বেঁচে থাকতে গেলে পাল্টাতে হবে হার্ট। কথাটা শোনা মাত্রই মাথায় আকাশ পড়ার মত অবস্থা হয়েছিল ফারাক্কার বাসিন্দা জিয়াউল হকের পরিজনদের মধ্যে।
সামান্য দর্জির কাজ করেন ওই যুবক। টাকা খরচ করে চিকিৎসা করার টাকাও নেই তার। কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে। হাবরার এক স্কুল শিক্ষিকা মঞ্জুবালা ভক্তের ব্রেন ডেথ হবার পর তার হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করে নতুন জীবন পেলেন ফারাক্কার জিয়াউল।
উল্লেখ্য এই অস্ত্রপাচারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প থেকে মিলেছে ৫ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এদিক ওদিক করে জোগাড় করেছেন বলেই পরিবার সূত্রে খবর।
১০ই জুলাই এই হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয় বলেই জানা গেছে। এখনো মেডিকো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও আপাতত স্থিতিশীল ফারাকার ওই যুবক।
ওই হাসপাতালের ‘কার্ডিয়োথোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জারি’ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কুণাল সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্যাকেজ আছে বলে জানা ছিল না।
কিন্তু বিষয়টি জানা জানি হতেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অস্ত্রোপচারের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ভবন। তার পরেই প্রক্রিয়া শুরু করি।’’
জিয়াউলের নাম নথিভুক্ত করা হয় রিজিয়োন্যাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন (রোটো) এবং ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন (নোটো)-এর পোর্টালে।
মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার জিয়াউলের। গত কয়েক মাস ধরে সে লক্ষ্য করে তার বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।অল্প হাঁটা চলাতেই হাঁপিয়ে উঠতেন তিনি। যদিও বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পরে তার। এমনকি হৃদরোগ সংক্রান্ত অনেক ডাক্তারের কাছেও দেখান তিনি।
সেই ডাক্তারের কাছে জানা যায় ওই যুবকের হার্ট ফেলিওয়ের একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। পরে কলকাতায় এসে বেশ কিছু পরীক্ষা করেন। আর তারপরেই জানতে পারে সে , বাঁচতে গেলে একটাই মাত্র পথ তার হাতে পরে রয়েছে। সেটি হল হার্ট প্রতিস্থাপন করতে হবে।
তারপরেই তিনি তার নাম কয়েক জায়গায় নথিভুক্ত করেন। কিন্তু এত সহজে কে দেবেন তাকে হার্ট ? সেই নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিল তার পরিবার। কিন্তু ওই যে কথাই আছে রাখে আল্লাহ মারে কে। ঠিক একই সময় বাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট পাওয়া দেবীর ব্রেইন ডেথ ঘোষণা হয়। তার হৃদযন্ত্র ওই যুবককেই দেয়া হয় বলে জানা গেছে।