বিশ্ব গরু হবোই, কে ঠেকাবে  আমাদের!

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

দেখতে দেখতে ১০০ দিন পার করল ভারত জোড়ো পদযাত্রা, এরই মধ্যে রাহুল পেছনে ফেলেছেন ২৮০০ কিলো মিটার পথ। দল মত নির্বিশেষে সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে আমজনতা কাতারে কাতারে শামিল হয়েছে এই যাত্রায়। এরই মধ্যে গুজরাট আর হিমাচলের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। লোকে বলছে বিজেপির বি টিম আপ এর কল্যানে কেন্দ্রীয় শাসকের দু হাতে লাড্ডু। বড় লাড্ডু গুজরাটে কংগ্রেস গো হারা হারলেও ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপির হাত থেকে ছোট লাড্ডু হিমাচল। কেজরিওয়াল বিজেপির কাছ থেকে দখল নিয়েছে দিল্লী মিউনিসিপ্যালিটির। 

গুজরাটে হারলেও শেষ ঘণ্টায় অবিশ্বাস্য  ভোটিং প্যাটার্ন নিয়ে হতবাক কংগ্রেস যাচ্ছে গণতন্ত্রের শেষ আশ্রয় সুপ্রিম কোর্টের দরজায়। সব মিলে স্বস্তিতে নেই বিজেপি। ছলে বলে কৌশলে যে ভাবেই হোক ক্ষমতা দখল করতে  চায় তারা।  হেরে গেলেও পয়সার জোরে ঘোড়া কেনা বেচা করে, ভুল হল, ঘোড়া নয় খচ্চর । খচ্চর কিনে ক্ষমতায় আসা  বাঁয়া হাত কি খেল এদের। উল্টোদিকে যাকে পাপ্পু বলে এতদিন পরিহাস করা হয়েছিল সেই রাহুল স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছেন। গুজরাটে নির্বাচনী প্রচার করতে যখন গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা, এমনকি ইউপি আসামের মুখ্যমন্ত্রীরাও প্রচার করছে তখন যাত্রার   ফাঁকে এসে মাত্র দেড় দিনের মধ্যে নির্বাচন প্রচার করে ফিরে গেলেন রাহুল।

এরমধ্যে মর্বি পুল এর মত বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে গেছে। লোভের বলি ১৪০ টি লাশ। টেবিলের তলা দিয়ে টাকা পাইয়ে দেওয়া বেওসায়ীকে ছেড়ে নিরপরাধদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে। সুযোগ পেয়েও লাশের রাজনীতি করবেন না বলে একটি জ্বলন্ত ইস্যু ছেড়ে দিলেন রাহুল। এখানেই তিনি   একটি বড়ো ভুল করে বসলেন। ভুলটা হলো ঝটিকা সফরে গুজরাটে এলেও সময় বের করে মর্বী দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করার সময় পেলেন না। 

পারলে দল  একটু হলেও অ্যাডভান্টেজ পেতো। এবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা বলি, মেধা পাটকার রাহুলের সঙ্গে পদযাত্রা করলে গুজরাট বিরোধী নর্মদা আন্দোলন নেত্রীর সঙ্গে কৌশলে গুজরাটি অস্মিতার প্রশ্ন তোলেন। ভোটের প্রচারে এলে গুজরাট বিরোধী রাহুলকে প্রশ্ন করা উচিত বলে বিলো দি বেল্টে আঘাত করেন। এখানেই ক্লাসের প্রশ্ন আসে। একজন ইস্যু পেয়েও লাশের রাজনীতি করে সুবিধা চাননা। আর অন্যজন সম্পর্কে যত কম বলা যায় তত ভালো। একজন ভালোবেসে সবাইকে কাছে টানেন অন্যজন লোকের মধ্যে বিভেদের দেওয়াল তোলেন। এখন প্রশ্ন হলো লাখ লাখ লোক রাহুলের সঙ্গে পদযাত্রায় শামিল কিন্তু এই সমর্থন ভোটে পাল্টে যাবে কি? 

প্রশ্ন অন্য জায়গাতেও গুজরাটে ভোটের প্রচার গদি মিডিয়া একতরফা দেখালেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে শাসক দলের নেতাদের জনতার তাড়া খেয়ে পালাতে দেখেছি, দেখছি প্রধানমন্ত্রীর মিটিংয়ে সারি সারি খালি চেয়ার, বসার লোক নেই। এই অবস্থায় শাসক দলের একতরফা জিত সন্দেহ জাগায়।

রাহুল ভারত জুড়তে চান আর বিজেপি ভারত জুড়তে নয় ভাঙতে চায়। যেনো তেনো করে ছলে বলে কৌশলে নির্বাচনে জিততে চায়। ব্রিটিশ ভজনা এত সহজে মন থেকে মোছেনি তাই ওদের শেখানো  ট্রায়েড অ্যান্ড টেসটেড ফর্মুলা ডিভাইড অ্যান্ড রুল তাস খেলছে বার বার। যেখানে অবস্থা খারাপ সেখান সুবিধা  করতে না পারলেও জাতপাতের গল্প। আর কাজ না হলে কেন্দ্রীয় এজেন্সির জুজু আছে। ছোট রাজ্যে যেখানে ক্ষমতায় নেই সেখানে হিন্দু মুসলিম কার্ড ভালো ফল দেয়। লোকসভা নির্বাচন দেড় বছর পর। ততদিনে বহু প্রতীক্ষিত রাম মন্দির ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। লোকে পেটের ভাত,  মূল্যবৃদ্ধির কথা ভুলে ধর্মের আফিম খেয়ে উদ্ধাহু হয়ে জয়ধ্বনি দেবে। এখানেই কিসসা শেষ নয়,সামনে আছে কাশী, আছে মথুরা। চটপটা ঘটিগরম স্লোগান রেডি, অভি সিরফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়। দেশ রসাতলে যাক আমরা  পেছনে হেঁটে বিশ্ব গরু হবই। কে ঠেকাবে আমাদের!

Latest articles

Related articles