~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি
বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবরকে প্রশ্ন করেছিলাম ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিস্ট হতে গেলে কি করতে হয়?
ফুলটস বল মাঠের বার করা ব্যাটারের ভঙ্গিতে তাকিয়ে জবাব, জার্নালিজম ২৪ ঘণ্টার কাজ। ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিজম আরও টাফ, জেদ আর খাটুনি দরকার। ভাগলপুরের ক্রিমিনালদের চোখে অ্যাসিড দিয়ে অন্ধ করার নিউজ ব্রেক করে আকবর সম্পাদিত ইংলিশ সাপ্তাহিক তখন দেশের সংবাদের শিরোনামে। পরে সেই ঘটনা নিয়ে গঙ্গাজল ফিল্ম হয়।
২৪ ঘণ্টার কাজ শুনে উৎসাহে ভাটা পড়েছিলো। আমার দৌড় ওখানেই শেষ, কখনও রহস্য আবিষ্কার করতে যাইনি। এখন সাংবাদিকতা দেখে কষ্ট হয়। মোবাইল বাগিয়ে সবাই সাংবাদিক, কিছু না জেনেও সবাই সব বিষয়ে এক্সপার্ট।
শাহরুখ দীপিকার পাঠান এখন trending topic. টিভি নিউজে একই বিষয়ের চর্বিত চর্বণ। গোদি বা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সবাই কম বেশি জানেন ঘটনাটি। চলুন একটু অন্য ভাবে বিষযটি ভেবে দেখি! দেশ জুড়ে জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া, তেল গ্যাস খাবার জিনিসের দাম আগুন। লোকে আধপেটা খেয়ে মরে বেঁচে আছে। উন্নয়নের নামে গরিব উচ্ছেদ চলছে। ৩৭% ভোট পাওয়া দলটিকে ছেড়ে যাচ্ছে জোট সঙ্গীরা। হিন্দু মুসলিম আর লোকে খাচ্ছেনা। তাই এসব জ্বলন্ত সমস্যা থেকে লোকের মন ঘোরাতে টার্গেট পাঠান। আরোও স্পষ্ট করে বললে টার্গেট শাহরুখ খান। অপারেশন লোটাসের পর বিখ্যাত অপারেশন শাহরুখ। শাহরুখের অপরাধের লিস্ট লম্বা। একে নাম শাহরুখ তারপর বেচারাম প্রধানের চেয়েও জনপ্রিয়। এখানেই শেষ নয় আরোও দোষ আছে। বেচারাম প্রধানের নম্বর ওয়ান প্রতিপক্ষ পাপ্পু। শত্রুর সঙ্গে মেলামেশা! নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব আছে, না হলে পাপ্পু বোনকে নিয়ে শাহরুখের টিম নাইট রাইডার্সের খেলা দেখতে কলকাতায় আসে! জো হুজুরি করলেই মিটে যায়। কিন্তু এ হবার নয়।
জাতে পাঠান তাই শিরদাঁড়া সোজা। সোজা শিরদাঁড়া বাঁকানোর চেষ্টা হয়েছিল, ঝি কে মেরে বৌ কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ছেলে আরিয়ানকে ড্রাগ নেয়ার মিথ্যে অভিযোগে জেলে ভরেও সারেন্ডার করানো যায়নি রিল নয় রিয়াল লাইফের পাঠান শাহরুখ খান কে। তাই সোজা রাস্তায় না গিয়ে বাঁকা পথের আশ্রয়। ফিল্মে গানের দৃশ্যে নায়িকা দীপিকা গেরুয়া রং এর বিকিনি পরেছে তাই নিয়ে গেলো গেলো রব। হিজ মাস্টার্স ভয়েস গদি মিডিয়া লেজ নেড়ে গোঁজামিল খবর দিচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় গোটা গোবর ভক্তরা আইন কানুনের গুষ্ঠির ষষ্ঠী পূজা করছে।
কেউ শাহরুখ কে জীবন্ত জ্বালাতে চাইইছে কেউ বা মেরে মুখ ভাঙতে চাইছে। আর রিংয়ের বাইরে বসে লেজে গোবর নেতারা তারিয়ে তারিয়ে ঘৃণার আগুনে হাত সেঁকছে। এতেও টাইট দেওয়া যাচ্ছেনা। বরং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে গোটা দুনিয়ায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে শাহরুখের ছায়া। যে ছায়ায় ঢাকা পড়ছে বেচারাম প্রধানের মুখ। শাহরুখ ইন্টারন্যাশনাল আইকন। দেশ তো বটেই বিদেশেও আদৃত এই নায়ক।
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের সময় পাঠান ফিল্মের প্রমোশন, গোটা বিশ্বের আন্তর্জাতিক রেটিংয়ে দেশের সেরা দশ ফিল্মের মধ্যে নাম্বারওয়ান। টাইট দিতে গিয়ে একদম লেজে গোবরে ভক্ত আর দু টাকার ট্রোলাররা। উপায় না দেখে সেন্সর করা ফিল্ম আবার সেন্সর করতে চায় প্রসূণ যোশীর সেন্সর বোর্ড। গোবর সমর্থক ভরা সেন্সর বোর্ডই ফিল্মটি পাস করেছিল, এখন কেন উল্টো সুর? রিলিজ ডেট ঘোষনার পর আবার সেন্সর!
রং নিয়ে আপত্তি উঠলে কানাডা কুমার, মনোজ তেওয়ারি আর সংসদ রবি কিষণ, কঙ্গনা এমনকি একদা সাস বহু অভিনেত্রী মন্ত্রীর গেরুয়া বিকিনিতে আপত্তি ওঠেনি কেনো? একই যাত্রায় পৃথক ফল! এটা সিলেকটিভ বায়াস ছাড়া কিছু নয়।
যেখানে নোট বন্দিতে আরবিআই গভর্নরের সই করা প্রমিসারি নোট বাতিল হয় সেখানে সবই সম্ভব। কোর্টের ধমক খেয়ে গুণধর মন্ত্রী মশাই হুমকি ছেড়ে মাফ চেয়েছে। আর চোয়াল ভাঙ্গার নিদান হাকা বীরাঙ্গনা সাদভি মুখ লুকিয়েছে, শাহরুখকে জান্ত পোড়ানোর দাবি তোলা ঢোঙ্গি বাবা কোন গর্তে সেঁধিয়েছে কে জানে। লেখা শেষ করার আগে জানাই বিদেশে অ্যাডভান্স বুকিংয়ের খবর পর পর শো র টিকিট শেষ। গুজরাটে PVR থিয়েটারে জোর করে শাহরুখের ছবি ডিসপ্লে থেকে খুলে নেওয়া হয়ে ছিল, শাহরুখ ফ্যানরা পোস্টার আবার লাগিয়েছে। বেগতিক দেখে প্রতিবাদী বীরেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। ইকবাল এর শের দিয়ে শেষ করি “মুদ্দই লাখ বুরা চাহে ত ক্যা হোতা হ্যায়, ওহী হোতা হ্যায় জো মনজুরে খুদা হোতা হ্যায়।”