দাদুর জন্য অক্সিজেন চেয়ে মিলল ক্রিমিনাল কেস,যোগীর রাজ্যে অমানবিকতার নয়া নজির!

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG_20210427_130839

নিউজ ডেস্ক : যোগীর অধীনে বিজেপি সরকারের হাতে গড়া সোনার উত্তর প্রদেশে করোনা রোগীর চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। রোগীরা বাধ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। সাধারণ রোগীরা পাচ্ছেন না অক্সিজেন। কিন্তু তার জন্য কোথাও অভিযোগ বা নালিশ জানানো যাবে না। রাজ্য সরকারের কাছে চাইলে তো পাবেন না। এমনকি অন্য কোথাও অক্সিজেন চাইতে গেলেও আপনি সেখান থেকে অক্সিজেন পাওয়ার আগে পাবেন সরকারি ধমক, অপমান এবং আপনার বিরুদ্ধে হবে ক্রিমিনাল কেস।

একটাই দোষ, তিনি তাঁর দাদুর জন্য টুইটে অক্সিজেনের সাহায্য  চেয়েছিলেন। Amethi Police মঙ্গলবার সন্ধেবেলা টুইট করে জানিয়েছে যে, তারা এক তরুণের বিরুদ্ধে একটি ক্রিমিনাল কেস দায়ের করেছে। কারণ তরুণটি টুইটারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন!

সোমবার সন্ধেবেলা Shashank Yadav নামের এক ব্যক্তি টুইটে actor Sonu Sood-কে ট্যাগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার চান। তিনি কিন্তু তাঁর টুইটে Covid-19 বা অন্য রকম রোগের উল্লেখ করেননি। শশাঙ্কের এক বন্ধু Ankit রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বন্ধুর টুইটকে রিটুইট করেন এবং তিনি এক সংবাদ মাধ্যমের সিনিয়র এডিটরকেও পাশাপাশি টুইটারে সরাসরি মেসেজ পাঠান।

ওই সম্পাদক মধ্যরাত নাগাদ বিষয়টিতে সাড়া দেন। কোথাও কোনও মেডিক্যাল হেল্প লাগলে সাংবাদিকেরা যেমন তাঁদের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিষয়টা দ্রুত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অনুকূল করার চেষ্টা করেন, তিনিও তাই-ই করেছেন। তিনি স্মৃতি ইরানি-কে ট্যাগ করে দেন। কেননা ইরানি অমেঠিতে সাসংদ। ইরানি দ্রুত সাড়া দেন। বলেন তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

ইতিমধ্যে Ankit ওই সিনিয়র সাংবাদিককে মেসেজ করে জানান, তাঁর বন্ধুর দাদু মারা গিয়েছেন। এই খবরটিও ওই এডিটর মন্ত্রীকে জানান।

ঘটনা এইখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না, তখনও কিছু বাকি ছিল। কেননা ততক্ষণে কোভিড-ক্রাইসিস ঘিরে রাজ্যের পরিস্থিতিও অনেক বদলে গিয়েছে। আতঙ্কে দিন গুনছে সকলে। কোভিড আক্রান্ত মানেই দুঃসহ টেনসন। তারমধ্যে অক্সিজেন চেয়ে টুইট করে একজন অজান্তেই টেনসন আরও বাড়িয়ে ফেলার অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়লেন।

 

২৭ এপ্রিল বিকেলে Amethi District Magistrate Amethi Chief Medical Officer-কে একটি টুইট করে ওই সম্পাদকের পোস্টের বিষয়ে খোঁজ নেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শশাঙ্কের দাদু একটি বেসরকারি হাসপাতাসলে ভর্তি ছিলেন। তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছেন। শশাঙ্ক বা ওই সাংবাদিক কেউই তাঁদের টুইটে কোভিডের কারণে এই অক্সিজেন-সন্ধান এ কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু তবুও বলা হয়, উক্ত দুই ব্যক্তি এই সঙ্কটকালে রাজ্যের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধেবেলাতেই Amethi Police শশাঙ্ক এবং সাংবাদিককে একটি টুইট করে বলে, এই পরিস্থিতিতে এই আচরণ শুধু গুজব ছড়ানো নয়, রীতিমতো criminal offence। police জানিয়ে দেয়, তারা অভিযোগ দায়ের করছে ভারতীয় পেনাল কোডের sections 188, 269 এবং 505 (1)(b) ধারায়, থাকছে  Epidemic Act-এর Section 3 এবং Disaster Management Act-এর Section 54-ও। পুলিস যদি কেসটা চালিয়ে যায় তবে এতে শশাঙ্কের জেলও হতে পারে।

 

এর আগে যোগী আদিত্যনাথ নিজে রাজ্যটির হাসপাতাল সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে তাদেরকে অক্সিজেন ঘাটতির ব্যাপারে কোনো রকম আওয়াজ না করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার সব সম্পত্তি জব্দ করে নেওয়ার ও হুমকি দিয়ে রেখেছেন যোগী স্বয়ং।

কিন্তু অক্সিজেনের ঘাটতি না থাকলে কেন উত্তর প্রদেশের করোনা সংক্রামিত রোগীদের পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য? অক্সিজেন ঘাটতি না হলে কেন মানুষ তাদের আপনজনদের জন্য অক্সিজেন চাইতে বাধ্য হচ্ছেন? কেন যোগীর মন্ত্রিসভার মন্ত্রী এবং বিজেপির বিধায়করাও রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হচ্ছেন? উল্লেখ্য এর আগেও জগর রাজ্যে করোনা সংক্রমনের মাঝে সরকারিভাবে অমানবিক আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর আগেও করোনা সংক্রামিত ব্যক্তিরা সে রাজ্যের করোনা রোগীদের জন্য চালু করা হেল্প লাইনে সাহায্যের জন্য ফোন চাইলে তাকে দূরে গিয়ে মরে যেতে বলা হয়।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর