তমাল ঠিক না দেশের মিডিয়া ও আঁটিশেল ঠিক?

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

3704

~আব্দুল মোমেন

গত ১৫ আগষ্ট আফগানিস্তানের নির্বাচিত শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করে তালিবানরা দেশ দেখল করে তারাই শাসক হয়ে উঠেছে। এই তালিবানরা দেশের শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণে সে দেশে  কর্মরত থাকা ভিন্ন দেশীয় নাগরিকদের দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে।  অন্তত আমাদের দেশের মিডিয়ায় সম্প্রচারিত তথ্য তেমনটিই বলে। তালিবানরা নাকি বর্বর তারা ভয়ঙ্কর নিশংস নিষ্ঠুর। তাই দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক। তালিবানরা নারীর অধিকার ও ইজ্জত লুটেরা। আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় এসেছে মানেই ওই দেশের নারীরা পণ্য হবে। এমন নানান তথ্য, গল্প, নমুনা ইত্যাদি মিডিয়াতে অষ্টপ্রহর সম্প্রচারিত হচ্ছে। সে দেশ থেকে মানুষ পালিয়ে যেতে এতটাই উদগ্রীব যে প্লেনের ভিতরে সিট না থাকায় প্লেনের ডানায় ঝুলে ঝুলে পালিয়ে যাচ্ছে। এমন ভয়ঙ্কর চিত্র ভিডিওর মাধ্যমে আমাদের দেশের মিডিয়া তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিটা মুহূর্ত নতুন নতুন থ্রিলার এপিশোড নিয়ে হাজির হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। এমন থ্রিলার এপিশোডের মাঝে মিডিয়ার ছন্দপতন ঘটিয়ে দিলেন বঙ্গ তনয়  তমাল ভট্টাচার্য। তিনি দেশে ফিরে মিডিয়ার মুখোমুখি প্রশ্নের জবাবে তালিবান, আফগানিস্তান ও অভ্যুত্থান সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বললেন তা এদেশের মিডিয়াতে এতদিন প্রচারিত গল্পের সম্পুর্ণ বিপরীত। তমাল বললেন “তালিবানরা সরকারের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর বা হত বদল করে নিল অথচ কাবুলে একটাও ফায়ার হয়নি।” এছাড়াও তালিবানদের প্রশংসায় বিভিন্ন ধরণের গল্প শোনালেন। তাতে কিন্তু এদেশের মিডিয়া ও আইটি সেলের কারিকীর্তি ফাঁস হয়ে যায়। তমাল ভট্টাচার্যকে নিয়ে একাধিক মিডিয়া টকশো করে। তাকে যত বেশি ঘাঁটানো হচ্ছে তালিবানদের ইতিবাচক দিক ততই প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। তিনি কিন্তু তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে একটা তথ্য বারে বারে বলতে চেষ্টা করেছেন যে তালিবানরা এতটাই সতর্ক তাদের যাতে বদনাম না হয়ে যায়। তিনি বলেন তালিবানরা আমাদের উদ্দেশ্য বারে বারে বলতে থাকেন আপনারা আমাদের মেহমান, আপনাদের হেফাজত ও খিদমত করা আমাদের কর্তব্য। আপনারা সতর্ক থাকবেন আমাদের শত্রুরা আমাদের বদনাম করার জন্যে কোনও কিছু ঘটাতে পারে। ওখানে তালিবদের বিরোধী বেশ কিছু গোষ্ঠী আছে। বিশেষত আইসিস। আইসিসরা তালিবানদের সবথেকে বড় শত্রু। এই যে আইসিসরা তালিবানদের বড় শত্রু এই কথাটা তিনি একাধিক বার একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

এখন তমাল ভট্টাচার্য দেশে ফিরে তালিবানদের এত প্রশংসা করছেন এটা নিয়ে দেশের একটা অংশের মানুষের সন্দেহ এবং গোঁসা প্রচুর। আমি বেশ কয়েক দিন আগে একটা ট্রল করেছিলাম এবং অনেকেও এমন ধরনের ট্রল করেছেন  যে তমাল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে গেল বলে! এমন কথা বলতে বলতেই আমাদের দেশের এক সুনাগরিক স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে একটা আবেদন করেছেন যে তমাল ভট্টাচার্যের গতিবিধিতে নজরদারি করা হোক। এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনও আলোচনা হচ্ছে যে তমাল ভট্টাচার্যের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বামপন্থী। সুতরাং বামপন্থী মানেই তালিবান ভক্ত। এছাড়াও এমনও কিছু নেট নাগরিক পাওয়া গেছে যারা তমালকে এবং তার পরিবারের বযস্ক মানুষদের সম্পর্কে অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করছে। তালিবানদের প্রশংসায় কথা বলাটা তাদের ভীষণ আঘাত দিচ্ছে। তাই সেই আঘাতের প্রত্যাঘাত তারা করছে।

এখন আসা যাক তমাল ভট্টাচার্যের দাবি তালিবানদের বড় শত্রু আইসিস প্রসঙ্গে। আমরা তথা বিশ্ব জানে -আইসিসরা  বিশ্বে ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে চাওয়া সবথেকে নিষ্ঠুর জঙ্গি গোষ্ঠী। আর তালিবানরাও তো  ধর্ম বিশ্বাসে গোঁড়া। ইসলামি আইন ও শরিয়াতের ভিত্তিতে হুকুমত কায়েম করতে চায়। সুতরাং আইসিস ও তালিবান একই পথের পথিক! তাহলে এই দু’য়ের মধ্যে শত্রুতা কেন? বন্ধুত্বই তো থাকা উচিৎ!  না। তমাল ভট্টাচার্য মিথ্যে বলছেন ও তো ‘তালিবানদের এজেন্ট’। আইসিস ও তালিবান একই। ওদের মধ্যে মিল আছে সুতরাং ওরা বন্ধু। এখন গতকাল কাবুল বিমান বন্দর ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যার প্রভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। এই বিস্ফোরণের পিছনে নাকি রয়েছে আইসিস। এমন দাবি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। এমনিতেই তালিবানরা দাগী – তারা নৃশংস, তারা জঙ্গি, তারা নারী দেখলে নিজেদের স্থির রাখতে পারেনা ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আছে। তারপরও ক্ষমতা দখল করার ফলে অত্যাচারের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। আবার বিস্ফোরণ, এ তো অগ্নিস্তুপে ঘৃতাহুতি। এমন ঘটনা বা কর্মকাণ্ড শত্রুর ছাড়া হতেই পারেনা। সুতরাং আমেরিকার কথা বা দাবি অনুসারে আইসিসই এই অপকর্মের পিছনে। অতএব তমাল ভট্টাচার্যের দাবি সঠিক- ‘তালিবানদের প্রধান শত্রু আইসিস’।

আব্দুল মোমেন পেশায় একজন শিক্ষক। সাতুলিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন সমাজসেবাতেও, করেন লেখালেখিও। লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন। 

বি.দ্রঃ মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। এনবিটিভি লেখকের মতামতের জন্য কোনভাবেই দায়ী নয়।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর