লাভ জিহাদ নয়, গদি মিডিয়ার জিহাদ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

274058-godi-media-1

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

৯০ এর শুরু, সবে বম্বেতে পা রেখেছি। দিব্যা ভারতি শাহরুখের প্রথম রিলিজড ফিল্ম দীওয়ানার হিরোইন। দিব্যার ইন্টারভিউ নেবো  নেবো করছি এমন সময় ঘটলো অঘটন। ফ্ল্যাটের খোলা জানালা থেকে ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে যায় উঠতি স্টার  দিব্ব্যা। সে তখন সাজিদের সঙ্গে লিভ ইন রিলেশনে  ছিল। নামী প্রোডাকশন হাউসের প্রোডিউসার সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। গন্ধ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মিডিয়া। সত্যিমিথ্যা মসলা দিয়ে খবরটি পরিবেশন করা হলেও তখন গল্পের গরু গাছে উঠতনা, একটা সীমা ছিল। সোডা বটলের গ্যাসের  ঝাঁজ বেরিয়ে একসময় সব  ঠান্ডা। তখন পরিবেশ এতো খারাপ ছিলনা, আজকের মত হিন্দু মুসলিম মার্কিং হয়নি। তখন নেট ছিলনা, ছিলনা ট্রোলিং আর গদি মিডিয়া। অবস্থা পাল্টাল জুমলা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর, উঠতি অভিনেতা সুশান্ত সিংএর আত্মহত্যার খবর পেয়ে ভাগাড়ের শকুনের মত গদি মিডিয়া রে রে করে 

ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো উইচ হান্টিং। এই মৃত্যুর জন্য প্রথমেই টার্গেট হলো বোম্বের এক  খান। খানদের ফিল্ম বয়কটের কথা উঠলো।পড়ে পাওয়া এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের আগে  বিহারি সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য মাঠে নেমে পড়লো। জুমলাবাজ দল। বাঙালী মেয়ে রিয়া চক্রবর্তীর ফিল্মী কেরিয়ার শেষ করে দেওয়া হলো।

প্রতিটি মৃত্যু শোকের, কিন্তু মৃত্যুশোক নিয়ে কি ভাবে রাজনীতি করা যায়, সেটা দেখিয়ে দিল  জুমলা পার্টি। এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল এ প্রতিভা দেখতে পারেনি। এখন তারা  বুঝতে পারছে হাওয়া খারাপ।  বেশিদিন এভাবে চালানো যাবেনা। লোকে ঘাসে মুখ দিয়ে চলেনা।

বিরক্ত হয়ে  গালি গালাজ করছে, ভোট চাইতে গেলে ঝাটা নিয়ে তাড়া করছে। এমন সময় লোকের মন অন্য দিকে ঘোরানোর সুযোগ এনে দিলো সাম্প্রতিক দিল্লির হত্যা কান্ড। গদি মিডিয়ার লাগাতার প্রচারের শিরোনামে এখন শ্রদ্ধা হত্যাকান্ড।কি ভাবে এই শনশনি খোঁজ খবর দিয়ে TRP বাড়াবে সেটা নিয়ে চলছে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা। আর অপরাধী যখন আফতাব তখন সোনায় সোহাগা। এখন হিন্দু মুসলিম লাভ জিহাদ এর গরম বাজার। হিন্দু মুসলিম লোকে খায় না গেলে। সবাই মাঠে নেমে পড়েছে ঘৃনা ছড়াতে।

প্রশ্ন এখন একটাই, অপরাধ করেছে অপরাধি সাজা পাবে। এর মধ্যে হিন্দু মুসলিম করা কেন? আইন অনুযায়ী অপরাধী শাস্তি পাবে। এর মধ্যে লাভ জিহাদ! গদি মিডিয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছে বাজার সরকারের মিডিয়া চ্যানেল আতঙ্ক বাজার। এর আবার রোজ সন্ধ্যেবেলা নিয়ম করে ঘন্টাখানেক আমাদের নৈতিকতার পাঠ পড়ায়! গদি মিডিয়ায় নৈতিকতার পাঠ পড়ানো জ্যাঠামশাইদের কাছে এই বেয়াড়া সাংবাদিকের বিনীত প্রশ্ন একই যাত্রায় পৃথক ফল কেন? ধিক্কার জানাই গদি সাংবাদিকদের যারা একই সঙ্গে ঘটা আরও একটি ঘটনা চেপে সিলেকটিভ জার্নালিজম করছে। এরা সাংবাদিক নয়,  দালাল। যে ঘটনার। কথা বলছি? সেটি দিল্লি লাগোয়া গাজিয়াবাদের। শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের দিনই খবর পাওয়া গেছে কিন্তু দালাল মিডিয়া সেটি ধামা চাপা দিয়েছে। এটি লাভ ট্রায়াঙ্গলের কাহিনী, পতি পত্নী আর ও র গল্প। স্বামী চন্দ্রবীর বাড়ি থেকে বেরোলেই স্ত্রী সবিতা প্রতিবেশী অরুণের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। দিনের পর দিন এসব চলতে থাকে।

একদিন আপত্তিকর অবস্থায় সবিতা ও অরুণকে হাতে নাতে ধরে ফেলে চন্দ্রবীর। ধরা পড়ার পর 

 সবিতা আর অরুণ দুজনে ঠান্ডা মাথায় চন্দ্রবীর কে খুনের প্ল্যান করে। অরুণ বাড়িতে ছয় ফুট গর্তও খুঁড়ে রাখে। একদিন সুযোগ বুঝে ঘুমন্ত চন্দ্রবীরকে খুন করে দেহ আগে থেকে খুঁড়ে রাখা গর্তে পুঁতে দেয় সবিতা ও তার প্রেমিক অরুণ। প্রশ্ন উঠতে পারে দুটিই খুন, দুটোর মধ্যে তফাৎ কোথায়?

 তফাৎ একটি প্রী প্লানড মার্ডার অন্যটি হিট অফ মোমেনটের ফল। চন্দ্রবীরের খুন প্রি প্লান্ড মার্ডার। একটি ঠান্ডা মাথায় করা খুন, অন্যটি কমিটমেন্টের জন্য জোরাজুরির রিএকশন । অরুণ সবিতা, আফতাব তিনজনেই খুনের অপরাধী। তফাৎ কোথায়! তফাৎ নামে। শুনন্তে খারাপ লাগলেও  এটাই বাস্তব । অপরাধী যেই হোকনা কেন পাপের বেতন শাস্তি। অপরাধ করলে সাজা হবে। সভ্য সমাজের নিয়ম এটাই। কিন্তু এখন নাম দেখে বিচার হচ্ছে। নামে পেঁয়াজ রশুনের গন্ধ থাকলে চলবেনা। বিলকিস এর নামে গন্ধ আছে বলেই সে সুবিচার পেলনা…. আর খুনি বলতকারীরা বেকসুর খালাস। এখন আইন পয়সার আর ক্ষমতার গোলাম। পয়সা ফেকো তামাশা দেখো। কমলাকান্ত দূরদর্শী তাই আগেই বলে দিয়েছে আইন বড়লোকদের তামাশার বস্তু, একটু পাল্টে বড়োলোকের বদলে ক্ষমতাসীন বললে বেমানান হবেনা।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর