নিউজ ডেস্ক : ১৯৯২ সালের ৬ ই ডিসেম্বর সর্বসমক্ষে মিডিয়ার ক্যামেরার সম্মুখে প্রকাশ্য দিবালোকে হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করেছিল ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। বহু দিন মামলা চলার পর সমস্ত তথ্য প্রমাণ বাদ দিয়ে শুধু মাত্র সংখ্যা গুরুদে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগ বিবেচনা করে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে সমস্ত কারিগরদেরকে কোন শাস্তি না দিয়ে দিয়ে সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের রায় সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তীতে যে সমস্ত হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মসজিদ ধ্বংসের পিছনের মূল কারিগর, তারা প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে তাদের অপরাধ স্বীকার করলেও আদালত তাদেরকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলা থেকে বেকসুর খালাস করে দেয়। প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে কাদের হাত ছিল কারাই বা দোষী এর কোনো কূল-কিনারা করার বা দোষীদের শাস্তি দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি ভারতীয় বিচারব্যবস্থা। আবার তেমন ভাবেই বাবরি মডেলের বিচার দেখা গেল মুজাফফরনগর দাঙ্গার ক্ষেত্রে।
২০১৩ সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গা মামলায় আপাতত মুক্তি পেলেন ১২ জন বিজেপি নেতা। স্থানীয় আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা প্রত্যাহার করতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে অনুমতি দিয়েছে। এই বিজেপি নেতাদের মধ্যে আছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সুরেশ রানা, বিজেপি বিধায়ক সংগীত সোম, বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ভরতেন্দু সিংহ এবং ভিএইচপি নেতা সাধ্বী প্রাচী।
বিশেষ আদালতের বিচারক রাম সুধ সিং শুক্রবার সরকারি কৌঁসুলিকে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দেন। সরকারি কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছিলেন অভিযুক্ত নেতারা। তাঁরা সরকারি বিধিভঙ্গ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিলো। তার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়। এমনটাই জানিয়েছেন জেলা সরকারি আইনজীবী রাজীব শর্মা। অভিযোগ, এই নেতারা ২০১৩ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মহাপঞ্চায়েতে অংশ নিয়ে হিংসাত্মক বক্তব্য রেখেছিলেন। যার ফলে দাঙ্গা সংগঠিত হয়।
সেই দাঙ্গার পিছনে উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনথেরও হাত ছিল বলে অনেকে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু এখন তার সরকার সমস্ত দোষীদের বাঁচানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছে আদালতে। হিন্দুত্ববাদী উগ্রবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থে যোগী সরকার আদালতে আবেদন করেছিল যে, উত্তরপ্রদেশ সরকার জনস্বার্থে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদালতের উচিত মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মুজাফফরনগর এবং আশেপাশের জেলাগুলিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারান যাদের বেশিরভাগ মুসলমান, নিখোঁজ হয়েছিলেন অনেকে। ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন ওই দাঙ্গায়। যাদের মধ্যেও বেশিরভাগ মুসলমান। দাঙ্গার সময় উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সরকার থাকলেও তখন তারা দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। যদিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা চালায় সরকার কিন্তু হিন্দুত্ববাদী যোগী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দোষীদের বাঁচানোর পথ খুঁজতে শুরু করেন। এখন ওই দাঙ্গায় নিহত মুসলিম পরিবার গুলো আর জিবনে কোনোদিন ন্যায়
বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা নির্যাতিতদের।