হ্যাপি নিউ ইয়ার

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

~মুদাসসির নিয়াজ

রাত পেরোলেই আলবিদা ২০২২, স্বাগত ২০২৩ সাল। সময়ের আবর্তে ইদানীংকালে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঘটা করে বর্ণময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বর্ষবরণ উদযাপন হয়ে থাকে। ইসলামে বর্ষবরণের কোনো ঐতিহ্য, রেওয়াজ বা অনুমোদন নেই। হোক তা ইংরেজি, বাংলা কিংবা আরবি, ফারসি নববর্ষ।

নির্ঘুম রজনী পার করার মধ্য দিয়ে মহা আড়ম্বরে নিউইয়ার বা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যার কোনো ভিত্তি বা যুক্তি নেই। অথচ নির্দিষ্ট সময় ও নতুন সূর্যকে আহ্বান করতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর বা ৩০ চৈত্র রাত ১২ টা ০১ মিনিটে নববর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে বর্ণনাতীত আয়োজন, আমোদ-স্ফূর্তিসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব ও মোচ্ছব শুরু হয়। রাতভোর এই উত্তাল ও উদ্দাম কোলাহলের ফলশ্রুতিতে ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রীতিকর ঘটনাও। 

অথচ উত্তেজনামূলক বা অপচয়মূলক কোনো কাজ কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। তবুও আমরা ধর্মীয় গাইড লাইনের বাইরে গিয়ে মাঝেমধ্যে হলেও মন চাহি জিন্দেগীর গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিই। সাময়িক আনন্দ, তাৎক্ষণিক ভালোলাগা কিছুটা অক্সিজেন পায়।

রাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টিকে আনন্দ উৎসবের লক্ষ্যে টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া ক্ষুধা-পিপাসা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়, গভীর রাতের সে সময়টির ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে আহ্বানকারীকে, অসুস্থকে, ক্ষমাপ্রার্থীকে যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দেবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)

সুতরাং বর্ষবরণে ইসলামি সংস্কৃতি হওয়া উচিত ছিল, রাতের অন্ধকারে বিদায় নেওয়া বছরের সকল অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে আহাজারি করা এবং আগামী দিনগুলোতে সুন্দর, সৎ ও ন্যায় ইনসাফভিত্তিক জীবনযাপনের দৃপ্ত শপথে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।

কিন্তু আজকের মুসলিম আক্বিদা বিশ্বাসের মানুষ ভিন্ন সংস্কৃতি তথা অপসংস্কৃতির রঙিন হাতছানিকে উপেক্ষা না করে বরং এসবের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের দ্বীন ও ঈমানকে কুলষিত করছে।

 তাই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মানুষ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ পেয়ে যায়, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের জন্য কামিয়াব, কল্যাণ ও মুক্তি চাইলে আল্লাহ তাকে দান করেন। এই নির্ধারিত সময়টি প্রত্যেক রাতের গর্ভেই লুকিয়ে রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)

অনুষ্ঠান যদি করতেই হয়, তবে আল্লাহর দরবারে আহাজারি করে বিগত জীবনের ভুলত্রুটির জন্য মাফ চেয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করাই শ্রেয়।

 অন্যথায় নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মধ্য দিয়ে লাগামহীন মস্তি মউজের দেদার আয়োজনের ফোয়ারায় মন ভেজানো হারাম। সুতরাং মুসলিম মাত্রই এ থেকে বিরত থাকা ঈমানী দায়িত্ব।

আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে বলছেন: আল্লাহ জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে সুন্দর আমল করতে পারে। (সুরা আল মুলক : আয়াত ২)। 

পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন: হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সদাসত্য কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সুরা আল আহযাব: আয়াত ৭০-৭১)

সুতরাং আসুন, আমরা বিগত জীবনের ভুল সংশোধনের মাধ্যমে নিজেদের শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে নিজেদের আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। নেক আমলের ওসিলায় আল্লাহ আমাদের ইহকালে কামিয়াব ও পরকালে নাজাত দিন – এই দোওয়া করি। বর্তমানে আমরা ফিতনার অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছি, সেখানে আলোকবর্তিকা হোক কুরআন ও হাদীস।

অক্টোপাশের মতো চারপাশ থেকে আমাদেরকে ঘিরে থাকা পাহাড়প্রমাণ অজ্ঞতা, মান্ধাতা আমলের কুসংস্কার, ছোটবড় শিরক-বিদআতের অমানিশায় সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। পশ্চিমাদের থেকে আমদানি করা অশুভ সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করে আমরা স্বতন্ত্রতাও স্বকীয়তা বজায় রাখতে তৎপর হই। আমরা যেন অপসংস্কৃতির ভিড়ে নিজেদেরকে হারিয়ে না ফেলি। আমরা যেন ইসলামের মর্যাদা ও মহিমার ধারক বাহক হয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে, আমাদের পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি ও সহনাগরিদেরকে মনুষ্যত্বের মন্বন্তর, মানবিক বিপর্যয়, নৈতিক ও মূল্যবোধের সংকট থেকে হেফাজত করেন। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করেন। আমিন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর