Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email

আলবিদা প্রিন্স সেলিম

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

WhatsApp Image 2023-04-09 at 14.51.04

~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি

গদি মিডিয়ার কল্যানে অনেকদিন আগেই টিভিতে খবর দেখা ছেড়েছি, এত প্রচার আর মিথ্যা হজম করা মুশকিল। খবর দেখিনা তাই সেলিম দুরানির চলে যাওয়ার খবর পেয়েছি অনেক দেরিতে। এম জে বলতেন আজ যেটা খবর কাল সেটা বাসি। এম জে আকবর এখন সম্পাদক নয়, নয় নেতা। সম্পাদনার চাপ নেই, বিদেশি কাগজে ইচ্ছে মত লেখেন। রোজার মাস, তাই দ্বিধা ছিল পরে মনে হলো এটা লেখা না বলে স্মৃতি কারণ বলা ভালো, কারণ সেলিম দুরানীর খেলা শুরু ষাটের দশকে, মাঠে বসে খেলা দেখা হয়নি। দুরানির খেলা না দেখলেও জীবনের প্রথম টেস্ট ম্যাচ দেখেছি ইডেনে ৭৫এ। দেখেছি অ্যান্ডি রবার্টের বলে পতৌদির থুতনি ফাটা। আর তারপর কাউন্টার অ্যাটাক, থুতনিতে স্টিচ নিয়ে হোল্ডারের এক ওভারে ১৯ রান নেওয়া, এখনও স্পষ্ট মনে আছে, একদিনেই দুটো ভালো ঘটনা ঘটেছিলো আমার জীবনে, তাই মনে আছে এতদিন পরেও।
রবিবার সকালে বিখ্যাত ঔপনাসিক প্রফুল্ল রায়ের ফোন। প্রফুল্লদার বাড়ীতে বৌদির হাতের বিখ্যাত বিনা মসলার আলুর দম আর মিষ্টির পর পেলাম প্রফুল্লদার উপন্যাস (আঁধারে আলোয় মেশা) থেকে হিন্দি ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখার প্রস্তাব। আমার জীবনের প্রথম স্ক্রিপ্ট। আর সেদিন বিকেলেই ফোন এলো আযান রশীদ খানের। খান সাহেবের বাড়িতে গুণীজনের আগমন লেগেই থাকত, শ্যাম বেনেগাল, এম এস সথ্যু, জাভেদ আখতার, শক্তি, সুনীল, গৌতম ঘোষ, প্রকাশ কর্মকার, এককথায় বলতে গেলে চাঁদের হাট। গিয়ে দেখি সোফায় বসা এক সুদর্শন মানুষ, লম্বা চেহারা, উচ্ছতা ছ ফিট+ মুখে মৃদু হাসি। চেনা মুখ অথচ মনে করতে পারছিলাম না। অস্বস্তি হচ্ছিল। আমার মুখের দিকে আসামি জেরা করার মতো পুলিশ চাওনি ফিক্স করে রেখেছিলেন খান সাহেব। আমার দূরবস্থা দেখে আমার সামনের মানুষটি মৃদু হেসে নিজের পরিচয় দিলেন। আই এম সেলিম, সেলিম দুরানি। ঘটনার আকস্মিকতায় আমার মাথা ঘুরছিল, খান সাহেবের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি, ভাবটা কেমন সারপ্রাইজ দিলাম।


স্বপ্নের ঘোরে কি ভাবে সময় কেটে গেলো জানিনা। এতবড়ো সেলেব্রেটি কিন্তু মাটির মানুষ। বড় মাপের মানুষরা এরকমই হন, এখন কেউ সামান্য কিছু করলেই নিজেকে কেউকেটা মনে করে। আমি এটাকে বলি আমি কি হনু সিন্ড্রোম। আশে পাশে এরকম লোক ভর্তি। খান সাহেব জানালেন তিনি সেলিম দুরানীর উপরে বই লিখছেন নাম আস্ক মি ফর সিক্স। আমাকে জানালেন যাতে আমি স্কুপ নিউজ করতে পারি। তখন নিয়মিত প্রতিদিনে লিখতাম। আমার নিজস্ব কলাম ছিল। ফিল্ম ছাড়াও ফিচারও লিখেছি দু হাতে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরলাম স্পোর্টস এডিটর জয়ন্ত চক্রবর্তীকে। জানলাম পাতা কম্পোজ হয়ে গেছে, ওই পাতা রি কম্পোজ করে আমার নেওয়া ইন্টারভিউ বেরুলো পরের দিন। এতে আমার কোনো হাত ছিলনা ম্যাজিক ছিল সেলিম দুরাণীর নামে।
ষাটের দশকের গ্ল্যামর বিগ্রেডের নায়ক ছিলেন নবাব পতোউদি। আর ছিলেন জয়সিমা, ফারুক ইঞ্জিনিয়ার, আব্বস আলী বেগ, আর প্রিন্স সেলিম। সুদর্শন সেলিম সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ফিল্মের নাম চরিত্র, হিরোইন পারভিন বাবি। সেদিন ফেসবুকে পোস্ট দেখে আমার এক পন্ডিতমন্য কলিগ ট্রল করল অতি সাধারণ রেকর্ড হোল্ডারকে নিয়ে মাতামাতি কেনো! রুচিতে বাধে বলে উত্তর দিইনি।
সেই সবজান্তা জানেনা রেকর্ডের জন্য নয়, দুরাণী খেলেছেন দর্শকদের আনন্দ দিতে। টি টুয়েন্টির অনেক আগেই সেলিম এই স্টাইলে খেলেছেন। এজন্যই তিনি ছিলেন দর্শকদের প্রিয়। দর্শকদের চাহিদায় যেদিক থেকে ফরমাশ আসতো সেদিকে উড়ে যেত বল, আছড়ে পড়ত ছয়। দর্শকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার গড়ে ওঠেনি। প্রশ্ন করায় ঠোঁটের কোনে গোল্ড ফ্লেকের ধোঁয়ার রিং ছেড়ে মোহাম্মদ রফি কোট করে গুনগুন “হাম জিন্দেগী কে সাথ নিভাতা চলা গয়া, হর ফিকর কো ধুঁয়া মে উড়াতা চলা গয়া”। ক্রিকেট দুনিয়ার প্রবাদ স্যার নেভিল কারডাস স্কোর বোর্ড কে গাধা বলেছিলেন হয়তো দুরানীর মত প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে। পতাউদির ভাষায় সেলিম আ ওয়েওয়ার্ড জিনিয়াস।
আযান রশীদ অকালে দুনিয়া ছেড়ে গেছেন, সেলিমও চলে গেলেন। Ask me for six বইটি হয়তো আগামি দিনে সেলিমের মত অন্য কোনো ওয়েওয়ার্ড জিনিয়াসকে নিয়ে লেখা হবে।

আপনার মতামত প্রদান করুন!

সর্বাধিক পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর

সম্পর্কিত খবর