“হিজাব ও শিক্ষা উভয়ই আমাদের অধিকার”- সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে হিজাব ব্যান সরকারের

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলন।
কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলন।

পিউলি খাতুন, এনবিটিভি ডেস্ক : কিছুদিন আগে খবরে উঠে এসেছিল হিজাব বিতর্ক। কর্ণাটকের উডুপির একটি কলেজে ৬ জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়না। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল আবারও কর্ণাটকে। কর্ণাটকের একটি প্রি ইউনিভার্সিটিতে আবারও ২৫জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটকের কুন্দাপুর গভঃ প্রি ইউনিভার্সিটি কলেজ। প্রি ইউনিভার্সিটি কলেজ হল কলেজ শিক্ষা শুরু হওয়ার আগের ধাপ অর্থাৎ এগারো ও বারো ক্লাস পড়ানো হয় যে ইনস্টিটিউশানে। অর্থাৎ স্কুলই বলা যেতে পারে। এই স্কুলে পড়া ছোটো ছোটো বাচ্চাদের এখন ধর্মের লড়াইয়ে নামানো হচ্ছে।

ধর্মের লড়াইয়ে নামানো হচ্ছে এ কথা বলার কারণ হল এই দিনের হিজাব বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে আরও একটা ঘটনা ঘটেছে। কর্ণাটকের এই স্কুলের কিছু ছাত্রছাত্রী গেরুয়া ওড়না গলায় জড়িয়ে আন্দোলন শুরু করে।  তাদের বক্তব্য যদি হিজাব পরে ক্লাসরুমে যেতে দেওয়া হয়, তাহলে তারাও গেরুয়া ওড়না পরে ক্লাসে আসবে। এখান থেকেই বিতর্কের শুরু। এরপর উক্ত স্কুল কমিটির প্রধান বিজেপি নেতা হালাডি শ্রীনিবাস শেট্টির নির্দেশে স্কুলে হিজাব পরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপরই হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কলেজের প্রিন্সিপাল রামকৃষ্ণবাবুকে এই সময় বলতে শোনা যায় যে তিনি সরকারের দাস।সরকারী আদেশ তাঁকে মানতে হবে।

এতদিন পর্যন্ত হিজাব পরে স্কুল বা কলেজে আসাটা যখন কোনো প্রশ্নের মুখে পরেইনি, তখন এটাই স্বাভাবিক হয়েছিল সবার কাছেই। হঠাৎ একদিনে রাতারাতি হিজাব পরা প্রশ্নের মুখে দাঁড়ালো কেন তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ছাত্রীরা। কলেজের তরফ থেকে ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গেও মিটিং করা হয়। তাদের বোঝানো হয় যেনো তারা তাদের মেয়েদের হিজাব ছাড়া কলেজে পাঠান। কিন্তু তা মানতে নারাজ ছাত্রীরা এবং ছাত্রীদের পরিবার। তাদের বক্তব্য, হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের ভয়ে, তাদের চাপে পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা কোনোমতেই গ্রহনযোগ্য নয়।

হিজাব মুসলিম ধর্ম পালনের অত্যাবশ্যকীয় একটি অংশ। ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ও ২৫ ধারা অনুসারে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা মৌলিক অধিকার। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে যে কেউ তার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তা কারোর ক্ষতি করছে, নীতিগতভাবে ভুল পথে চালিত করছে কিংবা তা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক হচ্ছে। কারোর হিজাব পরিধান এই তিনটির কোনোটিই ঘটাচ্ছে না। তাহলে হিজাব পরাতে নিষেধাজ্ঞা কেন?

হিজাব বিতর্ক গিয়ে পৌঁছায় কর্ণাটক হাইকোর্টে। সেখানে রায় দেওয়া হয় হিজাব বা গেরুয়া ওড়না কোনোটাই গ্রহনীয় নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সংবিধানের ২৫এর ১ধারা অনুসারে যদি ধর্ম অনুসারে কোনো পোশাক যদি অপরিহার্য হয়, তবে তা পরিধানের অধিকার থাকবে। হিজাব মুসলিম মহিলাদের সেই অপরিহার্য অংশ,বহুকাল ধরেই চলে আসছে, অপরদিকে গেরুরা ওড়না কিন্তু তা নয়। তাই কর্ণাটক হাইকোর্টের এই রায় সংবিধানের বিপক্ষে।

হিজাব পরা মহিলা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পেশাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। দেশের সংবিধান যেখানে হিজাব পরা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনা, যেহেতু সেটি মুসলিম ধর্মানুসারে একটি অপরিহার্য অংশ, সেখানে একটা কলেজ, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্যার ইস্যু কেন করে হিজাব হয়? ধর্মীয় চল তুলে দেওয়ার নিয়ম যদি চালাতে হয় তাহলে তো টিপ, মঙ্গলসূত্র, শাঁখা-পলা, এমনকি হাতে ধাগা বাঁধাতেও নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একটি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা প্রশ্ন হয়েই থেকে যাবে।

ধর্মের বিষ দেশজুড়ে বহু আগেই ছড়িয়েছে। কিন্তু সেই বিষ এখন আমাদের শিশুদের গলায়। এবার বাঁচাবে কে? ধর্মীয় মেরুকরণের নোংরা রাজনীতি থেকে শিশুরাও রেহাই পেলনা। যেখানে গুরুত্ব পাওয়ার কথা কিতাব, সেখানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে হিজাবকে টানা হচ্ছে। এর কারণ কি প্রয়োজনগুলো থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মের চোখটা সরিয়ে নেওয়া? পাছে তারা প্রশ্ন করে বসে বাজেট থেকে সাধারণ মানুষ কি পেল? বাংলাদেশের GDP আমাদের কি করে ছাড়িয়ে গেল? কর্মসংস্থান নেই কেন? আরও কত কি। হিজাব আর গেরুয়া বসনের লড়াইয়ের মাঝে আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছি না তো? ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর