কোরবানি ঈদের কথকতা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

wp2650762

উৎসর্গের উৎসব ইদুজ্জোহা। ইদুজ্জোহাকে কোরবানিও বলা হয়ে থাকে। আরবি কুরব শব্দ থেকে কোরবানির উৎপত্তি। যাকে বাংলা করলে দাঁড়ায় নৈকট্য। ঈদ-উল-ফিতরের পর এবার ঈদ-অল-আদাহ অর্থাৎ কোরবানি ঈদের পালা। কোথাও কোথাও একে বকরি ঈদও বলে। মুসলিম লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুল-হিজ্জা মাসের দশম দিনে পালিত হয় Eid al Adha অর্থাৎ কোরবানি ঈদ। চলতি বছরে বকরি ঈদ পালিত হবে জুলাই মাসে।

আক্ষরিক অর্থ

ঈদ-অল-আজহা, এটা একটা আরবি শব্দ। আজহার অর্থ কোরবানি মানে উৎসর্গ করা। রমজান মাস শেষ হবার মোটামুটি ৭০ দিন পরে ও ইসলামিক ক্যালেন্ডার জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানির ঈদ বা বকরি-ঈদ পালন করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে সকালে নামাজ পড়ার পড়ে মুসলিমরা পশু কোরবানি দেন। এই ঈদের নাম বকরি ঈদ হওয়ার জন্য দুটি কারণ আছে। প্রথমটি হল এই ঈদ কোরবানির ঈদ বলে এই উৎসবে কিছু না কিছু কিছু আল্লা-কে উৎসর্গ করে কোরবান করতে হয়। আর এক সময় অবিভক্ত বাংলায় বকরি অর্থাৎ ছাগল ছাড়া অন্য কোনও কোরবানির পশু তেমন একটা পাওয়া যেত না, সেই থেকে ছাগল দিয়ে কোরবানি দেওয়ার কারণেই ঈদুল আজহা বা ঈদ-আল-আজহার নাম হয় বকরি ঈদ।

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী Dhul Qadah-এর ২৯ তম দিন অর্থাৎ ১১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে চাঁদ দেখা। ১০ জুলাই নতুন চাঁদের ফালি আকাশে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া গিয়েছে ভারতে Dhu al-Hijjah-র দশম দিনে অর্থাৎ ২১ জুলাই পালিত হবে EiD al-Adha অর্থাত বকরি ঈদ বা কোরবানি ঈদ।

বকরি ঈদ পালনের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় মুসলিম ধর্মের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হজযাত্রা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর বাতিল হয়েছে বিদেশীদের জন্য হজযাত্রা। তবে ভারতেও উৎসব পালনের ক্ষেত্রে কোভিড বিধি পালনে জোর দেওয়া হচ্ছে। সূর্যোদয়ের পর দু রাকাত কোরবানির নামাজ পড়ে তবেই কোরবানি করা যায়। নামাজ না পড়ে কখনই কোরবানি করা যায় না।

 

কেন হয় কোরবানি ?

 

মুসলমান সমাজে কোরবানির ঐতিহ্য পালিত হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। এই যে ঐতিহ্য তা প্রতিষ্ঠিত হয় হজরত ইব্রাহিমের আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে। হজরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তাঁকে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। স্বপ্নে পাওয়া সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হজরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পুত্র হজরত ইসমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। আল্লাহর পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। তাঁরই নির্দেশে ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানি দেওয়া হয় একটি দুম্বাকে। হজরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ত্যাগের আদর্শকে স্মরণ করেই বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা কোরবানি করে থাকেন। শুধু কোরবানির ক্ষেত্রেই নয়, হজব্রতের নানা আচারের মধ্য দিয়েও তাঁরা হজরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্মরণ করেন। কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলিমরা জানিয়ে দেন, আল্লাহর জন্য তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ করতেও প্রস্তুত। তাই ইদুজ্জোহা একদিকে ত্যাগের, অন্যদিকে ঐতিহ্যের মহিমায় ভাস্বর।

শরিয়তের ভাষায় আল্লার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের প্রিয় বস্তুটিকে ত্যাগ করার নামই কোরবানি। তাই ইদুজ্জোহার উদ্দেশ্য হল পশু জবাই। মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য নানাবিধ পশু আল্লার উদ্দেশে ইবাদত দেওয়া। এই ইবাদত ইসলামে তিন ভাবে করা যায়। একটি শারীরিক, অন্যটি আর্থিক এবং তৃতীয়টি হল আর্থিক ও শারীরিক। যেমন নামাজ ও রোজা হল শারীরিক ইবাদত। জাকাত ও কোরবানি হল আর্থিক ইবাদত। তৃতীয়টি হল আর্থিক ও শারীরিক, যেমন হজব্রত পালন করা। অর্থনৈতিক দিক থেকে যাঁরা ক্ষমতাশালী তাঁদের নামাজ, আর্থিক, শারীরিক, জাকাত, কোরবানি এবং হজ–‌সহ সব ইবাদত করতে হয়। অন্যদিকে দরিদ্র মানুষদের জন্যও শরিয়তে নিদান আছে। সেখানে বলা হয়েছে যাঁরা ব্যয়বহুল হজে যেতে পারবেন না তাঁরা কোরবানি দিতে পারবেন। সেইজন্যই হজরত মুহাম্মদ কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, উপচার যদি শুদ্ধ না হয় তাহলে আল্লাহতায়ালা তা গ্রহণ করেন না। এখানে শরিয়তের একটা অংশ তুলে ধরা যেতে পারে। মানব সভ্যতার শুরুতে যখন কোরবানির বিধান চালু হয় তখন থেকেই এ ধারা চলে আসছে। কোরবানির সূচনা হয় হজরত আদমের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের কোরবানির মাধ্যমে। তাঁদের একজনের কোরবানি আল্লাহ গ্রহণ করেছিলেন, অন্যজনের করেননি। এই কোরবানি গ্রহণ না করার পিছনে ছিল সেই কোরবানি যথেষ্ট শুদ্ধ ছিল না। বর্তমান সমাজে কোরবানি নিয়ে চলে নানা প্রতিযোগিতা। অনেকে তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য প্রভূত অর্থে পশু কিনে প্রতিপত্তি দেখাতে ও সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শন করতে চান। কিন্তু শুধু প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর উদ্দেশ্যে কিছু লাভ করা যায় না। কোরবানির মধ্যে যদি লোভ থাকে তাহলে সেই কোরবানিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না অর্থাৎ সামাজিক সম্মান বজায় রাখার জন্য কোরবানি করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। প্রতিবেশীকে অভুক্ত, নিরন্ন রেখে কোনও কোরবানি সফলতা পায় না। এতে আল্লাহ অখুশিই হন। মনে রাখতে হবে ইদ সবার জন্য।

 

।। বিশ্বের প্রধান ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব ঈদ ।।

 

২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যা গরিষ্ঠতার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় মুসলিম। পৃথিবীতে মোট মুসলিম জনসংখ্যা ১.৯০৭ বিলিয়ন। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৪.৯ শতাংশ। তাই বলাই যায়, পৃথিবীর সকল উৎসবের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ বিশ্বের জনজাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব। আর যদি ঈদকে বাঙালীদেরও সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব বলা হয় তাহলেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে বাঙালী মুসলিমের সংখ্যা প্রায় 14 কোটি। তাই এই 14 কোটি বাঙালীর উৎসব ঈদ যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব তা অনস্বীকার্য।

 

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর