আনিস খানের খুনের তথ্যানুসন্ধান বন্দীমুক্তি কমিটির

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

বন্দীমুক্তি কমিটি আনিসের বাড়ীতে।
বন্দীমুক্তি কমিটি আনিসের বাড়ীতে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতাঃ  হাওড়া জেলার আমতা ব্লকের খুশবেড়িয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সারদা খাঁ পাড়ার বাসিন্দা আনিস খান। আঠাশ বছরের এক যুবক। গত ১৯.০২.২২ তারিখে মধ্যরাতে  আনিস খুন হয়েছেন নিজের বাড়িতে। খুনের প্রত্যক্ষদর্শী আনিসের পরিজনবৃন্দের জবান অনুযায়ী আমতা থানা থেকে আগত চার পুলিশ আনিসকে খুন করে তাঁরই নিজের বাড়ির দোতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রক্তাক্ত আনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

   যে-আনিসকে পুলিশ বেনজির বর্বতায় হত্যা করেছে, তার পরিচয় হল সে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ইসলামে বিশ্বাসী এক উচ্চশিক্ষিত তরুণ নাগরিক। কিন্তু এই পরিচয় অসম্পূর্ণ। আনিসের পরিচয়ের ভিন্ন মাত্রা আছে। আনিস খান একজন সমাজ-সংবেদী প্রতিবাদী যুবক। নিজের শিক্ষাঙ্গনের পাঠসাথী থেকে তাঁর বসবাসের অঞ্চলের প্রতিবেশীরা আনিসকে চিনেছিল বিভিন্ন সামাজিক কাজে উদ্যোগী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এক যুবক হিসেবে। আনিসের এই সমাজমুখী প্রতিবাদী সক্রিয়তা তাঁকে যেমন সহনাগরিকদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছিল, তেমনই প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় একাংশের চক্ষুশুল করে তুলেছিল।

  গত ২৩.০২.২০২২ তারিখে বন্দীমুক্তি কমিটি এই ঘৃণ্য হত্যা সংশ্লিষ্ট প্রকৃত তথ্যানুসন্ধানের উদ্দেশ্যে আনিস খানের বাড়িতে যায় এবং তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সবিস্তারে কথা বলে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত ও প্রশ্নে উপনীত হয়েছেঃ

 ১. আনিস খানকে ইচ্ছাকৃতভাবে খুন করতেই আমতা থানার চার পুলিশ কর্মী এসেছিল।

 ২.গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে পুলিশ যদি আনিসের বাড়িতে আসত, তাহলে নির্দিষ্ট ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে পারত।

  ৩.ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা নিশ্চিত, ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিলে চার ফুট উঁচু পাঁচিল পেরিয়ে নীচে পড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

  ৪. পুলিশ শুধু ইচ্ছাকৃতভাবেই আনিস খানকে খুন করেছে তা-ই নয়, এই খুন বড় কোনো পরিকল্পনার ফলশ্রুতি। প্রত্যক্ষ খুন যারা করেছে, খুনের পেছনের মাথা তারা নয়। আনিসের পরিবার ও প্রতিবেশীরা এরকম মতই পোষণ করছে।

  ৪. কিছু নিম্নস্তরের পুলিশকর্মীকে আটক করে থেমে গেলে তদন্তের নামে প্রহসন হবে।

  ৫. পুলিশ কেন নিয়ম ভঙ্গ করে মাঝরাতে আনিসের বাড়িতে এলো?

 ৬. আমতা থানা কেন ঘটনার সাত ঘন্টা পরে বাড়িতে পুলিশ পাঠালো?

 ৭. গতবছর মে মাসে আনিস তার ও তার পরিবারের বিপদ সম্পর্কে আমতা থানাকে অবহিত করলেও, কেন থানা কোনো সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেনি? আনিস খানকে খুন করার পর তার বাড়ির দরজায় পুলিশ পাহারা বসেছে; পাহারাদার পুলিশ আনিস খানের বাড়িতে আগত সহ নাগরিকদের ছবি তোলা আর কথাবার্তার ভিডিও রেকর্ডিং করছে।

বন্দীমুক্তি কমিটির দাবিঃ

 ১. সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত সৎ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির বিচারপতি দিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

  ২.নাগরিক সমাজ ও গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কর্মীদের দাবি মতো উচ্চ স্তরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

  ৩. স্থানীয় তৃণমূল পার্টির যে বা যেসকল নেতৃবৃন্দ আনিস ও তাঁর পরিবারকে লাগাতার হুমকি দিয়েছে ও বাড়িতে গুণ্ডামি করেছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিন বন্দীমুক্তি কমিটির তথ্যানুসন্ধানকারী দলের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তথ্য গুলি জোগাড় করেন। এদিন উপস্থিত ছিলেন বন্দীমুক্তি কমিটির সহ সভাপতি অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, সমাজকর্মী অধ্যাপক ইমানুল হক সহ আরও অনেকেই।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর