আপনার লাভ হল না ক্ষতি? প্রসঙ্গ এয়ার ইন্ডিয়া

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

images (16)

সৌম্য মন্ডল

এয়ার ইডিয়া ছিলো জাতীয় সম্পত্তি। অর্থাৎ এখন এই দেশের যে নাগরিক এই লেখাটি পড়ছেন তারও সম্পত্তি। ৬৮ বছর পর টাটা গোষ্ঠীর হাতে এয়ার ইন্ডিয়া ফিরে আসার নস্টালজিয়া নিয়ে নামি দামি সংবাদ মাধ্যম গুলো যতটা ব্যস্ত, তার ছিঁটে ফোটাও দেখা যাচ্ছে না এই বিক্রিতে দেশের নাগরিকদের লাভ হল না-কি ক্ষতি সেই নিয়ে আলোচনা করতে? নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত সরকার যদি নাগরিকদের হয়ে নাগরিকদের সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়, তবে নাগরিকদের এই লেন দেনের তদারকি করাটাই জরুরি কর্তব্য নয় কি?

গত ১ অক্টোবর সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ খবর করেছিলো যে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা যাচ্ছে টাটা সন্সের হাতে। কিন্তু তখন এই খবরটাকে অস্বীকার করে ইউনিয়ন সরকার। অবশেষে অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘বিলগ্নিকরণ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিয়ন্ত্রণ দফতর’-এর সচিব তুহিন কান্ত শুক্রবার জানিয়েছেন, টাটা নিয়ন্ত্রিত টালিস প্রাইভেট লিমিটেডের ১৮ হাজার কোটি টাকার দরপত্রটি গ্রাহ্য হয়েছে। টাটা গোষ্ঠী ছাড়াও বেসরকারি উড়ান সংস্থা স্পাইস জেটের কর্ণধার অজয় সিংহ এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার কেনার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে এয়ার ইন্ডিয়া কে নিলামে তোলা হয়। যদিও তখন কেউ কিনতে আসেনি এয়ার ইন্ডিয়াকে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলন যে এটা দাম কমাবার পদ্ধতি মাত্র।

এই ১৮ হাজার কোটি টাকার ডিল এর ফলে রতন টাটার সংস্থা কম খরচের উড়ান পরিষেবা ‘এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস’-এর ১০০ শতাংশ মালিকানা পেল । পাশাপাশি, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানবন্দর পরিষেবা সংক্রান্ত সংস্থা ‘এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস’-এর ৫০ শতাংশ অংশীদারিও হাতে পেল টাটারা। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে বিমান আছে ৩২ হাজার কোটি টাকার। সংস্থার অন্যান্য সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে মুম্বইয়ের এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিং এবং দিল্লির এয়ারলাইন্স হাউস। টাটারা ফ্রি-তে আরো পেল দেশের ভিতরে ৪হাজার ৪শ এবং দেশের বাইরে ১ হাজার ৮শ ল্যান্ডিং এবং পার্কিং স্লট। আন্তজার্তিক উড়ান অধিকারস্বত্ত ৯০০ এয়ারপোর্টের স্লট, ব্রান্ড ভ্যালু ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ পাইলট এবং কর্মী বাহিনীতো আছেই।

এয়ার ইন্ডিয়ার ৬১হাজার ৫শ ৬২কোটি টাকার দেনার মধ্যে টাটারা শোধ করবে মাত্র ১৫ হাজার,৩শ কোটি টাকা। বাকি ২হাজার ৭শ কোটি টাকা নগদে পাবে ইউনিয়ন সরকার। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকাদেব টাটা গোষ্ঠী। বাকি ৪৬হাজার ২শ ৬২ কোটি টাকা সরকার অর্থাৎ জনগণই শোধ করবে। যদিও এয়ার ইডিয়া বিক্রির পেছনে সরকারের বাহানা ছিলো দেনার বোঝা। দেখা গেল যে দেনার বোঝা এখনো সরকারের বা জনগণের কাঁধেই রইলো। এয়ার ইন্ডিয়ার যা কিছু ভালো, যা কিছু লাভের সব পেল টাটারা।

এয়ার ইন্ডিয়া আদৌ অ-লাভজনক সংস্থা ছিলো না, অলাভজনক হওয়ার কোনো কারণও ছিলো না। ২০১১ সালে সংসদে জমা দেওয়া CAG রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে ইউনিয়ন সরকার জোর করে এয়ার ইন্ডিয়াকে দিয়ে অস্বচ্ছ উপায়ে বিলাসবহুল “বোয়িং” এবং “এয়ার বাস” বিমান কিনিয়েছে এবং এর ফলেই দেনায় ডুবেছে এয়ার ইন্ডিয়া। সমস্যায়াটা সরকারি নীতির। সমস্যাটা এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালক সরকারি আধিকারিক বা শ্রমিক কর্মচারীদের নয়। এয়ার ইন্ডিয়াকে ২০ কোটি টাকা বার্ষিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার পেছনে সরকারী নীতিই দায়ী। যদিও এই ডিলের ফলে এয়ার ইন্ডিয়ায় কর্মরত ১২ হাজার ৮৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। টাটার সাথে চুক্তিতে বলা হয়েছে মাত্র একবছর কর্মীদের ছাঁটাই করা যাবে না।

এয়ার ইন্ডিয়ার বিভিন্ন বিপদে আপদে সরকারকে বা দেশের জনগণকে সেবা দিয়ে এসেছে। কভিড বা যে কোনো সঙ্কটের সময় আমরা দেখতে পাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো আরো বেশী মুনাফা করার চেষ্টা করে, অন্যদিকে জনগণের সম্পত্তি বা সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো থেকেই জনসাধারণ সবচেয়ে ভালো সেবা পেয়ে থাকে। এবার সেই সেবা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বা দেশের নাগরিকদের কাছে কোনো বে-সামরিক বিমান পরিবহন ব্যবস্থা রইলো না! বিপদের সময় এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের উপরই জনগণকে নির্ভর করতে হবে।

কিউবা, চীন সহ বিভিন্ন দেশের সরকারি ক্ষেত্র গুলো উন্নত মানের পরিসেবা দিয়ে থাকে। এমনকি সরকারি ক্ষেত্র গুলো সফলভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে থাকে। আমাদের দেশের সবচেয়ে উন্নত হসপিটাল এমস বা সব চেয়ে ভালো ইউনিভার্সিটি গুলো সবই সরকারি। যদিও বড় বড় মিডিয়া প্রলাপের মত কানের কাছে এক কথাই বলে আবে “বেসরকারি হলে পরিসেবা ভালো হবে”।

তবুও ১৯৯১ সালে গ্যাট চুক্তির পর যে নীতি নেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে দেশী বিদেশী অতিধনীদের হাতে সরকারি ক্ষেত্র গুলোকে জলের দরে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য সরকার প্রথমে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রতিষ্ঠান গুলোকে রুগ্ন করতে শুরু করে। পরে বলা হয় যে এই প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে গেছে তাই বিক্রি করে চাঙ্গা করতে হবে। এবার সেই তালিকায় বসলো এয়ার ইন্ডিয়ার নাম।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর