রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৭,আহত ২০০০ এর বেশি, ভষ্মিভূত ১০,০০০ ঘর;আহতদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বাড়তে পারে বলে শঙ্কা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

1616478940_received_499894641174205

নিউজ ডেস্ক : হৃদয় বিদারক দৃশ্য উঠে আসছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। গতকাল লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবরে মৃত্যুবরণ করেছেন এক মহিলা ২ শিশু এবং ৪ বৃদ্ধসহ সাতজন। আহত হয়েছেন সরকারি হিসাব মতে দুই হাজারেরও বেশি। তবে এখনো পর্যন্ত অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। আগুনের লেলিহান শিখায় ভষ্মিভূত হয়েছে অন্তত দশ হাজার ঝুপড়ি ঘর। এমনকি আগুনের হাত থেকে রেহাই পায়নি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের অফিস এবং পুলিশের ছাউনীগুলি ও। আহতদের চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এবং সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলি করে উঠতে পারেনি বলে জানা গেছে। খুব বেশি হলে অগ্নিদগ্ধ ২৫ থেকে ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

সোমবার বিকাল চারটার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ই ও ডাব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯, ১০ ও ১১ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে গেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন হাসপাতাল, এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।

এদিকে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ব্লকওয়াইজ হিসেব মতে অগ্নিকাণ্ডে ৯ হাজার ৫৮০ টি ঘর বা রোহিঙ্গা শেড, স্থানীয় ৩শত বাড়ি, ১২ শত দোকান, কয়েকটি হাসপাতাল ও এনজিওদের ডিস্ট্রিভিউশন সেন্টার পুড়ে গেছে।
৯ নং ক্যাম্প এর চেয়ারম্যান আবু তাহের এই তথ্য জানিয়েছেন, ক্যাম্প-০৯ এর ৮ হাজার ৭৬০ টি ঘর রয়েছে। তার মধ্যে ৬হাজার বাড়ি পুড়ে গেছে।

আগুনে পুরো ক্যাম্প এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেকে অন্য ক্যাম্পেও আশ্রয় নিয়েছে। প্রাণ বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করে রাস্তা ঘাটে। এ সময় অনেকে আহত হয় এবং অনেক শিশু হারিয়ে গেছে বলে তাদের স্বজনরা জানান।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, প্রাণান্ত চেষ্টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা মুশকিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. হামিদ জানান, আগুনে তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ৫ শতাধিক ঘরসহ অন্তত এক হাজারেরও বেশি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মায়ানমারের বলিবাজার খ্যাত সবচেয়ে বড় মার্কেট বালুখালী বাজার। এতে অর্ধশতাধিক কোটি টাকা মূল্যের মালামাল পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় পুড়ে অঙ্গার হয়েছে তিন শিশুসহ সাতজন।কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

 

চরম মানবিক সংকট গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন ২০১৯ সালে। সেই থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন এবং প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মায়ানমারের মধ্যে বহুবার আলোচনা হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অবশেষে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তায় ভাসানচরে খুব ক্ষুদ্র এলাকায় অসংখ্য ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর