হিন্দুত্ববাদীদের চাপে মসজিদের অংশ ভাঙতে বাধ্য হল দিল্লির মুসলিমরা,এখন দাবি পুরো মসজিদের অপসারণ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

mcms (1)

স্পেশাল রিপোর্ট : ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে দিল্লির উত্তম নগর এলাকায় রাজা জামে মসজিদ এবং সনাতন ধর্ম মন্দির ২৫ মিটার দূরত্বে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে কোনো দুটি সম্প্রদায়ের অনুসারীদের পারস্পরিক মেলবন্ধন সৌহার্দ্য এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে মোদী জমানায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আক্রান্ত করেছে এই সাম্প্রদায়িক সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশকেও। যেখানে মুসলিম এবং হিন্দুরা একে অপরের পরিপূরক এবং একান্ত আপন প্রতিবেশী ভাবত সেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের প্রবেশে হিন্দু সম্প্রদায় এখন মুসলমানদেরকে নিজেদের শত্রু হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। যেখানে আযান এবং মন্দিরের ঘণ্টা ধ্বনি শোনা যেত সেখানে এখন গেরুয়া উগ্রবাদীদের জয় শ্রীরাম ধ্বনি শোনা যাচ্ছে নিত্যদিন, আযান এবং মসজিদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। উগ্রবাদীদের চাপে এতটাই কোণঠাসা মুসলিমরা যে তারা নিজেরাই মসজিদের একটা অংশ ভেঙে ফেলেছেন সম্ভাব্য যে কোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এড়ানোর জন্য। কিন্তু এখনও উগ্রবাদীদের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। তাদের দাবি সম্পূর্ণ মসজিদের ধ্বংস।

 

২০০৮ সালে মন্দির কমিটি মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে একটি মামলা করে ওই মসজিদটির অপসারণের জন্য। মোদি জামানার মুসলিম বিরোধী পরিবেশ না থাকা সেই সময় আদালত নির্দেশ দেয় মসজিদ এবং মন্দির আপন আপন জায়গায় বিদ্যমান থাকবে। সেই থেকে আর কোনো সমস্যা দেখা যায়নি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মসজিদকে কেন্দ্র করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এমব্রয়ডারি কাজের সঙ্গে যুক্ত এক মুসলিম ব্যক্তির মা মারা যাওয়ায় তিনি সেই মসজিদের ভেঙে পড়া অযুখানা পুনঃনির্মাণ করে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তারপর মন্দিরের কমিটির সবার সামনেই তাদের কোনো অভিযোগ ছাড়াই অযুখানার সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয় শুধু মাত্র টাইলস বসানো ছাড়া। কিন্তু সেই পর্যায়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ এই অযুখানার ব্যাপারে আপত্তি তোলে এবং কিছু হিন্দুত্ববাদী নেতারা বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তাদের অভিযোগ মসজিদ কমিটি আদালতের নির্দেশ লংঘন করে মসজিদের অজুখানার আয়তন বৃদ্ধি করেছে। তবে মসজিদ কমিটি বিষয়টি অস্বীকার করে। কিন্তু মুসলিমরা বিষয়টা যাতে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর্যায়ে না যায় তাই অযুখনার বর্ধিত অংশটি ভেঙে ফেলে।

কিন্তু তাতেই থেমে থাকেনি মন্দির কমিটি। এই মার্চ মাসের শুরু থেকে তারা পুরো অজুখনা ভেঙে ফেলতে চাপ সৃষ্টি করছে মসজিদ কমিটির অপর। এর নেতৃত্বে ছিল স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রদায়িকতার দূত এক বিজেপি নেতা, হারিরাজ হার্যাই। তিনি বলেন, মুসলিমরা যা ইচ্ছা তাই করলে মোদি জমানায় হিন্দুরা চুপ করে থাকবে না। তার নেতৃত্বেই জড়ো করা হয় বজরং দলের মতো আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কর্মীদের তারা মসজিদের বাইরে এসে অজুখানা ভাঙ্গার জন্য সমাবেশ করে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে মসজিদ কমিটি নিজেদের মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে পুরো অযুখানে ভেঙে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি নিজেদের সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা পূরণ করে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ সেই অযুখনা ভাঙার সময়ই মসজিদের বাইরে মুসলিমদের উত্তেজিত করার জন্য ক্রমাগত জয় শ্রীরাম সহ অনেক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রণোদিত স্লোগান দিতে থাকে। তা সত্বেও মুসলিম যুবকরা সর্বোচ্চ সংযমের পরিচয় দিয়ে নিজেদের শান্ত করে রাখে।

এত কিছু করার পরও শান্তি পায়নি উত্তম নগরের মুসলিমরা। বজরং দলের কর্মীরা বার বার মুসলিমদের ওই মসজিদটির আযান বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছে বলে জানান মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মুহাম্মদ মতি। এমনকি এখন তারা পুরো মসজিদটি ভেঙে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছে। স্থানীয় থানা থেকে বার বার মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্য আশ্বাস দিলেও উগ্রবাদীদের ক্রমাগত হুমকির মুখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না মুসলিমরা। যদিও মতি বলেন, স্থানীয় হিন্দুদের বেশিরভাগ শান্তিপ্রিয় এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম ব্যবহার করেন কিন্তু বহিরাগত অনেকের প্রভাবে সেখানকার পরিবেশ সাম্প্রদায়িকতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পুলিশের তরফ থেকে দুই পক্ষকে হোলির পর একটা একত্রিত করে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর