আরবী এক কালজয়ী ভাষা, ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

arabic language day celebration

এনবিটিভি ডেস্কঃ  সেমেটিক ভাষাগোত্রের মাঝে অনন্য এক অবস্থান নিয়ে আছে আরবী ভাষা। শুধু সেমেটিক ভাষাগোষ্ঠিই নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার মাঝে আরবী ভাষার রয়েছে সবচেয়ে উচ্চ ও উন্নত আসন। তাই বলা যায় আরবী ভাষা এক কালজয়ী ভাষা। কালের প্রবাহ কখনো এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ক্ষুণ্ণ করতে পারেনি।পৃথিবীর সকল ভাষাতেই কোনো না কোনো সময় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কিন্তু আরবী ভাষা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রয়েছে অপরিবর্তনীয় ও অবিকৃত। এমনকি আরবী ভাষা যতদিন যাচ্ছে ততই আন্তর্জাতিক স্থরে গুরুত্বও বাড়ছে।

আরবী ভাষা ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের ভাষা। বিশ্বের সকল মুসলমানের নিকট হৃদয়ের সম্মানিত ভাষা। বিশ্বের প্রায় চব্বিশ কোটি মানুষের মাতৃভাষা। প্রতিটি মুসলমানকেই অন্তত তার ইবাদত পরিশুদ্ধ করতে আরবী ভাষা শিখতে হয়। ইসলাম ধর্মে আলেম, ফকীহ ও মুহাদ্দিস হতে হলে ভালোভাবে জানতে হয় আরবী ভাষাকে। দক্ষতা অর্জন করতে হয় আরবী ব্যাকরন ও সাহিত্যে।

আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবসের প্রেক্ষাপটঃ-

এত সম্মান ও উচ্চাবস্থান থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ভাবে আরবী ভাষা ছিল অনেকটা অবহেলার স্বীকার। আন্তর্জাতিক সভা সেমিনার ও অধিবেশনগুলোতে অন্যান্য ভাষা ব্যবহার হলেও আরবীর কোনো স্থান ছিল না। তবে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভার ২৮ তম অধিবেশনে আরবী ভাষাকে এর দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম সংস্থা (ইউনেসকো) সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

পিছন ফিরে দেখা ইতিহাসঃ-

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর দাপ্তরিক ভাষা ছিল পাঁচটি। ইংরেজি, ফ্রান্স, চীন, রুশ ও স্প্যানিশ। আর বিশ্বের বিভিন্ন দিক থেকে বিশেষ ভূমিকা ও আরবী ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশী হওয়া সত্ত্বেও আরব নেতাদের আরবী ভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। ভিনদেশী ভাষাতেই তাদের বক্তব্য প্রদান ও শ্রবণ করতে হতো। দাপ্তরিক কাগজপত্র আরবী থেকে অনুবাদ করে তা দাপ্তরিক ভাষায় উপস্থাপন করতে হতো। এ অবস্থা আরবদের জন্য ও বিশেষভাবে আরবী ভাষার জন্য ছিল লজ্জাজনক। তাই শুরু থেকেই আরব নেতারা এদিকে সজাগ ছিলেন। সর্বপ্রথম সৌদি আরব ও মরক্কো সরকার এবিষয়ে কথা বলেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৪ সালে ৪র্থ ডিসেম্বর তাদের নবম অধিবেশনে ৮৭৮ নং প্রস্তাবে আরবী ভাষায় লিখিত অনুবাদ প্রকাশের বৈধতা প্রদান করে। এবং বছরে চার হাজার পৃষ্ঠা অনুবাদের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সাথে সাথে এ শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যে, অনুবাদের ব্যয়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশকে বহন করতে হবে এবং নথি ও কাগজপত্র আরব এলাকার রাজনৈতিক ও আইন বিষয়ক হতে হবে।

১৯৬০ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ‘‘ইউনেসকো’’ আরব দেশগুলোতে আরবী ভাষায় সভা সেমিনার ও জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা এবং তাদের নিজস্ব নথিপত্র ও প্রচারপত্র আরবীতে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

১৯৬৬ সালে ইউনেসকোর সাধারণ সভাগুলোতে ভিন্ন ভাষা থেকে আরবী ভাষায় এবং আরবী ভাষা থেকে ভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯৬৮ সালে অনুবাদের সাথে সাথে আরবী ভাষাকে ইউনেসকোর সাধারণ সভা ও কর্ম পরিষদের কার্যকরি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

‘ইউনেসকো’র হেড অফিস প্যারিস, ফ্রান্স । 

এই ধারাবাহিকতার সাথে সাথে আরব বিশ্বের কূটনৈতিক চাপ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এতে সৌদি আরব ও মরক্কো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শেষ পর্যন্ত তারা ১৯৭৩ সালে আরবী ভাষাকে জাতিসংঘের সাধারণ সভার মৌখিক ভাষা হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাতে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে আরব লীগে তাদের ষাটতম অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরবীকে জাতিসংঘ সহ তার অন্যান্য সংস্থাগুলোর দাপ্তরিক ভাষা করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের ২৮ তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্তে আরবী ভাষাকে জাতিসংঘ ও তার সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালের অক্টোবরে ইউনেসকোর নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের ১৯০ তম অধিবেশনে ১৮ই ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এবং এর পর থেকে এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। আরবী ভাষা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সৌদি আরব সহ অন্য আরব দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

ভারতে আরবী ভাষা প্রবেশ ও বিস্তার লাভঃ-

আরবী ভাষা হিসেবে ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগেই আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে এসেছিল। এটি আরবদের ভাষা ছিল যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনে যাওয়ার পথে বাণিজ্যের জন্য এই অঞ্চলে ঘন ঘন আসত। পনের শতক আগে ইসলামের আবির্ভাবের পর, আরবরা ভারতের কিছু অংশের সাথে এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। এই যোগাযোগ এবং আন্তঃবিবাহের ফলে দুটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী, মালাবারের ম্যাপিলাস এবং তামিলনাড়ুর লাব্বাইস গড়ে ওঠে।

আরব ব্যবসায়ীরা  বেশিরভাগ ইয়েমেনি এবং বসরিরা দক্ষিণে এসে বসতি স্থাপন করলে, এরপর মুসলিম আরবরা উত্তরে সিন্ধু আক্রমণ করে ৭১১  খ্রিস্টাব্দে । তারপর দশম  শতাব্দীতে ভারতে ইসলামের ব্যাপক আগমন ঘটে। মুসলমানদের সাথে তাদের ধর্মীয় ভাষা আরবী এসেছিল। সেই সময় যদিও ফার্সি ছিল প্রশাসনের ভাষা। অন্যদিকে প্রধান ভারতীয় মুসলিম শাসক রাজবংশগুলি তুর্কি বংশোদ্ভূত ছিল।

 

আরবী মুসলিম রাজনৈতিক শক্তি দ্বারা প্রসারিত হয়নি যখন ফারসি ছিল। তাই, মুসলিম শাসনের পতনের পর ফার্সি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায় কিন্তু আরবী ভাষা রয়ে যায় । বছরের পর বছর ধরে আরও শক্তি অর্জন করে।

 

ইসলাম ধীরে ধীরে ভারতের সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু আরবী কেবল ভারতীয় মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা হিসেবেই থেকে যায়। শাসক ও অভিজাতরা যখন ফার্সি ব্যবহার করত, তখন সাধারণ ভারতীয়রা তাদের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু প্রত্যেক মুসলমানেরই আরবী  ভাষার কিছু জ্ঞান ছিল এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু আরবী শব্দ ও বাক্যাংশ ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করার সময়। প্রত্যেক মুসলমান নামাজ পড়তে সক্ষম হওয়ার জন্য পবিত্র কোরআনের কিছু ছোট সূরা মুখস্থ করে।

ভারতীয় ভাষাতে আরবী ভাষার প্রভাবঃ-

প্রাথমিক ইসলামী যুগে সংস্কৃত রচনাগুলি আরবীতে অনুবাদ করা হয়েছিল, যেমন ‘কালিলা ওয়া দিমনা’। এটি এখনও অনেক ভারতীয় মাদ্রাসায় এটির অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণীর সাহিত্যিক ভাষা এবং শৈলীর কারণে একটি সাহিত্য পাঠ হিসাবে পড়ানো হয়।

সময়ের সাথে সাথে আরবী  শব্দগুলি বিভিন্ন মাত্রায় সমস্ত ভারতীয় ভাষায় ছড়িয়ে পড়ে। তামিল (আরউই), মালয়ালম (মপিলা), গুজরাটি (লিসান আল-দাওয়াত)। পাঞ্জাবি, কোঙ্কানি, সিন্ধি, কাশ্মীরি (পুরিক), পশতু এবং উর্দু মত কিছু ভারতীয় ভাষা আরবি লিপি গ্রহণ করেছে । কিছু সংযোজন ও পরিবর্তনের সাথে মানানসই মনে হয়। স্থানীয় চাহিদা অনুসারে এই প্রভাব পড়েছে । এমনকি সংস্কৃতও ঊনবিংশ শতাব্দীতে অল্প সময়ের জন্য আরবিতে লেখা হয়েছিল ।

শত ভাষার মিলন কেন্দ্র ভারতবর্ষ ।

যদিও এই ভাষাগুলির মধ্যে কিছু এখন আরবী লিপি বাতিল করেছে। পাকিস্তানি পাঞ্জাবি, সিন্ধি, কাশ্মীরি, পশতু এবং উর্দু এখনও আরবী লিপি ব্যবহার করে। উর্দু কবিতার মিটারও আরবি।

 

ভারতীয়দের দ্বারা রচিত অসামান্য মূল্যবান আরবী লেখনীঃ-

ভারতে ইসলামের অস্তিত্বের এই বিগত চৌদ্দ শতাব্দীতে। ভারতীয়রা কেবল আরবী পাঠ্য অধ্যয়ন এবং মুখস্থ করেনি বরং আরবি এবং ইসলামিক অধ্যয়নের সবচেয়ে খাঁটি এবং সম্মানিত গ্রন্থগুলিও রচনা করেছে। এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

তুহফাতুল-মুজাহিদী লেখেন জয়ন আল-দিন আল-মাবারী রহঃ (মৃত্যু ৯৯১ হিঃ/১৫৮৩ খ্রিঃ)। মুহিবুল্লাহ ইবনে আবদ আল-শাকুর আল-হানাফী আল-বিহারী রহঃ  (মৃত্যু ১১১৯ হিঃ) দ্বারা রচিত উসূল আল-ফিকহে মুসাল্লামুত-সুবুত। সাইয়্যিদ মুর্তদা ইবনে মুহাম্মাদ আল-বিলগিরামি আল-জাবিদি রহঃ  (মৃত্যু ১২০৫  হিঃ) লিখিছিলেন তাজুল-আরুস ফি শারহ আল-কামুসিন দশটি খণ্ড এটি একটি  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরবি অভিধান। মুহাম্মাদ শামসুল হক আল-আজিমাবাদী রহঃ  (মৃত্যু ১৩২৯ হিঃ) রচনা করেন ‘আউন আল-মাবুদ ফী শারহ সুনান । আবু দাউদ রহঃ  (মৃত্যু ১৩২৯ হিঃ), তিনি  বাদল আল-মাজহুদ ফী শারহ সুনান-এর মতো হাদিস লখেন।

মুহিবুল্লাহ বিহারী রহঃ এঁর রচিত  মুসাল্লামুত-সুবুত। 

সাহিত্যের শৃঙ্খলায় ভারতীয় পণ্ডিতরা কিছু অসাধারণ অবদান রেখেছেন। খলিল আহমাদ আল-সাহারানফুনি রহঃ (মৃত্যু ১৩৪৬হিঃ)  আবি দাউদ  মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। আবদ আল-রহমান আল-মুবারকফুরী রহঃ (মৃত্যু ১৩৫৩ হিঃ) রচনা করেন তুহফাতুল-আহওয়াদী ফি শারহ সুনান আল-তিরমিযী। ফাতহুল-মুলহিম ফি শারহ সহীহ মুসলিম  লেখেন  শাব্বির আহমাদ আল-উসমানী রহঃ  (মৃত্যু ১৩৯৬ হিঃ)। আওজাজ আল-মাসালিক ইলা শারহ মুওয়াত্তা’ লেখেন আল-ইমাম মালিক মুহাম্মাদ জাকারিয়া আল-কান্ধলভি রহঃ (মৃত্যু ১৪০২ হিঃ) ।

আরবী ভাষা ও সাহিত্য ঐতিহ্যটি পণ্ডিতদের দ্বারা এগিয়ে চলেছে ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ (স্থাপিত ১৮৬৬ খ্রিঃ) ও লখনউতে দারুল ‘উলুম নদওয়াতুল উলামা’ (স্থাপিত ১৮৯৪ খ্রিঃ) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে । আরবী ভাষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এবং এটি আজও ভারতের আরবি ভাষার বিশিষ্ট কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে। প্রথম থেকেই প্রবণতা ছিল পবিত্র কোরআন পড়ার এবং বোঝার উপর জোর দেওয়া। এটির পথপ্রদর্শক ছিলেন মাওলানা হামিদুদ্দিন ফারাহী রহঃ (মৃত্যু ১৯৩০খ্রিঃ)। যিনি তার অনন্য তাফসির নিজামুল-কুরআনকে একটি রিফ্রেশিং আরবি ভাষা ও শৈলীতে লিখেছেন। এই গ্রহন্থটি খুবই সাবলীল ও সহজ ভাষায় লিখেছেন। তিনি আরবি ব্যাকরণ এবং অন্যান্য বিষয়ে দরকারী বই রচনা করেছেন ।

ভারতে রচিত বেশিরভাগ আরবি রচনাগুলি ধর্মীয় থিমগুলির উপর রয়েছে , তবে দর্শনবিদ্যা, কবিতা, দর্শন, ইতিহাস, ভ্রমণ, জীবনী, বেলে-লেটার, ওষুধ এবং গণিত ইত্যাদির উপরও কাজ রয়েছে।

 

স্বাধীনতার পর ভারতে আরবী ভাষাঃ-

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর মুক্ত ভারত উপসাগর থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত বিস্তৃত আরব বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপনের সেতু হিসাবে আরবী ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। তা অনুধাবন করতে ভারতের জন্য দুর্দান্ত ভূ-রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক প্রাসঙ্গিকতা ছিল। ফলস্বরূপ ভারত জুড়ে কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকশ কলেজে নতুন আরবি বিভাগ খোলা হয়েছিল। আরব দেশগুলির সাথে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে।একটি সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক আরবি জার্নাল, সাকাফাতুল-হিন্দ ১৯৫৭ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেশন্স দ্বারা প্রকাশিত হয়। এবং আরবের ভারতীয় মিশনগুলি দ্বারা প্রকাশিত বেশ কয়েকটি আরবী পত্রিকা এবং নিউজলেটারও। বিশ্ব এগুলি ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এবং মাদ্রাসা দ্বারা কয়েক ডজন আরবী পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে কয়েকটি যেমন আল-বা’স আল-ইসলামির উচ্চ খ্যাতি রয়েছে। ভারতেও আরবী বই নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এগুলি বেশিরভাগই ধর্মীয় গ্রন্থ। তবে কবিতা, সাহিত্য এবং ইতিহাস ইত্যাদির কাজও অন্তর্ভুক্ত করে।

 

ভারতও আরবী প্রকাশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। হায়দ্রাবাদের দাইরাতুল মাআরিফ আল-উসমানিয়াহ, যেটি ১৮৮৮ সালে নিজাম রাজ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শত শত দুর্লভ আরবী পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও মুদ্রিত করেছে। আরব বিশ্বের পণ্ডিতরা এর পরিষেবার জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবেন। এটি এখনও হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে টিকে আছে। মুম্বাইয়ের আল-দার আল-কাইমাহ, একটি ব্যক্তিগত প্রকাশনা সংস্থা, অনেক আরবি বইও প্রকাশ করেছে যা আরব বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিল। উত্তর ভারতের দেওবন্দ উপমহাদেশে আরবি মাদ্রাসার বিশাল নেটওয়ার্কের চাহিদা পূরণ করে আরবি প্রকাশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে।

বর্তমান সময়ে ভারতে আরবী ভাষাঃ-

বর্তমান সময়ে ভারতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রাধিন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চলমান। যেখানে আরবী ভাষার উপরে পঠনপাঠনও চলছে। অনেকেই আরবী ভাষা নিয়ে গবেষণা করছেন।যদিও অনেক রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আরবী ভাষা স্বীকৃত দিতে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। তারপরেও ভারতে আরবী ভাষার বিস্তার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অনেকেরই অভিযোগ, আরবী একটা ভাষা,অন্যান্য বিদেশী ভাষার মতো আরবী ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেনা সরকার।

উল্লেখ্য,ভারতে শুধুমাত্র মুসলিমরা আরবী ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছেনা। বরং অন্যান্য ধর্মের ভাষা প্রেমিক মানুষেরাও আরবী শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কেনোনা আরবী ভাষা এখন ধর্মীও ভাষার গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। বরং তা এখন পেশা বা অর্থ উপার্জনের এক মাধ্যম হয়ে গিয়েছে। অনেকেই অনুবাদকের কাজ করতে আরবী ভাষাকে শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনুবাদের কাজের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। জাপান,চিন ও রাশিয়া সহ বহু দেশে বাণিজ্যি উন্নতি করণের জন্য আরবী ভাষা শিক্ষার উপরে জরদিচ্ছে।

অন্যদিকে আরবী ভাষা শিখে ভারত সহ অন্যান্য দেশে বহুজাতিক সংস্থাতে কাজের সুযোগও করে নিচ্ছেন অনেক আরবী শিক্ষার্থী।

১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’ উদযাপনঃ- 

আরবী ভাষাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’ উদযাপন করে থাকেন। চলতি বছরে (২০২১) আজ ১৮ ডিসেম্বর, তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস’টি উদযাপন করা হয় ।

https://www.facebook.com/GEMSeducation/videos/450954813311571

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর