কো উনহনে মারনা থা।” এটাই বলেছিলেন প্রাক্তন পাকিস্তানি কূটনীতিক জাফর হিলালি। এর অর্থ, “ভারত আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে যা করেছে তা একটা যুদ্ধের আচরণ যেটাতে তারা অন্তত ৩০০ জনকে মারতে চেয়েছিল।” পাকিস্তানের হাম টিভিতে থেকে শুরু হওয়া “এজেন্ডা পাকিস্তান” নামক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। কিন্তু এটাই ফেক ভিডিও তৈরিতে সিদ্ধহস্ত গেরুয়া মিডিয়ার কুশলীরা এডিট করে বানিয়ে দিয়েছে, “ইন্ডিয়া নে ইন্টারন্যাশনাল বাউন্ডারি ক্রস কারকে যো কিয়া ও এক অ্যাক্ট অফ ওয়ার থা, জিসমে কাম সে কাম ৩০০ লোগো কো উনহনে মারা থা” এই ভুয়া খবরটি প্রচার করে রিপাবলিক টিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া,ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস নাউ, ডেক্যান হেরাল্ড, ইন্ডিয়া টিভি, ইন্ডিয়া টুডে, জি নিউজ, এবিপি নিউজ সহ ভারতের জাতীয় এবং অঞ্চলিক সমস্ত প্রধান ও অপ্রধান সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু এই ভুয়া খবরটির অনুসন্ধান করে তা ভুয়া খবর হওয়ার সমস্ত প্রমাণ পেশ করেছে অল্ট নিউজ।

এই ভুয়া খবরের হোতা মোদি ঘনিষ্ট অর্ণব গোস্বামী পরিচালিত রিপাবলিক টিভি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বালাকোট হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিহতের কোনো সংখ্যা না বললেও মোদি সরকারকে রাজনৈতিক সুবিধা প্রদান করতে বদ্ধপরিকর এক শ্রেণীর মিডিয়া ভুয়া সংখ্যা ৩০০ প্রচার করে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পুলুয়ামাতে সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ২৬ শে ফেরুয়ারিতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুণখোয়া প্রদেশের বালাকোট অঞ্চলে রাতের অন্ধকারে বোমা হামলা চালায় ভারতের বিমানবাহিনী। কিন্তু সেই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ভারতীয় সেনাবাহিনী। এমনকি তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সিতারামন ওই হামলায় নিহতের কোনো সংখ্যা জানা নেই বলে মন্তব্য করেন। তবে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য মোদি এবং তার দলের নেতারা এই হামলায় ৩০০ জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করতে থাকে। সঙ্গ দেয় বিজেপি ঘনিষ্ট প্রচার মাধ্যম। তবে পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত সংবাদ মাধ্যম ভারতের মিডিয়ার ৩০০ জন নিহত হওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়ে ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে প্রচার করে। তখন বিরোধী নেতারাও সরকারের কাছে প্রমাণ পেশ করার দাবি জানায়। সেই থেকেই ভারতের মিডিয়াগুলো প্রতি ক্ষেত্রেই নিজেদের দাবির সপক্ষে সামান্যতম প্রমাণ পেলেও প্রচার করতে থাকে পুরো উদ্যমে। প্রমাণ সঠিক না হলে ও নিজেদের প্রচেষ্টায় ভিডিও এডিট করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার বৃথা চেষ্টা চালানো হয়েছে বহু বার। এটি তার মধ্যে নবতম।

 

এই ভুয়া খবরটির জন্য ওই প্রাক্তন কূটনৈতিক নিজে টুইটারে ভারতীয় মিডিয়ার এই অপপ্রচারের সমালোচনা করে বলেছেন, “আমার হাম টিভির সাক্ষাৎকারের ভিডিও যে ব্যতিক্রমী সীমা পর্যন্ত গিয়ে ভারত সরকার এডিট করেছে তা প্রমাণ করে তারা যা করতে পারেনি সেটা প্রমাণে কতটা মরিয়া তারা অর্থাৎ মোদির মিথ্যা এবং তার ভ্রান্ত দাবি প্রমাণ করে তাকে কৃতিত্ব দিতে ।”

ওই অনুষ্ঠানে হিলালী প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেন বিকাল ৪:১৭ তে এবং বহুল আলোচিত এই মন্তব্যটি করেন ৫:১৩ মিনিটে। তিনি ভারত পাকিস্তানিদের হত্যা করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি উল্লখ করে ৫:২৯ মিনিটে বলেন, ভারত একটা ফুটবল মাঠে বোমা ফেলে গিয়েছে, কিন্তু কোনো কোনো পাকিস্তানি নিহত হয়নি। ৪:৩০ মিনিটে তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে মাদ্রাসায় ৩০০ শিশু পড়ছেন সেখানে বোমা ফেলে তাদের হত্যা করা কিন্তু তারা তাতে সফল না হওয়ায় ফুটবল মাঠে বোমা ফেলে দিয়েছে। কিন্তু তার এই মন্তব্য পাস কাটিয়ে মোদিকে বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা প্রদান করতে বদ্ধপরিকর এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যমগুলি ছোট্ট একটি এডিট ভিডিও প্রকাশ করে। যার ০:৭ – ০:০৯ সেকেন্ডের মধ্যে ওই পাকিস্তানি প্রাক্তন কূটনীতিকের বলা “মারনা” কথাটিকে এডিট করে “মারা” তে পরিণত করা হয়েছে। উল্লেখ্য হামলার পরবর্তী সময়ে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিরোধী দলের বহু নেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাই ভোটের আগে এখন তাদেরকে মিথ্যা সাজাতে পারলে লাভ ভুয়া দাবি পেশ করা মোদি এবং বিজেপিরই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর