মিথ্যে আর ঘৃণার জোরে গুজরাট দখল

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ‘নীচ’ বলে ফেলেন। ব্যাস এটা ক্যাশ করে মাঠে নেমে পড়লো বিজেপি। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের কথা মনে আছে? তখন নির্বাচনী ইস্যু ভুলে সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে গেছিলো। এখন অবধি পুলওয়ামা  রহস্যর উত্তর মেলেনি। তদন্তের ফল জানা নেই কারও।  কাঁচা ঘা খোঁচালে মুশকিল, কখন কি বেরিয়ে পড়ে, তাই স্পিকটি নট বিজেপি।
১৯ য়ে পুলওয়ামার কাঁধে ভর দিয়ে ক্ষমতা দখল, আর এবার দশ মাথাওয়ালা রাবণ এর গল্প। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে নির্বাচনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন মোদি দশ মাথাওয়ালা রাবণ। এখানে ওখানে সব জায়গায় মোদি। ব্যাস হাফ চান্সকে কাজে লাগিয়ে দশমাথার রাবণ, গুজরাটি অহঙ্কারে ঘা দিয়েছে বলে রে রে করে তেড়ে মাঠের মাঝে বিজেপি। সঙ্গে আদি অকৃত্তিম ফর্মুলা ঘৃনার চাষ। এতেই কিস্তিমাত। এবার ভোটে ছোট বড়ো সিকি আধুলি নেতারা থাকলেও ভোট জয়ের কারিগর বহু ব্যবহৃত হিন্দু মুসলিম বিভাজন। অন্য বড়ো ফ্যাক্টর হোলো গুজরাট জয়ের মূল নায়ক দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী। সঙ্গে ঢাকের বায়া গোদি মিডিয়া।
শুরু করি দেশের প্রধান কে দিয়ে, মোদিজি victim card খেলে   সহানুভূতি কুড়োতে সিদ্ধহস্ত। এবার ওর অমৃত ভাষন, দিনে দু তিন কিলো গালি গালাজ খান, এটিই ওকে এগিয়ে চলার শক্তি দেয়। এত করেও একটি শ্রেণীর ভোট পায়না তার দল। শ্রেণী বলতে কাদের বলা হয়েছে নিশ্চয় বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সোজা সাপটা ডায়ালগ ২০০২ য়ে ওদের এমন শিক্ষা দিয়েছি যে তারপর থেকে গুজরাট শান্ত, দাঙ্গা মুক্ত গুজরাট চাইলে আমাদের ভোট দিন। খোলাখুলি বিষ ছড়ানো হলেও নির্বাচন কমিশন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। যোগীও কম নয়, গোধরায় হাজির বুলডোজার নিয়ে। বুলডোজেরের বাড়াবাড়ি নিয়ে কোর্ট ধমক দিলেও যোগীরা আইনের ঊর্ধ্বে। হিমন্ত বিশ্বশর্মাও কুকথায় পিছিয়ে পড়ার বান্দা নয়। রাহুলের দাড়ির সঙ্গে সাদ্দাম হুসেনের দাড়ির তুলনা করে বিশ্রী ইঙ্গিত অসমের মুখ্যমন্ত্রীর। নির্বাচনের ফল বেরুনোর পর দেশের মাথার জ্ঞান এবার সবাই আমাদের পেছনে লাগবে। জয় করেও এতো ভয়!
এবার আসি গুজরাট জয়ের নেপথ্যের কারিগর গোদী মিডিয়া প্রসঙ্গে, ভোটের আগেই ওরা গুজরাটে করা  ক্ষমতায় আসবে সেটা নিয়ে প্রচার করেছে, ভারতজোড়ো পদযাত্রা প্রচার করেনি তারা। ভোটের পরও শাসক দলের পদলেহন করে চলছে। গুজরাট জয়ের গল্প বারবার প্রচার করতে গিয়ে গলার শিরা ছিড়ে ফেলার উপক্রম হলেও হিমাচল প্রদেশ নিয়ে মুখে তালা তাদের। ওদের কান্ড দেখে শোলের সেই ডায়ালগ মনে পড়ে গেলো ইতনা সন্নাটা কিউ হ্যায় ভাই?
এর পেছনের রহস্য হলো  হিমাচল বিজেপি সভাপতি নাড্ডার এলাকা আর অন্য কারণ তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও হিমাচলের ভূমিপুত্র। অনুরাগের পিতা প্রেম কুয়ার ধুমোল হিমাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অনুরাগের লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি ১৭ টির মধ্যে ১৫ টি আসনে হেরেছে। শুধু তাই নয় ওর বাড়ি বিরাম নগরে ৫ টির মধ্যে ৫টি সিট হেরেছে বিজেপি। এই খবর দেখিয়ে কে অনুরাগের বিরাগ ভাজন হতে চায়?
এনডিটিভির জবর দখলের পর টিভির খবর দেখা বন্ধ। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়া ভরসা। তথ্য তার মধ্যেও ঢাল তলায়ার ছাড়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। মাঝে মাঝে গোল দিচ্ছি নামী দামী গদি আর প্রিন্ট মিডিয়াকে। মাস দুয়েক আগে আমদের ব্রেকিং নিউজের জেরে ৪ জন নিরপরাধ মানুষকে পিটিয়ে মারার জন্য প্রশাসন ৫ লাখ করে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পিছু একটি করে চাকরীও দেবে বলে কথা দিয়েছে।
গত রবিবার বিশ্ববিখ্যাত লেখক দমিনিক লপিয়ারের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছি। গদি মিডিয়া খবর ছেপেছে আমাদের দু দিন পর। মঙ্গলবার। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তাই টাকা পয়সা মেশিন পত্রের অভাব থাকলেও লড়ে যাচ্ছি আমরা। পাশে থাকুন আপনারা।

Latest articles

Related articles