জালালুদ্দিন গাজী : এক পথভিখারির স্কুল কলেজ গড়ার কাহিনী

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

749459-img-20181030-wa0008

জালালউদ্দিন গাজী। একজন সাধারণ ট্যাক্সি ড্রাইভারের মতই দেখতে তাঁকে। সুতির সাধারণ কুরতা পাজামা, গ্রাম্য ভাষার অভ্যস্ত টান, আপামর ভদ্র, শান্ত অথচ জেদি ১টা মানুষ। এর সঙ্গে তার অতিরিক্ত যা আছে তা হল একটা বিরাট বড় হৃদয়। যে হৃদয় তার না পাওয়া অসুল করতে সারা জীবনের সঞ্চয়কে বাজি রাখতে পারে। যে মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারেন তাঁর না হওয়া পড়াশোনার দুঃখ তিনি ভুলবেন গরিব ছেলে মেয়েদের জন্য স্কুল করে,তাদের পড়াশোনা করিয়ে।

শৈশবে অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এই মানুষটির। তারপর দক্ষিন ২৪ পরগনার চোরাগলি থেকে তার জায়গা হয় শহর কলকাতার ফুটপাথ। জীবনযাপনের জন্য শুরু করতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি। এরপর আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠা । জীবিকা হিসাবে তিনি সওয়ারী বানালেন রিক্সাকে। তারপর কখন যে জালালুদ্দিন গাজী নামটা পরিনত হয়ে গেল “এই রিক্সা যাবে?”-তে , সে কথা তিনিও জানেননা।

রিক্সাচালক জালালুদ্দিন শিখলেন ট্যাক্সি চালানো। যিনি শেখাবেন তাঁকে তো পারিশ্রমিক দেওয়ার সাধ্য নেই জালালুদ্দিনের। বিনিময়ে তাঁর স্ত্রীকে পরিচারিকার কাজ করতে হয় ওই ট্যাক্সি ট্রেনারের বাড়িতে। ট্যাক্সিচালক জালালুদ্দিন নিজে শেখার পর তাঁর এলাকার একাধিক  মানুষকে ট্যাক্সি চালানো শেখান এবং তাদের বলেন আরও দুজনকে শেখাতে। এ ভাবেই দুই দুই করে বাড়তে বাড়তে তার সংখ্যা প্রায় ১০০ ছাড়িয়েছে। এখন সুন্দরবনের মত প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে খাদ্য পানীয় জলের সঠিক জোগান নেয়, সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন তিনটি অনাথ শিশুদের জন্য্ স্কুল। ৪০০ শিশুর খাওয়া, পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এরপরও কিন্তু থেমেছিল না জালালুদ্দিন গাজির স্বপ্ন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ১টা কলেজ তৈরি করার। কিন্তু ১ টা কলেজ তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা জালালুদ্দিন বাবুর পক্ষে জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তপবে তার সেই স্বপ্নের নৌকায় পাল তুলে দিল সনি এন্টারটেইনমেন্টের কউন বানেগা ক্রোড়পতি নামক জনপ্রিয় শো টি । সেই শোতে তার হয়ে খেলেছেন স্বয়ং আমির খান, আর অনুষ্ঠানের হোস্ট অমিতাভ বচ্চন। ভাল কাজের ফল সবসময় ভাল না হলেও কখনো কখনো তো হয়ই। নইলে যে মানুষ ভালোর প্রতি বিশ্বাস হারাবে। সেদিনের সেই শো তে জালালুদ্দিন গাজি ২৫ লক্ষ টাকা পুরষ্কার স্বরুপ পান। তাছাড়াও আমির খান এবং অমিতাভ বচ্চন তাঁকে বেশ কিছু অর্থ সাহাজ্য করেন জালালউদ্দিন গাজীকে । এই প্রাপ্ত অর্থ তিনি সম্পূর্ণটাই ব্যয় করতে চান দুস্থ শিশুদের জন্যও শিক্ষার ব্যাবস্থা করে, কলেজ করে। তার এই মহান কাজ ও লড়াইয়ের পথ মোটেই সহজ ছিল না। তবুও তাঁর লড়াইটা তিনি লড়ে গিয়েছেন। থামেননি। তাই হয়তো নিয়তি তাকে থামায়নি।  তাঁর মহৎ স্বপ্নের বৃহৎ উড়ানের পথ খুলে দিয়েছে কউন বানেগা ক্রোরপতি। এবারে হয়তো আরও কিছু দুঃস্থ কিশোর কিশোরীর কলেজে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

জালালুদ্দিন গাজির লড়াই কিন্তু এখনও থামেনি। এখনও শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি লরাই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর  আমৃত্যু হয়তো এ লড়াই চলবে। শিক্ষার জন্য এ হেন লড়াইকে স্যালুট জানায় NBTV।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর