৬৫০ কাশ্মীরি পণ্ডিত হত্যা চলচ্চিত্রে দেখান হল, কিন্তু কোথায় গেল ১ লক্ষ কাশ্মীরি মুসলমানের কান্না?

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

'কাশ্মীরি ফাইলস'। কাশ্মীরে মুসলিমদের কান্না- ফাইল চিত্র,
'কাশ্মীরি ফাইলস'। কাশ্মীরে মুসলিমদের কান্না- ফাইল চিত্র,

 এনবিটিভি ডেস্কঃ  চলতি মাসে ১১ মার্চে ‘কাশ্মীর ফাইলস’ নামে একটি চলচ্চিত্র ভারত জুড়ে সাড়া ফেলেছে। এই চলচিত্রকে ঘিরে ঝড় তুলেছে দেশে। এই সিনেমাটিতে ৯০-এর দশকে দাঙ্গার সময় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশার ‘হাইলাইট’ করা হয়েছে। ভারতের রাজনীতিতে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের জিকির করা হলেও একই সময়ে মুসলিম নিধনের চিত্র ফেকাসে করে দেখান হচ্ছে।

‘কাশ্মীর ফাইলস’ মুক্তির পরপরই ছবিটি শিরোনাম হতে শুরু করে দিয়েছে। অনেক হিন্দুত্ববাদীরা এটিকে উপত্যকার সংঘাতের একটি বাস্তব উপস্থাপনা বলে অভিহিত করেছেন। ফিল্মটি পণ্ডিতদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করলেও, এটি কাশ্মীরি মুসলমানদের কষ্টের যে করুণ চিত্র তা আড়াল করা হয়েছে। সেই সময় মুসলিমদের রক্তে লেখা থাকবে হক্বের এক হৃদয় বিদারক ঐতিহাসিক চিত্র।

 কাশ্মীরের পণ্ডিতদের কথা উল্লেখ করে ‘কাশ্মীরি পণ্ডিত সংগ্রাম সমিতি’ দাবী করেন যে, কাশ্মীর উপত্যকায় প্রায় ৬৫০ জন হিন্দু পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল।

কিন্তু এই ৬৫০ সংখ্যা সঠিক নয়, তা এক RTI এর মাধ্যমে উঠে আসে। হরিয়ানার সমলখার কর্মী পিপি কাপুরের দায়ের করা ২০২১ সালের আরটিআই অনুসারে সংখ্যাটি অনেক কম ছিল। RTI বলা হয়েছে যে, ১৯৯০ সালে জঙ্গিবাদ হামলায় ৮৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত নিহত হয়েছে।

আরটিআই অনুসারে আরও জানা যায় যে, গত তিন দশকে কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে ১৭২৪ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬০০ জনেরও বেশি মুসলমান ছিল। আরও অনুমান করা হয় যে, বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫ থেকে ২০  হাজার মানুষ অর্থাৎ বিদ্রোহী, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক সহ আরও অনেকেই মারা গিয়েছিল। তবে নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক কাশ্মীরি মুসলমান ছিল বলে ঐতিহাসিকদের মত।

উল্লেখ্য, কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ৬৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে এটা একদমই কাল্পনিক ছাড়া কিছুই নয়। পন্ডিত হিন্দু ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মতিলাল ভাট ২০১১ সালের আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলেছেন যে, কাশ্মীরে নিহত পণ্ডিতের সংখ্যা ২১৯ জন। এই সংখ্যাটি সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিল আছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারীতে পন্ডিতরা উপত্যকা ত্যাগ করতে শুরু করে। সরকারের অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় প্রায় ১ লক্ষ পন্ডিত উপত্যকা ত্যাগ করেছিল। ভারত সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদের কারণে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার জন দেশান্তরিত হয়েছিল। আর প্রায় ৩ হাজার জন এরও বেশি উপত্যকায় থেকে গিয়েছিলেন। উপত্যকার অনেক লোক বিশ্বাস করে যে, ভারত সরকার এবং তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহন পণ্ডিতদের চলে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন।

দেশত্যাগের পর বিভিন্ন ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ‘বলির পাঁঠা’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

গত বছর ২০২১ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিত সংগ্রাম সমিতি (কেপিএসএস)  দেশের গোদি মিডিয়াকে সতর্ক করে বলেন যে, পণ্ডিতদের নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের ঘৃণ্য ভাবে উপস্থাপন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগঠনটি ভারত সরকারকে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা শান্তিতে বসবাস করতে চাইলে টিভিতে কাশ্মীর কেন্দ্রিক বিতর্ক বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘কাশ্মীরী ফাইলস’ ফিল্মটি দেখান হচ্ছে। সেখানে হিন্দুত্ববাহিনী বেশ খুশি প্রকাশ করছেন।

 সিনেমাটিতে সংবেদনশীল বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্রে কাশ্মীরী উপত্যকা এবং সাধারণভাবে ভারতে বিরোধ আরও ছড়িয়ে দেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে, লোকেরা সিনেমা হলের বাইরে সমাবেশ করছে এবং “জয় শ্রী রাম” এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিচ্ছে।

https://twitter.com/Harshid_Desai1/status/1502876313547264010?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1502876313547264010%7Ctwgr%5E%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Fmuslimmirror.com%2Feng%2Fan-unequal-massacre-film-on-killing-of-650-kashmiri-pandits-but-what-about-100000-kashmiri-muslims%2F

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, ফিল্মটি বিজেপির পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কাশ্মীরি হিন্দুরা কাশ্মীরের আদিবাসী এবং মুসলমানরা বহিরাগত এবং জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের জন্য ঐক্যমত্য তৈরি করার জন্যই এই রকম ভুল প্রচার ছড়ান হচ্ছে। এমনকি বিভ্রান্তি ছড়াতে কাশ্মীরি পন্ডিতদের ইস্যুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন যে, ২০২১ সালের চার রাজ্যে বিজেপির জয়কে আগামী ২০২৪ সালের জয়ের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে। যদিও এই চার রাজ্যের জয়ের সঙ্গে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নাই বলে জানান রাজনৈতিক মহল। তবে, হিন্দুত্ববাদীদের এমন ধরনের ভুল প্রচার ও বিভিন্ন কৌশল বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর