অবিলম্বে নাগাল্যান্ড থেকে ‘আফস্পা আইন’ প্রত্যাহার করতে হবেঃ বৃন্দা কারাত, AFSPA আইন কি?

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

‘আফস্পা আইন’ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন  নাগাল্যান্ডে।
‘আফস্পা আইন’ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন নাগাল্যান্ডে।

এনবিটিভি ডেস্কঃ সোমবার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সিনিয়র নেতা এবং পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাত ‘আফস্পা আইন’এর তীব্র বিরোধিতা করেন, তার সঙ্গে এই আইন প্রত্যাহার করার জন্য একটি প্যানেল গঠনের জন্য কেন্দ্রকে আবেদন করেন।

এদিন বৃন্দা কারাত বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, এই কমিটিটি কোনও প্রকার অজুহাত না দেখিয়ে জরুরিভাবে গঠন করা উচিৎ। কারণ নাগাল্যান্ডে যা ঘটেছে তা কেবল উত্তর-পূর্বেই নয়, সমগ্র ভারতে একটি সুপ্তক্ষোভ রয়েছে মানুষের মধ্যে।”

সাংবাদিক সম্মেলনে বৃন্দা কারাত।

তিনি আরও বলেন, ” আফস্পা আইনটি ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিদের দ্বারা অপরাধমূলক কর্মের দায়মুক্তি প্রদান করে।”

প্রসঙ্গত, দেশে বিদ্রোহর ধামাচাপা দিতে সেনার হাতে ক্ষমতা দাও প্রচুর! দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ সরকারের। তৈরি হলও ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ (AFSPA) আইন। যেখানে সেনার হাতে ক্ষমতা প্রচুর। বন্দুক চালানোর জন্য ভাবতে হয় না একটুও। যদি কোথাও সেনা দেখে কোনও রকম  ঝামেলা বাধার সম্ভাবনা, তা হলে ট্রিগারে হাত দাও। নাই কোনও অসুবিধা। কেউ কিচ্ছু বলবে না!  

সম্প্রতি ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী ভূল তথ্য পেয়েই নাগাল্যান্ডের ১৪ জন নাগরিককে গুলি করে মারলে গভীর সান্ত্বনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না!

এই মৃত্যুর ঘটনার পর জোরকদমে আফস্পা আইন বাতিলের দাবি উঠেছে। এই আইনের অপব্যবহার রুখতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিরোধিতা করছে।দেশের সাধারণ নাগরিক এই আইনের কারনে ভীতসন্ত্রস্ত।

আফস্পা কি?  

Armed Forces (Special Powers) Act (AFSPA) অর্থাৎ সৈন্য বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন। এটি হচ্ছে ভারতীয় সংসদের আইন যেটি ১৯৫৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাস হয়। এটির মাত্র ছয়টি ধারা ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘অশান্ত এলাকায়’ (“Disturbed Areas”) আইন প্রয়োগের অনুমোদন দেয়।

উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ-

ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্য—অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম ও ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে গঠিত হয় । গত শতকের আশির দশকে পঞ্জাবে খলিস্তান আন্দোলন এবং পরে ৯০ দশকে জম্মু ও কাশ্মীরে এই আইন প্রয়োগ করা হয়। তখন থেকে সেখানেও এই আইন বলবৎ রয়েছে।

সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-

  • এই আইন অনুযায়ী সেনাবাহিনী যে কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গুলি করতে পারবে।
  • বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারবে।
  • বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন জায়গায়, যে কারও বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে।
  • কোথাও জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে বলে সন্দেহ হলে, তা নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দিতে পারবে।
  • রাস্তায় কোনও যানবাহনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করলে, তা থামিয়ে তৎক্ষণাৎ তল্লাশি চালানো যাবে।
  • সর্বোপরি এই আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।

সমালোচনা-

আইনটি অনবরত সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এই  আইন প্রয়োগকারী এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেসব জায়গায় হত্যা, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, অপহরণ, হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনী জড়িত থেকেছে। সম্প্রতি গত ২০২১ সালে ৬ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডে সেনাকর্তৃক সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পর জোরকদমে এই আইন বাতিলের দাবি উঠেছে।

প্রয়োগ ও প্রভাব-

২০০০ সালে এই আইনের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে মণিপুরে ১০০ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল অসম রাইফেলসের সেনাবাহিনী। এই ঘটনার প্রতিবাদেই মণিপুরের বিখ্যাত সমাজসেবী ইরম শর্মিলা চানু দীর্ঘ ১৬ বছর অনশন করেন। এছাড়াও কাশ্মীরবাসীদের উপর এই আইন চাপিয়ে তাঁদের সাংবিধানিক প্রতিকার চাওয়ার ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে নিন্দার ঝড় দেখা দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।

দেশের বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে। এই আইন প্রত্যাহার করার জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া সংগঠন কঠোর সমালোচনা করে।  তীব্র সমালোচনা ও আন্দোলনের পরেও সরকারের কোনও প্রকার হেলদোল দেখা যাচ্ছেনা।

‘আফস্পা আইন’ প্রত্যাহারের জন্য প্রেস বিজ্ঞপ্তি পিএফআই-এর ।
Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর