ISF ধর্মীয় মৌলবাদী একটি সংগঠন!? দেখা যাক এর পিছনের সত্যতা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

ra77ble_pirzada-abbas-siddiqui-isf-pti_295x200_21_January_21

সাইফুল্লা লস্কর : ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা এবং সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আইএসএফ বা অল ইন্ডিয়া সেকুলার ফ্রন্ট গঠনের পরবর্তী প্রেক্ষাপট বাম কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সমন্বয় এরপর তাদের বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপি এমনকি কংগ্রেসের ভিতর থেকে বিভিন্ন আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে যে তারা তাদের এতদিন এর নীতি-আদর্শ কে বিসর্জন দিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক লড়াইকে সম্পৃক্ত করে ফেলেছেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে প্রিন্ট থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে। প্রশ্ন তুলেছেন বহু বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকও। তবে আজ আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে আই এস এফ এর গঠন আলোচনা করব এবং এখনো পর্যন্ত তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঘটনাবলী পর্যালোচনা করে দেখার চেষ্টা করব আইএসএফ আদতেই কতটা সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সংগঠন।

প্রথমত আইএসএল এর গঠন প্রক্রিয়া দেখে নেওয়া যাক। আইএসএফ ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নাম থেকে মনে হয় যে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠন যেটা শিব সেনা বা মীমের মতো নামেই একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে না। সংগঠনের সভাপতি শিমুল সোরেন, যিনি কোন মুসলিম নন বরং আদিবাসী সমাজের এক প্রতিনিধি। পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক সংগঠনেরটির সম্পাদক পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর ভাই নওশাদ সিদ্দিকী।

আইএসএফ সংগঠনটি মূলগতভাবে একটি সংগঠনের নাম নয়। এটির নাম যেহেতু ফ্রন্ট তাই এর মধ্যে বহু সংগঠন একত্রিত হয়ে একটি ফ্রন্ট জন্ম দিয়েছে। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন সংগঠন মিলে আইএসএফ এর উৎপত্তি :

১. রাষ্ট্রীয় দলিত একতা মঞ্চ
২. অখিল ভারতীয় বিকাশ পরিষদ
৩. পশ্চিমবঙ্গ বাউরি জাতী বিকাশ সংঘ
৪. ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল
৫. আদিবাসী কুড়মি সমাজ
৬. জঙ্গলমহল মূলনিবাসী একতা মঞ্চ
৭. ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজ
৮. আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ
৯. SC-ST-OBC অধিকার রক্ষা মঞ্চ

উপরোল্লেখিত সংগঠন গুলির নাম থেকে বোঝা যায় এর প্রত্যেকটি সাংগঠন মূলত অমুসলিম ঘরানার। যেহেতু এতগুলো অমুসলিম ঘরানার সংগঠন আইএসএফ এর ছত্রছায়ায় একত্রিত হয়েছে, তাই কখনোই এত সহজে উপসংহারে আসা যায়না যে আইএসএফ একটি মুসলিমদের ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন। যদি তাই হত তাহলে কেন এত গুলি অমুসলিম পিছিয়ে পড়া দলিত আদিবাসী এবং অমুসলিম সংগঠন আই এস এফ এর সঙ্গে যুক্ত হলো, এই নিয়ে উঠবে বিরাট প্রশ্ন।

আইএসএফ গঠনের পূর্ব থেকেই আব্বাস সিদ্দিকি আম্ফান ঝড়, বুলবুল, ফেনী, করোনার লাভডাউন সহ বিভিন্ন সময়ে শুধুমাত্র মুসলিমদের মাঝে নয় বরং দলিত আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী এবং সাহায্য পাঠিয়েছেন তার ব্যক্তিগত এবং ক্ষুদ্র সাংগঠনিক উদ্যোগে। এক্ষেত্রেও তিনি সবার প্রশংসার পাত্র ছিলেন। এটা সত্য তার জন্মস্থান ফুরফুরা শরীফে নলেজ সিটি এবং রেল তৈরি সহ দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি মমতা সরকার বাস্তবায়ন না করায় সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি রাজনীতিতে আগমন এর চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু মানব সেবার ক্ষেত্রে কখনো শুধুমাত্র মুসলিমদেরকে প্রাধান্য দিয়ে কারো সঙ্গে বৈষম্য করেছেন বলে শোনা যায় না। আবার বিধানসভা নির্বাচনের পূর্ব প্রেক্ষাপটে আইএসএফ যেহেতু বাম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে এক্ষেত্রে ও তাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির একটি প্রমাণ সুস্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায়। কারণ ভারতবর্ষে বাম দলগুলো এখনো পর্যন্ত ধর্মীয় গোঁড়ামি সম্পন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে হাত মেলায়নি। তাই যেহেতু ধর্মীয় মেরুকরণ এর সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শে বিশ্বাসী সিপিএম সিপিআইএম ব্লক এর মত বাম দলগুলো এই আই এস এফ এর সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়েছেন তাই আইএসএফ কে সেকুলার ভাবমূর্তি দেওয়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর