রফিকুল- হত্যার তদন্তে ঘটনাস্থলে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম, মৃতের কন্যার পড়াশুনার দায়িত্ব নিল পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20210910-WA0082

এনবিটিভি ডেস্ক:উত্তরপ্রদেশে নয়, নয় মধ্যপ্রদেশ কিংবা রাজস্থান অথবা গুজরাট কিংবা ঝাড়খন্ড। সংস্কৃতির পীঠস্থান খোদ পশ্চিম বাংলার বুকে বৃহত্তর মুসলিম অধ্যুষিত জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার নদীমাতৃক থানা বাসন্তীর বুকে ঘটে গেল পয়েলা সেপ্টেম্বরে হাড় হিম করা নারকীয় ঘটনা।

 

আবার মনে করিয়ে দিল, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকের উপরে এক নির্মম অত্যাচারের জলন্ত জল ছবি। পশ্চিম বাংলা তথা ভারতের প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া যখন আফগানিস্তানে তালেবানের আফগান শাসনের চাল চরিত্র নিয়ে উৎকণ্ঠিত, তখন তাদের উৎকণ্ঠার দৃষ্টি পড়ে না এরকম একটি চাঞ্চল্যকর সভ্যতার লজ্জাজনক ঘটনায়।

গত পয়লা সেপ্টেম্বর জীবনতলা থানার অন্তর্গত বছর ত্রিশের মুসলিম যুবক রফিকুল মোল্লা ওরফে বাকী বিল্লাহ ঘটনার দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৫ টার সময় একটি অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে ফোন আসে এবং ফোন আসার পরে তাঁর স্ত্রীকে একটু পরে আসছি বলে বাড়ি থেকে বাইকে বের হয়ে যান। পরে প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় যে, বাসন্তী থানার অন্তর্গত চোড়াবিদ্যা গ্রামের উগ্র হিন্দুত্বের আদর্শেই লালিত-পালিত তথাকথিত জঙ্গী সংগঠন আরএসএস –এর ট্রেনিংপ্রাপ্ত সুযোগ্য ক্যাডাররা নির্মম অত্যাচার চালায়।

প্রথমে তারা বাকি বিল্লার হাত, পা বেঁধে অমানবিক অত্যাচার করে। তারপর পায়ে দড়ি বেধে মাথা, মুখ নিচু করে ঝুলিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে মারতে থাকে । তাতে ক্ষান্ত না হয়ে, গরম জল গায়ে ঢেলে দেয়। তারপর ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে নির্বিচারে গায়ে ফোটায়।

একই পরিবারের ৬ ভাই ও তাঁদের মা আরএসএস –এর মহিলা সংগঠনের দুর্গা বাহিনী নেত্রীর নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ক্যাডার বাহিনী এবং সক্রিয় সদস্যগন সম্মিলিত ভাবে মোবাইল চোরের অজুহাতে সম্মিলিতভাবে সারারাত ধরে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করে। নারকীয় অত্যাচারের সময় মৃত ব্যাক্তি পিপাসায় কাতর হয়ে এক ফোটা জল পান করতে চাইলেও তাঁকে পান করার জন্য জল দেয়নি। এবং এই নারকীয় অত্যাচারের নারকীয় তান্ডব ভিডিও রেকর্ডিং করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেয়। এবং আশ্চর্যের বিষয় এলাকার হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে কোন মানুষ মৃত বাকিবিল্লা কোন ধরনের কোন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলেও নিশ্চয়তা দেননি । সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছে যে, মৃত বাকিবুল্লা একজন সাধারণ, সরল, সহজ নিরীহ ব্যাক্তি ছিলেন।

মৃত ব্যক্তির বাইক ভেঙে চুরমার করে দেয় এবং এন্ড্রয়েড ফোনটি কেড়ে নেয়। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায় যে, একটি অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে, যে ফোন পাওয়ার পর মৃত ব্যক্তি বেরিয়ে যায়। এই থেকে একটা জিনিস বোঝা যায় প্রমাণ লোপাট করার জন্য ফোননটি আসামিরা নিয়ে নেয় এবং ফোনটির আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

পরে বাসন্তী থানার পুলিশ সকাল আটটার সময় খবর পেয়ে যখন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন সেখানকার হাসপাতালে চিরদিনের মত এই দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় একটা অসহায় তরতাজা প্রাণ। সাক্ষী থাকলো এ বাংলা। আবার সাক্ষী থাকলো সম্প্রীতির পীঠস্থানে মৈত্রীর উর্বর ভূমি বাংলার বুকে নারকীয় লজ্জাজনক এ ঘটনা।

যে ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার একটি দল গত ৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার মৃত বাকিবিল্লার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেই সঙ্গে বাসন্তী থানার ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ঘটনাস্থল ঘুরে এলাকার নিরপেক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। যে দলের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি রেজাউল শেখ, সম্পাদক নজরুল মন্ডল, এছাড়া আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল প্রতিনিধি।

ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস টিমে ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের অন্যতম সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার তথা সমাজ কর্মী আইনজীবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদার। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গত ৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার আনুমানিক বেলা বারোটার সময় প্রথমে ভিকটিম তথা আক্রান্ত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে মৃত রফিকুল মোল্লা ওরফে বাকী বিল্লাহ মোল্লার মা, বাবা, ভাই, দাদা, বোনদের ও তাঁর স্ত্রী এবং নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলে। একই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, মৃত বাকিবিল্লা ছিল পরিবারের একমাত্র আয়-উপার্জনশীল ব্যক্তি তাই পরিবারের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি আজ দিশেহারা, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আতঙ্কিত।

ভিকটিম পরিবার পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস টিম -এর মাধ্যমে উপযুক্ত তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে । সেই সঙ্গে মৃত পরিবারের আর্থিক ভাবে পুণ্য সহায়তার দাবি জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে। মৃত বাকিবিল্লাহর নাবালিকা মেয়ের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া । সেই সঙ্গে ভিকটিম পরিবারের লোকজন যথাযথ আইনি লড়াই করার জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা জেলা কমিটি ও ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের এক ফাইন্ডিংস টিম এর উপরে লিখিতভাবে আবেদন জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে উক্ত আসামিদের যথাযথ উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন যৌথভাবে আইনজীবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদারের উপরে দায়িত্বভার অর্পণ করেন।

দায়িত্বভার পেয়ে আইনজীবী মানবাধিকার কর্মী তথা সমাজসেবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদার বলেন যে, “মৃত বাকি বিল্লার উপর অত্যাচারকারী অভিযুক্তদের যথাযত উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন আইনি লড়াই করা হবে, যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য ।এবং তার প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, যাওয়া হবে । কিন্তু কোনো ভাবে কোনও অবস্থাতে আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।”

এই ফাইন্ডিংস টিম পরে বাসন্তী থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জের সঙ্গে দীর্ঘক্ষন তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন এবং সেখান থেকে জানা যায় যে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাসন্তী থানা একটি মাডার কেস রুজু করে। যে কেসে মোট ১৬ জন আসামী হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া মৃত বাকিবুল্লার নারকীয় অত্যাচারের ভিডিও ফুটেজ দেখে  বাসন্তী থানা ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। যারা বর্তমানে বিচার বিভাগীয় জেল হেফাজতে রয়েছে ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর