Friday, April 18, 2025
23 C
Kolkata

মোদী জমানায় বিজ্ঞান হত্যা এবং গরুর রাজনীতিতে নিরীহ নাগরিকদের পিটিয়ে মারা — সবটাই ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্বের বহিঃপ্রকাশ

~ড. শামসুল আলম

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী রিলায়েন্স হাসপাতাল উদ্বোধনে দুটো জঘন্যতম অপবিজ্ঞান ঝেড়েছেন যা বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। ১. কর্নের জন্ম মায়ের গর্ভে হয়নি। ২. প্রাচীন ভারতে এমন একজন প্লাস্টিক সার্জেন ছিলেন যিনি গনেশের নাকে হাতির শূঢ় বসিয়ে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে মায়ের গর্ভ ছাড়া মানুষসহ কোন প্রানী এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি। এটাই একটা শিশুও জানে। কিন্তু মোদীর সেই ক্লাস ফোরের জীববিদ্যার জ্ঞান নেই। না থাকারই কথা কারণ তিনি ভুয়ো এম এ পাশ তো করেইছেন, উপরন্তু সার্টিফিকে জাল করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জায়গায় লেখেন, তিনি পাশ করেছেন ” পরিপূর্ণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান” নামক বিষয়ে। তখনই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। ২. প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে এমন একটি আষাড়ে মিথ্যা গল্প ঝাড়লেন যা শুনলে ঘোড়াও হাসে। শারীরবিজ্ঞান বলে, মানুষের সাথে মানুষের রক্ত মেলে। হাতির শূঢ়ের রক্তে মানুষ বাচে না। অথচ মোদী বাচিয়ে দিলেন। তাছাড়া এক মানুষের মাথা কেটে অন্য মানুষেরও লাগানো যায় না। মেডিকেল সায়েন্সের ক -খ -গ যার জানা নেই এমন মানুষ যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে সেই জাতির কপালে যে অশেষ দুঃখ আছে তা মোদীর গনেশীয় মিথ্যাচারে বোঝা গেল। আসল কথা হচ্ছে মোদীরা বিজ্ঞানের গেরুয়াকরণ চায় যা নিয়ে গরু ইসুতে আরো বোঝা গেল।


রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মতবাদের শেকড়ে আছে বিজ্ঞানের গেরুয়াকরণ এবং মুসলিম বিদ্বেষ। গরুর রাজনীতির মধ্যে রয়েছে দূর্গন্ধময় অপবিজ্ঞান। সংঘ পরিবার থেকে দুটো অসভ্য নিদান হাকা হয়েছে। ১. গরু নিশ্বাস প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহন করে্। গরুর কাছে গেলে সর্দি কাশির উপশম হয়। গোবর তেজস্ক্রিয়তা প্রশমন করে। গোবর মেখে গোমূত্র পান করলে কোবিড এবং কর্কট রোগ সারে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠে এটা আছে যে কোন পশু নি:শ্বাসে অক্সিজেন নেয় এবং প্রশ্বাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়ে। একসাথে গ্রহন ও বর্জন হয় না। এটা যারা বলছে সেই গেরুয়াপন্থীরা তারা নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী। তারা গরুকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে মিথ্যাচার করছে। আম্বেদকর ওদের মুখোস খুলে দিয়ে বলেছেন, তোমরা উচ্চবর্ণীয় হিন্দুত্ববাদীর দল গরুকে মা বলবে, তার রক্তের দুধ খাবে, আর আমরা দলিতরা মরা গরুকে ভাগাড়ে ফেলবো। চামড়া ছাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করতে গেলেও তোমরা আমাদের পিটবে মারবে। অতো যদি গোমাতার ভক্ত হও, তাহলে তোমরা কেন মাতাকে খাটিয়া করে নিয়ে কবরস্ত কর না।” তাছাড়া সবুজ তৃণক্ষেত্রকে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন বিলোপ করে রিয়াল এস্টেটের ব্যবসা করছে, খইল ভুষির দাম করছে আকাশ ছোঁয়া। আর এরপরেও তারা গোরক্ষার রাজনীতির নোংরামো চরম জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।


২. গেরুয়া ব্রিগেড গত দুই শতাব্দীতে বলে আসছে, গোহত্যা মহাপাপ। গোহত্যা বন্ধের আইন আনলো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো এবং যার ফলে গোমাংসের রপ্তানীতে যে ভারত ছিল বিশ্বে দ্বিতীয় ব্রাজিলের পর, সে আজকে চলে গেছে জিরোতে। ফলে প্রতি বছর ২ লাখ কোটি টাকা রপ্তানি বানিজ্যে মার খাচ্ছে। আর যারা গোমাংস বানিজ্য করছে তাদের অধিকাংশ অমুসলমান বেনিয়ারা। ভারতে গরু আছে ৩১ কোটি। তাই গোমাংস ছাগল ভেড়ার মাংস অপেক্ষা অনেক সস্তা এবং যার প্রোটিন ক্ষমতা সব মাংসের চেয়ে বেশি। পি কে ব্যানার্জী একবার বলেছিলেন, আমাদের ফুটবলারদের ধর্মীয় কুসংস্কারে আবদ্ধ রেখে বীফ খেতে না দিয়ে তারা রুগ্ন হয়ে ভাল খেলতে পারছে না। অকারণে ফুটবলের সর্বনাশ করা হচ্ছে। মুসলমান, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ২৫ কোটি ভারতীয় ছাড়াও আদিবাসী ও দলিতসহ মধ্যবিত্ত হিন্দুদেরও একাংশ বীফ খায়। অথচ ঋকবেদে স্পষ্টত বলা আছে বামুনরা বীফকে সবচেয়ে প্রিয় খাবার হিসাবে ভক্ষণ করতো। আর আজকে নওদার আখলাককে পিটিয়ে মারা হয়েছে ফ্রিজে বীফ রাখার মিথ্যা সন্দেহে। এরপর কয়েকশত যুবককে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মারা হয়েছে গরু ব্যবসা করা কিংবা বীফ বহন করার সন্দেহে যা ফ্যাসিস্ট শাসনের ট্রেডমার্ক ছাড়া আর কিছু নয়। গোহত্যা নিষিদ্ধ করার মানে সংবিধানের ২১ ধারার ব্যক্তিগত জীবন ও স্বাধীনতার পরিপন্থী শুধু না, লাখ লাখ বৃদ্ধ গরুকে খেতে না দিয়ে ঘরছাড়া গরুর উপদ্রবে বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রতি বছর অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার ফসলের লোকসান হচ্ছে। জহওরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর বিকাশ রাওয়াল বলেছেন, “গরুর আয়ুকে ৮ বছরের বেশি বাচিয়ে রাখলে ৫ লাখ একর বেশি জমির গোশালা করতে হবে যার আনুমানিক ব্যয় হচ্ছে ৫.৪ লাখ কোটি টাকা।” কিন্তু কোন সরকার এই দায়িত্ব তো নিচ্ছেই না, বরং একদিকে মোদী জমানা টেররিস্ট গোরক্ষকদের আস্কারা দিচ্ছে, আর অন্যদিকে চরম মেরুকরণ করার জন্য উত্তরপূর্ব ভারতে খ্রীস্টানদের তুষ্ট করতে বীফ চালু রেখেছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে গরুকে নিয়ে দাঙ্গা এবং গরুকে নিয়ে নোংরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে জাতীয় সংহতি আজ চরম সংকটে। গরুকে করা হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক, আর কোটি কোটি ভারতীয় মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করার অসাংবিধানিক পথ বেয়ে আজ বেনাগরিক করার জন্য NRC লাগু হচ্ছে।
সুতরাং একদিকে বিজ্ঞানকে গেরুয়াকরণ করে চরম অপবিজ্ঞানে নিয়ে যাওয়া, যুক্তিকে হত্যা করা আর অপরদিকে গরুর রাজনীতির নামে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দাঙ্গা, হত্যা এবং বেনাগরিকীকরণের সামনে ঠেলে দেওয়ার ফলে ফ্যাসিবাদের ভিত্তি রচনা করেছে হিন্দুত্ববাদী মোদী জমানা। এই জগদ্দল পাথরকে অপসারণ করা এই সন্ধিক্ষণে ১৪২ কোটি মানুষের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Hot this week

মুর্শিদাবাদের রেললাইনের ধারে বোমা রেখে পালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ল দুই যুবক

প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে বারংবার মুর্শিদাবাদের নাম উঠে...

উর্দু ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, আদালতে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করল উচ্চ আদালত

বিখ্যাত রক তারকা রুপম ইসলাম লিখেছিলেন, 'ভাষা কোন অবোধ...

কেন শতাব্দী রায় লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কোনো পক্ষেই ভোট দিলেন না?

কেন শতাব্দী রায় লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কোনো...

Topics

মুর্শিদাবাদের রেললাইনের ধারে বোমা রেখে পালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ল দুই যুবক

প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে বারংবার মুর্শিদাবাদের নাম উঠে...

কেন শতাব্দী রায় লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কোনো পক্ষেই ভোট দিলেন না?

কেন শতাব্দী রায় লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কোনো...

ছত্তিশগড়ের রায়পুরে চার্চে হামলা : বজরং দলের অভিযুক্ত, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

ছত্তিশগড়ের রায়পুরে ওয়াআরএস কলোনিতে প্রায় ২০ বছর আগে তৈরি...

“শুভ নয় এই নববর্ষ” – চাকরি হারানোদের প্রতিবাদ মিছিল কলকাতা ও দিল্লিতে

নববর্ষের দিনে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, কলকাতার রাস্তায় নামলেন বহু চাকরিহারা...

Related Articles

Popular Categories