হিন্দুত্ববাদীদের কূটকৌশল ধীরে ধীরে নোংরা পথ ধরছে, প্রতিবেদন The Economist এর

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

Rw1_630_630_571_855

নিউজ ডেস্ক : কয়েক সপ্তাহ আগে দিশা রবি নামের এক ২২ বছর বয়সী পরিবেশবিদকে পুলিশ তার বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে দিল্লিতে চালান করে। ভারতের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করার উপায় সম্পর্কিত একটি গুগল নথি প্রতিবাদকারীদের সাথে শেয়ার করায় রবিকে পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যার জন্য তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। ভারত সরকারী মুখপাত্ররা ভারতকে বিভক্ত করে ফেলার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের জন্য রবিকে অন্যতম ধ্বংসাত্মক হাতিয়ার হিসাবে চিত্রিত করেছে।

২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তার নিজস্ব কুটকৌশলের বাক্সটিকে ক্রমেই নোংরাভাবে ব্যবহার করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুদের, বিশেষত মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তাদের একটি বিশেষ কার্যকর কৌশল হ’ল, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে ‘দেশদ্রোহী’র তকমা আরোপ করে হাজার হাজার হিন্দু উগ্রবাদীদের ট্রোল পরিচালনা করা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মোদি নিজেই পশ্চিমবঙ্গে প্রচারণার চালানের সময় সংখ্যালঘুদের স্বস্তির অবসান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

একই দিনে দক্ষিণের ক্ষুদ্রাঞ্চল পুদুচেরিতে মোদির বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। এ নিয়ে এটি ৯ম রাজ্য যেখানে মোদির বিরোধীদের পতন ঘটেছে বিজেপির ঘোড়া ক্রয়ের ফলে। রবি তার জামিনের কয়েক দিন আগে দিল্লিতে মুসলিম ৩ তরুণকে ১১ মাস জেলের রাখার পর জামিন দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় আরেক মুসলিম যুবককে গুলি করার ভিত্তিহীন বানিয়াট অভিযোগ আনা হয়। গত বছর এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা যায়। তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মুসলিম ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকার জন্য বিচারক পুলিশকে তিরস্কার করেন।

এ মামলার বিচারকালীন একটি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে করা একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে রাস্তার ওপারের ছাদে জড়ো হওয়া কিছু হিংস্র হিন্দু যুবকদের একজন রাইফেল থেকে গুলি ছুড়েছে, যার আক্রমণের অবস্থান মৃত মুসলিম তরুণের ক্ষতের সাথে মিলে যায়। পুলিশ একপেশেভাবে দাঙ্গার তদন্ত করেছে এ ধারণা দেয়ার জন্য যে, মোদির সরকারকে বিব্রত করার জন্য মুসলিমরা একে অপরকে হত্যা করেছে। ফলস্বরূপ, তারা এমন ফুটেজ উপেক্ষা করেছেন, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে যে, বিজেপির উগ্রবাদীদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ সদস্যরা একযোগে মুসলিম নিধনে কাজ করেছেন।

ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক আন্দোলনের রূপকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর আদি প্রাণ পুরুষ কথিত “সিদ্ধ চিন্তাবিদ” এমএস গোলওয়ালকারকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। গোলওয়ালকার বিশ্বাস করতেন যে, জার্মানির নাৎসিদের ইহুদি নিধনের মতো ঘটনা এদেশের মুসলিমদের সঙ্গেও করা উচিত। তিনি ভারতের সংবিধান নিয়েও অনেক বিরোধিতা করেছিলেন। গোলওয়ালকারের দৃষ্টিতে এটি ভারতের একক হিন্দু জাতীয়তাবাদীত্বের ক্ষেত্রে বদ্ধমূল নয়। তার কৌশল পরিবর্তনের আহবান ক্রমেই আরো শক্তিশালী শ্রোতা সমাজ তৈরি করে চলেছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর