তৃণমূলেরই জয়োৎসবের বলি তুহিনা খাতুন!  বাবা শাসক দলের সমর্থন করলেও রেহাই পেলনা মেয়ে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

তুহিনার পরিবারে শোকের ছায়া।
তুহিনার পরিবারে শোকের ছায়া।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বর্ধমানঃ তৃণমূল জিতেছে৷ কিন্তু তাঁর পরিবার তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থন করেনি ভোটপর্বে। সেই অপরাধে বাড়ির দরজার এঁকে দেওয়া হয়েছিল তিন বোনের ঝুলন্ত মৃতদেহের ছবি। বুধবার ভোটের ফল বেরনোর পর বাড়িতে চড়াও হয়ে দেওয়া হচ্ছিল ধর্ষণ করে খুনের হুমকি। সঙ্গে বোমাবাজি, দরজায় লাথি। সম্ভাব্য অত্যাচার থেকে বাঁচতে ঘরের মধ্যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন ১৯ বছরের তুহিনা খাতুন। তাঁর বাবাও তৃণমূলেরই কর্মী। ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার স্বর্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গে একটি জেলাসদরের ঘটনা।

ভোটের পূর্বে আঁকা ছবি।

বর্ধমান পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বসিরুদ্দিন ওরফে বাদসা নামে যে ব্যক্তি নির্বাচনে লড়েছিলেন, তাঁকে মেনে নিতে পারেননি এলাকার তৃণমূল কর্মীদেরই অনেকে। মুক্তার মিঞা নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার অনুগামীরা বসির আহমেদের বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বসির তোলাবাজ, এলাকায় ডন হিসাবে পরিচিত। তাঁকে প্রার্থী করা যাবে না।

তুহিনার ছবি।

স্থানীয় বাসিন্দা জুনাই শেখ। তিনিও তৃণমূলের সমর্থক। মুক্তারের অনুগামী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। কিন্তু জোড়া ফুলের টিকিট পাওয়া ‘ডন’ বসিরকে মানতে পারেননি। গোটা ভোটপর্ব জুড়ে তাঁকে এই বিরোধিতার মাশুল দিতে হয়েছে।

কেমন মাশুল? জুনাই শেখের তিন মেয়ে। তাদের খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি। বাড়ির বাইরে বোমাবাজি। দরজার লাথি। বাড়ির দেওয়ালে একটা গাছে ঝুলন্ত তিনটি মেয়ের ছবি এঁকে দিয়ে গিয়েছেন জোড়া ফুলের নেতা বসিরের কর্মীরা। তিনটি মেয়ে। নিজেদের লাশের ছবি বাড়ির দেওয়ালে নিয়ে থাকছিল এই গোটা ভোটপর্বে। প্রতিদিন শুনত, শুধু ভোটের ফল বেরনোর অপেক্ষা। তারপর এই ছবিটা সত্যি হবে। ধর্ষণ করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে গাছে।

বুধবার নির্বাচনের ফল বেরল। তৃণমূল প্রার্থী বসির জিতে যাওয়ার পরেই শাসকদলের লোকজন জুনাই শেখের বাড়িতে চড়াও হয়। শুরু হয় বোমাবাজি৷ বাড়িতে তখন ছোট মেয়ে তুহিনা খাতুন একা। দরজায় লাথি মারতে থাকে বসিরের বাহিনী৷ দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম। ১৯ বছরের মেয়েটি আতঙ্কে সিঁটিয়ে যায়। তারপর সম্ভাব্য অত্যাচার থেকে বাঁচতে একটি ঘরে ঢুকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। তৃণমূলের ঝঞ্ঝাবাহিনী দেওয়ালে যে ছবি এঁকে গিয়েছিল, তা সত্যি হয়ে ওঠে। ১৯ বছরের মেয়ে তুহিনা খাতুন, বর্ধমান রাজ কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী তুহিনা খাতুন, তৃণমূল কর্মী জুনাই শেখের মেয়ে তুহিনা খাতুন তৃণমূলেরই জয়োৎসবের বলি হয়, তার শরীরটা লাশ হয়ে ঝুলতে থাকে বর্ধমান শহরের মাঝখানে।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন ভোটে বড় কোনও গোলমাল হয়নি। তিনি ফ্যাসিবাদ রুখতে উত্তরপ্রদেশে গিয়েছেন। মাননীয়া, যে মেয়েটিকে আপনার দলের কর্মীরা লাশ বানিয়ে দিল, সে কিন্তু আপনাকেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাইত। তার বাবা আপনার দলেরই কর্মী। এটা যদি বড় ঘটনা না হয়,তাহলে বড় ঘটনা কোনটা, মাননীয়া?

এ যদি ফ্যাসিবাদ না হয়, তাহলে কাকে ফ্যাসিবাদ বলে? যাঁরা এখনও এই শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না, ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, আপনাদের আয়নার সামনে দাঁড়াতে অসুবিধা হচ্ছে না?

তৃণমূলের স্বর্গরাজ্যে তুহিনা খাতুন বোনকে যেভাবে চলে যেতে হলো তার জন্য সমস্ত  তৃণমূল দালালদের কাছে প্রশ্ন করুন। বাঙালি মুসলিমের আর কত রক্ত, জীবন তারা চান? আমরা এখানে ছোট কমিউনিটি। আমরা এক তৃতীয়াংশ। আমাদের এভাবেই একে অপরকে লড়িয়ে  বাঙালি মুসলিমদের মেরুদন্ড কি শেষ করে দিতে চাইছে? প্রশ্ন সংখ্যালঘু মুসলিম সচেতন নাগরিকদের।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর