অমল সরকারের “বাবরি ধ্বংসের তিন দশক ষড়যন্ত্র সুবিধাবাদের আখ্যান” শিরোনামে বই প্রকাশিত হল

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

বই প্রকাশের মুহূর্ত।
বই প্রকাশের মুহূর্ত।

নিজস্ব সংবাদ দাতা, কলকাতাঃ  রবিবার সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে আয়োজিত ৪৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে (২০২২) শঙ্খ ঘোষ মঞ্চে প্রকাশিত হল সাংবাদিক অমল সরকারের নতুন বই ‘বাবরি ধ্বংসের তিন দশক ষড়যন্ত্র সুবিধাবাদের আখ্যান।’ প্রকাশক উদার আকাশ পাবলিকেশন। বইটির মোড়ক উন্মোচন উপস্থিত ছিলেন  সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায়, অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়, সুমন ভট্টাচার্য, ইমানুল হক, পরিমল সরকার, কবি প্রবীর ঘোষ রায় লেখক অমল সরকার, উদার আকাশ প্রকাশক ফারুক আহমেদ।

উদার আকাশ প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার গবেষক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, এই বইয়ে আছে ভারতে মন্দির-মসজিদ রাজনীতির বিকাশ, কংগ্রেস, বিজেপি এবং আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে ষড়যন্ত্র এবং গত তিন দশকে সমাজ, রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ধারাবিররণী, যা তথ্য ভরা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, বিশ্লেষণের আখ্যান।

যেমন, বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের কাঙ্ক্ষিত হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত গ়ড়ে দিয়েছিলেন যে দু’জন তাঁদের সঙ্গে খাতায় কলমে অন্তত বিজেপির হিন্দুত্বের কোনও সম্পর্ক ছিল না। একজন রাজীব গান্ধী। অপরজন পামুলাপর্তি ভেঙ্কট নরসিংহ রাও। দু’জনেই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন।

অযোধ্যায় যে জমিতে বিজেপির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেছেন, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি উন্মত্ত করসেবকেরা সেদিন ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারত না যদি মন থেকে তা চাইতেন রাও।

তার আগে বন্ধ মসজিদের তালা খুলে দিয়ে সেখানে হিন্দুদের রামলালার পূজাপাঠের সুযোগ করে দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী, আর এক কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি। দুই কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন পথে হাঁটলে দেশ ও দশের রাজনীতি কোন খাতে বইত, মসজিদ অক্ষত থাকলে রামজন্মভূমি মামলায় কী রায় দিত সুপ্রিম কোর্ট, এ সব প্রশ্ন আজ সামনে আসা স্বাভাবিক।

রাওয়ের নিষ্ক্রিয়তা আর উত্তরপ্রদেশের সেদিনের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির কল্যাণ সিংয়ের সক্রিয় ভূমিকায় মসজিদ ধ্বংসের পাশাপাশি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার ভীতটিও। বাবরি ধ্বংস এবং মন্দির-মসজিদ রাজনীতির সঙ্গে এমন নানা ঘটনার সূত্রে জুড়ে আছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ভূমিকা। মন্দির-মজজিদ আন্দোলনে কী ভূমিকা ছিল লালকৃষ্ণ আদবানি, অটলবিহারী বাজপেয়িদের। বাজপেয়ি কি সত্যিই মসজিদ ধ্বংস চাননি? কী বলে তথ্য, নথি? পুলিশ-প্রশাসন থেকে আদালত, এই পর্বে কার ভূমিকা কেমন?

ধর্মকে ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান। খণ্ডিত দেশের বৃহৎ অংশ ভারত সেদিন ধর্মের মায়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করেনি। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি অনেক পরে অন্তর্ভুক্ত হলেও গোড়া থেকেই আমাদের সংবিধান সেই ভাবনার শরিক। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সংবিধানের সেই মূল ভাবনা এবং স্তম্ভটিকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে।

বলতে গেলে সেদিন থেকেই হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার পথে যাত্রা শুরু এ দেশের। তিন দশক পর, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ফারাক শুধু সংবিধানের ঘোষণাপত্রে। বাস্তবে আমরা এখন আর একটা পাকিস্তান। ওরা ঘোষিতভাবেই ইসলামিক রিপাবলিক, আমরা অঘোষিত হিন্দু রিপাবলিক।

বাবরি ধ্বংস এ দেশের সমাজ ও রাজনীতির ডিএনএ-তে বদল এনে দিয়েছে। দেশপ্রেমকে ছাপিয়ে গিয়েছে হিন্দুত্বে আস্থার জিগির। হিন্দুত্ববাদী মানেই দেশপ্রেমিক, এমন ধারণা এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস পরবর্তী রাজনীতিতে বিজেপি যেমন লাভবান, তেমনই স্বঘোষিত পদ্ম-বিরোধী শিবিরে প্রায় সব দলই বিগত তিন দশকে নিজের নিজের মতো করে মন্দির-মসজিদ রাজনীতির ফায়দা তুলেছে। লক্ষণীয় হল, বেশিরভাগ দলই বিজেপি বিরোধিতায় গেরুয়া রাজনীতির সংস্কৃতিকেই আঁকড়ে ধরছে। ফলে নরেন্দ্র মোদীর দল আজ অর্ধেকের সামান্য কয়েকটি বেশি রাজ্যে ক্ষমতাসীন হলেও তাদের রাজনীতির বিস্তার ঘটেছে অনেক বেশি। ভোট-বাক্সে বিজেপির সাফল্য দিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাবকে মাপা যাবে না।

এদিন কবিতা পাঠ করেন কবি অংশুমান চক্রবর্তী, প্রবীর ঘোষ রায়, লিপিকা মজুমদার, সৈকত ঘোষ, প্রত্যুষা সরকার, সুব্রতা ঘোষ রায়, শর্মিষ্ঠা সিনহা প্রমুখ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর