নিজস্ব প্রতিবেদক: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে এখন স্মার্টফোন রয়েছে। তবে অনলাইনে ক্লাস করছে ৬৩ ভাগ শিক্ষার্থী। স্মার্টফোন থাকার পরেও বাকি ৩১ ভাগ শিক্ষার্থী নানা কারণে অনলাইনে ক্লাস করছে না। এরমধ্যে কেউ ইন্টারনেটে খরচ বৃদ্ধির কারণে, কেউ দূর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে কেউ’বা অনলাইনে ক্লাস না করে হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে ব্যস্ত থাকছে। বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টাস ফোরাম (বিইআরএফ) এর এক নগর জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উপর এই জরিপ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে পরিচালনা করা হয়।
বুধবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিইআরএফের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক জরিপের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস করানোর তথ্য ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থীর জানা থাকলেও ৮৯ ভাগ শিক্ষার্থীই সংসদ টিভির ক্লাস করে না। আর ৬ ভাগ শিক্ষার্থী সংসদ টিভির ক্লাস সম্পর্কে অবগতই নয়। তবে যে ১১ ভাগ শিক্ষার্থী সংসদ টিভির ক্লাস নিয়মিত দেখে, তাদের মধ্যে ৬৭ ভাগ শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে।
জরিপে আরও উঠে আসে, শ্রেণি কার্যক্রম হয়নি তারপরেও ৯৩ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতাভাগ ফি আদায় করেছে। ফি কিছুটা কম নিয়েছে ৭ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর অর্ধেক টিউশন ফি নিয়েছে ২ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এছাড়া সহায়ক বা অনুশীল বই পড়েছে ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থী। তবে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের পেছনে অভিভাবকের ব্যয় কমেছে ৯৭ ভাগ পরিবারের। আর ইন্টারনেট ব্যয় ৫০১ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ৫৪ ভাগ শিক্ষার্থীর এবং ৭০ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ১০ ভাগ শিক্ষার্থীর।
এছাড়া জরিপ প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪২ ভাগ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৮ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা প্রায় ৬৭ ভাগ শিক্ষার্থীদের সাথে কোন না কোন ভাবে যোগাযোগ করেছেন।
শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিপোর্টাস ফোরাম বিইআরএফ ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ১ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থীর উপর এ্ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিইআরএফ সভাপতি মোস্তফা মল্লিক জানান, ‘আগামীতে তারা তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার্থী বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উপর বড় পরিসরে জরিপ পরিচালনা করবেন। আর আজ যে জরিপ প্রকাশিত হলো তা কেবলমাত্র শহরের শিক্ষার্থীদের উপর।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে-এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহন করছি। আমরা ইন্টারনেট খরচ কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে শিক্ষায় ইন্টারনেট খরচ এটি হঠাৎ করেই যুক্ত হয়েছে-আগে এভাবে এতো বড় পরিসরে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়নি। এই খাতেও শিক্ষার্থীদের ব্যয় কীভাবে কমোনো যায়, টেলিফোন কোম্পানিগুলো সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কী করা যায় সেটাও আমরা ভাবছি। কারণ এখানে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। আমরা যদি ডিভাইজের কথা ভাবি তাহলে অসম্ভব রকম ব্যয় হবে। তবে সামগ্রীকভাবে শিক্ষার ব্যয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সকল পর্যায়ের শিক্ষার ব্যয় নিয়ে আমরা সুচিন্তিত জায়গায় পৌঁছানোর প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষার যে ব্যয় তার একটি বিরাট অংশ সরকার বহন করে। ভুর্তুকিও বিশাল। শিক্ষার ব্যয় একটি গবেষণার বিষয়। শিক্ষার ব্যয় কোন জায়য়গায় কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
বিইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্বাসের সঞ্চালনায় জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণশিক্ষা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক।