লকডাউনের পর আবারও CAA, NPR, NRC-র বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলে রাজপথে নামছে ওয়েলফেয়ার পার্টি

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

WhatsApp Image 2021-12-10 at 4.41.47 PM

এনবিটিভি ডেস্কঃ  শুক্রবার ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া “CAA, NPR ও দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বাতিল করো” শিরনামে  নিয়ে কলকাতায় আলোচনা সভা আয়েজন করে। আজ এই সভা থেকে উল্লেখিত বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। সরকারের উল্লেখিত কালা কানুন বাতিল করতে আগামীদিনে রাজপথে নামতে চলেছে ওয়েলফেয়ার পার্টি । আলোচনা শেষে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিম্নে দেওয়া হল।

ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন । 

২০১৯ সালে সংসদে পাশ হওয়া অসাংবিধানিক, বৈষম্যপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকামী CAA আইন এবং ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অধীনে NPR এর মধ্যদিয়ে সারা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)  লাগু করবার কেন্দ্রীয় সরকারের অপচেষ্টার বিরোধিতায় সারা দেশব্যাপি ও এই রাজ্যে দূর্বার আন্দোলন চালিয়ে গেছে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া ।

বিশেষভাবে, লোকসভা নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি দল NPR, NRC ও CAA-র ভীতি দেখিয়ে ও ঘৃণার পরিবেশ তৈরী করে বাংলার সম্প্রীতিকামী জনগণকে যেভাবে মেরুকরণ করতে চেয়েছে তাকে বারবার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া । ২০১৯ সালে সংসদে এই বিতর্কিত CAA আইনটি পাশ হওয়ার দিনেই সারা রাজ্যে এর বিরুদ্ধে পথে নামে এই দলটি এবং রাজ্যের শাসক-বিরোধী সকল দলকে পিছনে ফেলে সর্বপ্রথম সাহসিকতার সাথে বাংলা বনধের ডাক দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দেয়। এরপর সারা রাজ্যজুড়ে শাহীনবাগের ধাঁচে গড়ে ওঠা সকল নাগরিক প্রতিবাদ মঞ্চের পিছনে সক্রিয় সহযোগীতা রাখে এবং মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুরে পার্টির নেতৃত্বে সফলভাবে ৫৫ দিনের অধিক সময় ধরে একটি গণধর্ণা মঞ্চের প্রতিবাদ চালিয়ে যায় ।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, NPR, NRC, CAA প্রসঙ্গে যখন সাধারণ প্রান্তিক বর্গের নাগরিক প্রায় দিশেহারা, তখনই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে মানুষের সকল উদ্বেগ নিরসনের উদ্যেশ্যে পার্টি সারা বাংলা ব্যাপি “আতঙ্কিত নয়, সতর্ক হোন” শীর্ষক প্রচারাভিযান চালায় । কোভিড অতিমারীর কারণে দেশ যখন স্তব্ধ, সেই সময়েও পার্টি এই ইস্যুতে অনলাইন ওয়েবিনার পরিচালনা করে গেছে । আবারও সেই দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়ে আজ নিউটাউনে পার্টির রাজ্য অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ববৃন্দ ।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, দেশ যখন বিশ্বক্ষুধা সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকেও উপরের সারিতে অবস্থান করছে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন তলানিতে এবং দেশে ভেদভাবনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টরা, তখন অসাংবিধানিক ও বৈষম্যপূর্ণ CAA আইন পাশের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে পার্টি আবারও NPR, NRC ও CAA বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান কী তা জানবার উদ্দেশ্যেই নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদানের দাবীতে সংবিধান বিরোধী ও নিপীড়নমূলক ফ্যাসিবাদী কৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চায়ছে । তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ পাশের বর্ষপূর্তিতে ডিসেম্বর মাস ব্যাপি CAA, NPR, NRC ইস্যুতে জনমত গঠনের লক্ষ্যে পার্টি প্রাথমিক পর্যায়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহন করেছে, যেমন ১১  ডিসেম্বর,২০২১ সকাল ১০ টা থেকে টুইটার ও ফেসবুকে অনলাইন হ্যাশট্যাগ ঝড় ও পোস্টার ক্যাম্পেইন হবে, ১২ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফেসবুক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হবে ।

১৩ই ডিসেম্বর,২০২১ রাজ্যজুড়ে জেলা শাসকদের ডেপুটেশন কর্মসূচী পালিত হবে, ১৯শে ডিসেম্বর,২০২১ দুপুর ২ টায় কোলকাতায় বুদ্ধজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বদের নিয়ে নাগরিকত্বের ইস্যুতে সেমিনার আয়োজিত হবে ।

এছাড়াও রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে পার্টির দাবিপত্র সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদানের উদ্যেশ্যে আগামী জানুয়ারী মাস ব্যাপি সারা রাজ্যে জনসংযোগ ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ দূর্বার গতিতে চলবে । পার্টির এই আন্দোলন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পার্টির রাজ্য সভাপতি শ্রী মনসা সেন মহাশয় বলেন,”আপনারা অবগত আছেন যে, সারা দেশব্যাপী NRC লাগু করার প্রসঙ্গে সম্প্ৰতি সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে  বলা হয়েছে যে, দেশ জুড়ে NRC করার ক্ষেত্রে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার । অন্যদিকে, ২০১৯ সালে পাশ হওয়া CAA আইনের ধারা নির্ধারণ করার জন্য সরকার ২০২২ সাল অবধি সময় চেয়ে রাখলেও সেই কাজের কোনও অগ্রগতি নজরে আসেনি ।

এছাড়াও, CAA আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ওয়েলফেয়ার পার্টি সহ আরও অন্যান্য সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ যেসকল জনস্বার্থ মামলা সুপ্রিম কোর্টে করে রেখেছে তার একটিরও শুনানি আজ অবধি সুপ্রিম কোর্ট শুরু করেনি । এমতবস্থায়, দেশের অসন্তুষ্ট কৃষকদের দূর্বার আন্দোলন মোদী সরকারের কান মুলে দিয়ে কৃষকবিরোধী তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে এবং কার্যতঃ উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বিজেপি-কে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে । এহেন পরিস্থিতিতে ভারতবাসীর নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রশ্নে “ক্রোনোলজি” বোঝানোর চেয়ে নিশ্চুপ থাকায় যে বুদ্ধিমানের কাজ একথা অমিত শাহ-রা ভালোই বোঝেন । কিন্তু, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব হিসাবে আমরা বুঝি যে, সরকারের কাছে প্রশ্ন করার এটাই যথার্থ সময় ।

আমরা জানতে চাই, সাম্প্রতিক Census এর সাথে সাথে NPR লাগু করবার চেষ্টা বন্ধ হবে কিনা ? কারণ, NPR-ই হল NRC-র প্ৰথম ধাপ । এখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারকেও পরিষ্কার করতে হবে যে, নতুন বছরের জানুয়ারী মাস থেকে কি এরাজ্যেও NPR এর কাজ শুরু হবে ? আমরা জানতে চাই, সর্বনাশা CAA ২০০৩ এর অধীন দেশব্যাপী NPR-NRC লাগু করার ও বিভেদকামী CAA ২০১৯ এর অধীনে নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত কি সংসদের উভয় কক্ষে সম্পূর্ণ রূপে বাতিল হবে ? নাগরিকত্ব বিষয়ক এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান না হলে “এখন করার পরিকল্পনা নেই” গোছের ছেলেভুলানো গল্প এক্ষুনি বন্ধ হোক । অতিমারী ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রকোপে বিদ্ধস্ত আপামর দেশবাসীর উপর নাগরিকত্বের খাঁড়া এভাবে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকতে পারে না, এর সমাধান চায় ।

তাই, আজ “মানবাধিকার দিবসে” কেন্দ্রীয় সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যে, আপামর দেশবাসীর বেঁচে থাকার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করে অবিলম্বে এইসমস্ত কালো আইন প্রত্যাহার করা হোক এবং বিচার বিভাগের প্রতি নাগরিকদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হোক । এই মুহূর্তে দেশে NPR, NRC, CAA লাগু করার চেয়ে ছাত্র-যুব, কৃষক-মজদুর ও আপামর সাধারণ ভারতবাসীর জীবন যন্ত্রণাকে লাঘব করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও বেশী মনোনিবেশ করা উচিৎ ।” এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসানও এদিন কড়া ভাষায় মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন যে,”শক্তিশালী গণতন্ত্রই উন্নয়নশীল অর্থনীতির বুনিয়াদ । সাধারণের অধিকার হরণ করে ও গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে কখনও ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ হতে পারে না । দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ কাগজ দেখাতে অপারগ, তখন এই পিছিয়ে পড়া দেশের হতদরিদ্র, অসহায় মানুষগুলোকে কেন দলিল-দাস্তবেজের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উঠবে ? ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের আইন পাশ হবে ? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতবিরোধ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জায়গা থাকা উচিৎ, যা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার ।

কিন্তু, দূর্ভাগ্যের যে, সরকার কর্তৃক পাশ করা বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের শুধুমাত্র সমালোচনা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আজও বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের, সাংবাদিকদের, সমাজকর্মীদের, বুদ্ধিজীবীদের UAPA, SEDITION এর মতো কালো আইনের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলবন্দী করে রাখা হয়েছে । অথচ, আজও দাঙ্গাবাজ, প্রকাশ্যে হিংসাত্মক ও বিভেদমমূলক বক্তব্যপ্রদানকারী অপরাধীরা নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! এসব কিছু দেখে-শুনে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরী হয় । দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদী চরিত্রকে ধ্বংস করে কায়েমী স্বার্থে নোঙরা বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে । তাই, অবিলম্বে NPR, NRC, CAA বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হতে হবে এবং নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত নিরাপরাধ জেলবন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ।

আমরা এই সকল রাজনৈতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে আবারও পথে নেমে আগামী লড়াইয়ের কর্মসূচী নিচ্ছি । বৃহত্তর স্বার্থে পার্টি আগামীতে সকল গণতন্ত্রপ্রেমী, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিদের একজোট করে আবারও গণআন্দোলনের ময়দানে সামিল হবে । পার্টির বর্তমান এই কর্মসূচীর মধ্য দিয়েই আমরা সেই পথ প্রশস্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছি ।” এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক জালালউদ্দিন আহমেদ ও আবু তাহের আনসারী,রাজ্য কমিটির সদস্য মহিনুর জামান প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর