~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি
আজ যেটা টাটকা কাল সেটা বাসি খবর। লাপিয়ারের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে যখন মন খারাপ, গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত এলো এনবিটিভির কর্ণধার নিজামের ফোন, চ্যানেল হ্যাক করার চেষ্টা করছিল কে বা কারা। আমার সাজেশন ছিল চলো লালবাজারে সাইবার সেল এ, ওরা চেষ্টা করলে সব পারে। নিজাম স্বভাব সিদ্ধ ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে জানালো যারা করেছে তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে।
ছুচো মেরে হাত গন্ধ করে লাভ কি! এর আগেও আমাদের পেছনে লাগার চেষ্টা হয়েছে, রিপোর্ট করে বারবার অফ ট্র্যাক করার চেষ্টা হয়েছে। নিজাম, হাসিবুরের মত তরুণরা হয়তো জানেনা, এই হ্যাকিং এর মানে ব্যাক হ্যান্ড কমপ্লিমেন্ট। আমরা বেসিক্যালি কাঁকড়ার জাত। কেউ কারো ভালো সহ্য করতে পারিনা। এসব না করে সুস্থ প্রতিযোগিতা করে পারফরর্মেন্স এর জোরে আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভালো বন্ধু না হতে পারো ভালো শত্রু হয়ে দেখাও। এটা ক্লাস এর ব্যাপার, যারা করেছে তাদের সম্পর্কে যত কম বলা যায় তত ভালো।
যাক, এবার আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। অনুজ প্রতীম মাসুদের ফেসবুক পোস্টে জানলাম “Freedom at midnight”, “City of joy” এর লেখক ডমিনিক ল্যাপিয়ার আমদের ছেড়ে চলে গেছেন। অন প্রিন্সিপাল গদি নিউজ বয়কট, টিভির খবর দেখা বন্ধ করেছি। সকালের কাগজ ছাড়া গতি নেই।
বাড়িতে 4টি ইংরেজি আর 2টি বাংলা কাগজ আসে। কোনও খবর নেই। মনে শঙ্কা মাসুদ ভুল খবর পোস্ট করলো! মাসুদকে ফোন করলাম, বেচারা সিজন চেঞ্জের শিকার, ঘুম ভাঙিয়ে ওঠালাম। মাসুদ জানালো সমাজসেবী ওয়াহাবের কাছে খবর পেয়েছে। আমার কলজে যেন মুখে উঠে এলো। অনেকদিনপর স্কুপ নিউজ শরীর টানটান করে দিলো। মনে পড়ে গেল প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা। তখন বোম্বে ছিল আমার ঘরবাড়ি। কলকাতার এক নতুন দৈনিকে বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির খবর লিখি। নামী ফিল্মস্টার দের ইন্টারভিউ , ফিচার বা পলিটিক্যাল নিউজ কিছুই বাদ দিই না। কোলাবার ইরানি রেস্তোরায় বসে মাশকা বান আর কাটিং চা নিয়ে বসেছি, আমার উল্টো দিকে বসে এক বিদেশী জুটি কিমা ঘোটালা দিয়ে রুটি খাচ্ছে। পাশের পড়া কাগজে নজর পড়ে চমকে উঠলাম কাশ্মীরি উগ্রপন্থীরা ইন্ডিয়ান অয়েলের এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দোরাইস্বামি কে মুক্তি দিয়েছে। নাস্তা ফেলে ইন্ডিয়ান অয়েলের হেড অফিস বান্দ্রা। ওদের পাব্লিক রিলেশন যিনি ছিলেন সেই ভদ্রলোককে অনুরোধ করলাম ইন্টারভিউ অ্যারেঞ্জ করার জন্য।।
নতুন কাগজ এর নাম করলে পাত্তা দেবেনা তাই মরিয়া হয়ে সবথেকে বেশি সার্কুলেটেড দৈনিক আতঙ্ক বাজারের কথা বললাম। বরফ গললো। এবার ফোন করলাম বড়ো কাগজে রঞ্জনদা ফিচারের দায়িত্বে, রঞ্জনদা চিনতেন আমাকে, আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টের বস। গ্রীন সিগনাল পেলাম। আতঙ্কবাজারের দুটি রিপোর্টার তখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। গোটা দিন পুরো ভদ্রলোকের সঙ্গে কাটালাম। মিনিটে মিনিটে চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস। লাঞ্চ করলাম ইন্ডিয়ান অয়েলের ক্যান্টিনে। ওখানে অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী সবাই লাইনে দঁড়িয়ে দাড়িয়ে কুপন কেটে খাবার নিচ্ছে। পেট ভরা খাবার। বিকেলে ইন্ডিয়ান অয়েলের চিফ একজিকিউটিভ কৃষ্ণমূর্তি দোরাইস্বামীর সঙ্গে দেখা হলো। যিনি 72 দিন কাশ্মীরি জঙ্গিদের হাতে বন্দী ছিলেন।
ইন্টারভিউ ছাপা হলো আতঙ্কবাজারে। কিন্তু লেখার টাকা আজ অবধি পাইনি। হয়ত আতঙ্কবাজারের বোম্বের রিপোর্টারদের বিট করেছি বলে হিংসার ফল, যেমনটা এনবিটিভির সঙ্গে সামনা সামনি করতে না পেরে হ্যাকিং করার মত কাকতালীয় হলেও হতে পারে।
যেজন্য লিখতে বসেছিলাম সেই পৃথিবী বিখ্যাত থ্রিলার লেখক ডমিনিক লাপিয়ার আমাদের ছেড়ে গেছেন। 91 বছরের লেখকের অটোগ্রাফ করা উপহার দেওয়া বই আছে আমার কাছে। গদি মিডিয়ায় আগেই আমরা নিউজ ব্রেক করলাম।
লিখতে পারতাম লিখলাম না কারণ দক্ষিণ ২৪ পরগণার সমাজসেবী আব্দুল ওয়াহাব দিনের পর দিন লাপিয়েরের সঙ্গে মিশেছেন, কাজেই ওর সাক্ষাৎকার আমার লেখার চেয়ে ঢের ভালো হবে। তাই …..